মন্ত্রী জব্বারের ক্ষোভের বলি সামহোয়্যার ইন ব্লগ?
৩০ জুন ২০১৯সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানার দাবি, ‘‘আমরা জানতে পেরেছে পর্ন সাইট বন্ধের সময় ওই তালিকায় ফেলে আমাদের ব্লগটি বন্ধ করা হয়৷ বন্ধ সাইটের যে তালিকা আমরা পেয়েছি তার উপরের দিকেই সামহোয়্যার ইন ব্লগ-এর নাম রয়েছে৷ আর এটা বন্ধ হয় তখনকার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নির্দেশে৷ তিনি সাংবাদিকদের নিজেও এই বন্ধের কথা তখন জানিয়েছেন৷''
জানা অভিযোগ করেন, ‘‘মোস্তাফা জব্বার তার আগের ক্ষোভ থেকে এটা করেছেন৷ কারণ তিনি বাংলা লেখার জন্য বিজয় কিবোর্ড তৈরি করেছিলেন, তা দিয়ে ইন্টারনেটে বাংলা লেখা সম্ভব ছিলো না৷ আমরা ইন্টারনেটে বাংলা লেখার পদ্ধতি নিয়ে আসি৷ এটা আমরা সবার জন্য উন্মুক্ত করলাম৷ সবাই বিনা পয়সায় ব্যবহারের সুযোগ পেল৷ তখন আবার অভ্র আসলো৷ আমরা অভ্রকে সমর্থন করলাম৷ অভ্রও বিনা পয়সায় সবাইকে এটা ব্যবহার করতে দেয়৷ এর ফলে তার বিজয় কিবোর্ড নিয়ে যে ব্যবসার চিন্তা ছিলো সেটা বাধাগ্রস্ত হয়৷ উনি অভ্র'র বিরুদ্ধে একটা মামলাও করেছিলেন৷ ওই মামলায় তিনি হেরেও যান৷ ওই সময় মামলাকে কেন্দ্র করে ব্লগাররা মামলার বিরুদ্ধে ব্যাপক লেখালেখি করে৷''
হঠাৎ করে একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এভাবে বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও বিষ্ময় প্রকাশ করেন ব্লগটির সহপ্রতিষ্ঠাতা জানা৷ তিনি বলেন, ‘‘সাইটটি বাংলাদেশে বন্ধ হওয়ার পর আমরা বিটিআরসিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি লিখেছি, যোগাযোগ করেছি৷ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের চিঠি দিয়েছি৷ আমরা কোনো চিঠির জবাব পাইনি৷ এখন পর্যন্ত আমাদের অফিসিয়ালি বন্ধের বিষয়টিও জানানো হয়নি৷ কেন বন্ধ করা হলো, কী কারণে বন্ধ করা হলো৷ আমাদের কোনো শোকজও করা হয়নি৷''
মোস্তাফা জব্বার এখন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী৷ জানার অভিযোগের ব্যাপারে তার মোবাইল ফোনে রবিবার যোগাযোগ কর হলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই সময় তালিকা তৈরি করেছে ল এনফোর্সিং এজেন্সি৷ এটা পর্নোগ্রাফি হিসেবে বন্ধ নাও হতে পারে৷ যেগুলোকে ল এনফোর্সিং এজেন্সি আপত্তিকর মনে করেছে, সেগুলোর তালিকা দিয়েছে, বন্ধ করেছে৷''
লন্ডন থেকে পরিচালিত হওয়ায় সামহোয়্যার ইন ব্লগকে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বলে মানতে নারাজ মন্ত্রী জব্বার। তিনি বলেন, ‘‘তাদের এদেশে মালিক কে? তিনি বিটিআরসির কাছে আপিল করতে পারেন। তারা যদি মনে করে তাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তার প্রতিকার চাইতে পারে। তা না করে রাস্তাঘাটে অভিযোগ করলে তো হবে না৷''
ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘সামহোয়্যার ইন ব্লগ সবসময় পাইরেসির সঙ্গে জড়িত ছিলো৷ অভ্র নিয়ে এখন দ্বন্দ্বের কারণ নেই৷ কোনোকালে ছিলোও না৷ তারা বিজয় কিবোর্ড কপি করেছে, আর ওরা (সামহোয়্যার ইন ব্লগ) ওই কপি করাকে সমর্থন করেছে৷ তার মানে তারা চুরিকে সমর্থন করেছে৷ এটা তাদের বিষয়৷ এর সাথে আমার তো কিছু করার নেই৷ অভ্রের পক্ষ নেয়ায় সামহোয়্যার ইন ব্লগ বন্ধের কোনো সম্পর্কই নাই৷ বিটিআরসি'র কাছে ল এনফোর্সিং এজন্সি আইনানুগভাবে অভিযোগ করেছে৷ বিটিআরসি বন্ধ করে দিয়েছে৷''
এদিকে বিটিআরসি'র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) জাকির হোসেন খান রবিবার সামহোয়্যার ইন ব্লগ-এর ব্যাপারে টেলিফোনে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি৷ তবে তিনি ইমেইল করলে একদিন পর জানাতে পারবেন বলে জানান৷
১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই ব্লগ সাইটটিকে প্রথম বাংলা ব্লগ সাইট হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ ব্লগটিতে স্বাভাবিক অবস্থায় দিনে চার'শর মত ব্লগ পোস্ট হতো, প্রতিদিন ৬০ হাজার পাঠক এই সাইটে প্রবেশ করতেন৷ সাইটটির নিবন্ধিত ব্লগারের সংখ্যা দুই লাখ। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সাইটটি বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে।