1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতার কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে, বাকিগুলি বাদ কেন?

৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। এখান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়বেন।

https://p.dw.com/p/3zxiO
ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা কমিশনের। এখান থেকে লড়বেন মমতা। ছবি: AP Photo/picture alliance

পশ্চিমবঙ্গের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে এবং ওড়িশার একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সায় দিল নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এই উপনির্বাচন হবে। ফলাফল বেরোবে ৩ অক্টোবর। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তৈরি হওয়া আশঙ্কা দূর হলো। তবে ভবানীপুর ও মুর্শিদাবাদের দুইটি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হলেও রাজ্যে আরো চারটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে না।

মমতা এবার নন্দীগ্রাম থেকে বিধানসভা ভোটে লড়ে হেরে যান। শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। তারপর তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। নিয়মানুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে রাজ্যের কোনো বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাকে জিতে আসতে হবে। না হলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। মমতা যাতে জিতে আসতে পারেন, তার জন্য তৃণমূল নেতা ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে পদত্যাগ করেছেন। মমতাও ওই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হবেন বলে ঠিক করেছেন।

কিন্তু তারপর প্রশ্ন ওঠে, করোনাকালে উপনির্বাচন সম্ভব কি না? এতদিন এই প্রশ্নকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে প্রচুর চাপানউতোর চলেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যাবতীয় জল্পনায় জল ঢেলে জানিয়েছে, রাজ্যে তিনটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। সেগুলি হলো, ভবানীপুর এবং মুর্শিদাবাদের দুইটি কেন্দ্র, যেখানে প্রাথীর মৃত্যুতে ভোট বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ওড়িশার একটি কেন্দ্রেও বিধানসভার উপ নির্বাচন হবে। কিন্তু এছাড়া দেশজুড়ে আরো ৩২টি বিধানসভা ও তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন বকেয়া আছে। সেগুলি এখন হবে না।

কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে।  

নির্বাচন কমিশনের যুক্তি

কেন শুধু চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন করানো হচ্ছে, বাকিগুলি হচ্ছে না, তার যুক্তি দিয়েছে কমিশন। তারা জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব কমিশনকে জানিয়েছিলেন যে, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। রাজ্যে যে সব জায়গায় উপনির্বাচন হওয়ার কথা, সেখানে বন্যা পরিস্থিতি নেই। আর ভবানীপুর নিয়ে মুখ্যসচিব সংবিধানের ১৬৪(৪) অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে বলেছেন,  কোনো মন্ত্রীর ক্ষেত্রে ছয় মাসের মধ্যে উপনির্বাচন না হলে সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে এবং প্রশাসনের উচ্চ পদ খালি থাকলে তার প্রভাব প্রশাসনে পড়তে পারে।

এরপর কমিশন জানিয়েছে,  সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধের কথা বিবেচনা করে তিনটি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর ওড়িশার মুখ্যসচিবও জানিয়েছিলেন, তার রাজ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে। তাই সেখানেও একটি আসনে উপনির্বাচন হবে। কিন্তু অন্য রাজ্যগুলি করোনা, উৎসবের মরসুম ও বন্যার জন্য এখন উপনির্বাচন চায়নি। অনেক রাজ্য করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনার কথা বলেছে, তাই সেই সব জায়গায় কোনো উপনির্বাচন হবে না। 

বিজেপি-র প্রতিক্রিয়া

রাজ্য বিজেপি নেতারা প্রথমে জানান, তারা এনিয়ে আদালতে যেতে ইচ্ছুক নয়। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, আদালতকে ঢাল করে তারা নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার পক্ষপাতী নন। তারা লড়তে চান। কিন্তু পরে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দেন, তারা আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন। দলের তরফে রাজ্যের এক শীর্ষ নেতা আইনজীবী মহেশ জেঠমালানির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে সূত্র জানাচ্ছে।

তবে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ''লোকাল ট্রেন চলছে না। বাজার বন্ধ, কার্ফিউ বহাল আছে, তারপর কমিশন কী করে মেনে নিল, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। মনে হচ্ছে, ওরা মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে রেখে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।''

শুভেন্দুর দাবি

নন্দীগ্রামে মমতাকে হারিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জানিয়েছেন, দল বললে তিনি ভবানীপুর থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়বেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ বিজেপি প্রার্থী ছিলেন। তিনিও বলেছেন, দল চাইলে তিনি লড়তে রাজি। তবে ভবানীপুর হলো তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। সেখানে বিজেপি গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরেছিল।

সিপিএমের বক্তব্য

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি টুইট করে বলেছেন, ''খড়দহ, দিনহাটা, শান্তিপুর কিংবা গোসাবার মানুষের প্রতিনিধিত্ব নাই বা থাকুক। এদের উপনির্বাচন জরুরি নয়। রাজ্যজুড়ে পুর-নির্বাচন বকেয়া বছরের পর বছর। বেআইনি পুরসভা চলছে। তাতে কী? নন্দীগ্রামে পরাজিত বিধায়কের ভবানীপুরের নির্বাচনটাই একমাত্র জরুরি। কী সুন্দর বন্দোবস্ত সব!''

কেন এই সিদ্ধান্ত?

নির্বাচন কমিশন কেন এই সিদ্ধান্ত নিল সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এরকম সিদ্ধান্ত নেয়ার যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্যের তিনটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন করলে, চারটি কেন বাদ রাখা হলো?

আশিসের মতে, ভবানীপুরে উপনির্বাচন না করলে মমতা রাজনৈতিকভাবে শহিদ হয়ে যেতেন। বিজেপি চক্রান্ত করে তাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিল, এই অভিযোগ তুলে মোদী-শাহকে বিপাক ফেলতে পারতেন তিনি। তাই ওই রাস্তা নেয়নি বিজেপি।

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলছেন, রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক সংকটের যুক্তি কমিশন মেনে নিচ্ছে। তাহলে কি রাজ্য সরকার ও কমিশন আগে থেকেই ধরে নিচ্ছে ভবানীপুরে তৃণমূল নেত্রী জিতছেন? না হলে, সাংবিধানিক সংকটের প্রশ্ন আসে কী করে?

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)