1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মধ্যবয়স্কদের যৌন নিপীড়ক হওয়ার কারণ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ জুন ২০২২

ঢাকার গণপরিবহণে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন ৬৩ ভাগেরও বেশি নারী৷ এই যৌন হয়রানির জন্য প্রধানত মধ্যবয়স্ক পুরুষেরা দায়ী বলে এক জরিপে উঠে এসেছে৷

https://p.dw.com/p/4CKkD
Bangladesch Dhaka Ende des Lockdown
ফাইল ফটোছবি: Mortuza Rashed/DW

আঁচল ফাউন্ডেশনের এই জরিপে মধ্যবয়স্ক পুরুষদের  ব্যাপারে যে তথ্য উঠে এসেছে তা কতটুকু যৌক্তিক?

প্রতিষ্ঠানটি মোট ৮০৫ জন ১৩ থেকে ৩৫ বছরের কিশোরী ও তরুণীর মধ্যে জরিপটি করেছে যারা ঢাকায় চলাচলের জন্য  বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহণ ব্যবহার করেন৷ তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী, কর্মজীবী নারী, গৃহিনী রয়েছেন৷

জরিপে ৬৩.৪ ভাগ মেয়ে গণপরিবহনে নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা বলেছেন৷

আর জরিপে অংশ নেয়া এই নারীদের ৬১.৭ ভাগ  যৌন হয়রানির জন্য যে পুরুষদের দায়ী করেছেন তাদের বয়স ৪০ থেকে ৫৯  বছর৷ ৩৬.৩ শাতাংশের বয়স ১৩ থেকে ৩৯ বছর৷ জরিপে এটা স্পষ্ট যে মধ্যবয়সী পুরুষেরাই প্রধানত গণপরিবহণে যৌন হয়রানির জন্য দায়ী৷

এর কারণ জানতে চাইলে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রধান তানসেন রোজ বলেন, এটা নিয়ে তারা আলাদা কোনো গবেষণা বা বিশেষজ্ঞ মতামত নেননি৷ তবে জরিপে অংশহণকারীরা যে তথ্য দিয়েছেন তার ভিত্তিতে তিনি বলেন-

১.মধ্যবয়সী পুরুষদের সাহস একটু বেশি থাকে৷

২. এই বয়সের পুরুষেরা অধিকাংশই বিবাহিত বলে শারীরিক চাহিদা সম্পর্কে তারা বেশি সচেতন থাকে৷

৩. নানা তিক্ততা ও সমস্যার কারণে চাহিদা মিটাতে না পারার কারণে বাইরে তার প্রকাশ ঘটে৷

৪. তরুণদের চেয়ে এই বয়সের মানুষের লজ্জা কম৷

৫. তাদের বয়স বেশি হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাধারণভাবে মানুষ বিশ্বাস করেনা৷ এটাও তাদের সুযোগ করে দেয়৷

তার কথা, ‘‘এটা জরিপে অংশগ্রণকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলেছেন৷ এর বাইরেও আরো কারণ থাকতে পারে৷''

অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়রে উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ বলেন, চার বছর আগে তারাও একটি গবেষণা করেছেন৷ তখন তারাও একই রকম না হলেও কাছাকাছি রকমের ফলাফল পেয়েছেন৷ ওই গবেষণায় দেখা গেছে যৌন হয়রানিকারীদের অধিকাংশের বয়স ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে৷ তার কথা, ‘‘তবে আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপের এজ গ্রুপটি অনেক বড়৷ এর সাথে আমাদের গবেষণা পুরোপুরি মিলানো যাবে না৷ আর একেকটি গবেষণার পদ্ধতি একেক রকম থাকে৷''

তবে দুইটি গবেষণায়ই ৪০ থেকে ৪৫ একটি কমন এজ গ্রুপ পাওয়া যাচ্ছে, যা গুরুত্বপূর্ণ৷''

তিনি জানান, ‘‘আমাদের তিন ধরনের পর্যবেক্ষণ ছিলো৷  নারীরা বলেছেন, গণপরিবহণে নারীদের পর্যাপ্ত আসন থাকে না বলে তারা অনেক সময় বয়স্ক পুরুষের পাশে বসেন৷ এই সুযোগ তারা নেয়৷ দ্বিতীয়ত, নারীদের জন্য নির্ধারিত আসনে অনেক সময় বয়স্ক পুরুষেরা বসেন, এর সুযোগও তারা নেন৷ তৃতীয়ত, বাসে দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন বয়স্ক পুরুষেরা৷''

তার মতে, এই বয়সের পুরুষদের বিয়ে হওয়ার কারণে তাদের যৌন আকাঙ্খা কারুর কারুর বেড়ে যায়৷ আর তরুণদের চেয়ে তাদের সাহসটাও নানা করণে বেড়ে যায়৷ এটা সবার ক্ষেত্রে নয়, কারো কারো ক্ষেত্রে হয়৷

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট গবেষণা নেই৷ যার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে মধ্যবয়স্ক মানুষ বেশি যৌন হয়রানি করে৷ তবে সাধারণভাবে আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো মধ্যবয়সের পুরুষদের কেউ কেউ একদিকে যৌন অক্ষমতা ও হতাশায় ভোগেন অন্যদিকে যৌন তাগিদ বেড়ে যায়৷ তারই প্রতিক্রিয়ায় কেউ কেউ যৌন হয়রানি করে৷ অবদমিত সেক্স এটার নেপথ্যে কাজ করে৷ বাংলাদেশের মত যেসব দেশে সেক্সকে একটি ট্যাবু হিসেবে দেখা হয় সেখানে এই সমস্যা বেশি৷''

কেবল যৌন হয়রানি নয়, ধর্ষণের মত অপরাধের  ক্ষেত্রেও মধ্যবয়স্করাও জড়িয়ে পড়ছেন বেশি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান৷

তার মতে, ৩০ বছরের পরে যখন প্রডাকটিভিটি কমতে থাকে তখন চরিত্রের বিচ্যুতি ঘটতে পারে৷ অসামাজিক ব্যবহার করতে পারে মানুষ৷ মানসিক চাপ বেড়ে গেলেও এটা হয়, গণপরিবহণে প্রাইভেসি রক্ষা করে যৌন হয়রানি সহজ বলেও মধ্যবয়স্করা হয়তো বেশি জড়িয়ে পড়েন৷

গণ পরিবহণে এই যৌন হয়রানির জন্য তরুণ, বাসের স্টাফসহ আরো নানা শ্রেণির লোক জড়িত৷ আর যৌন হয়রানির সমর্থকও আছে অনেক৷ এইসব ঘটনায় শতকরা মাত্র পাঁচ ভাগ নারী অভিযোগ করেন৷  অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, ‘‘অনেকে এটা স্বাভাবিক বলে মেনে নেন৷ আবার গণপরিবহণে অভিযোগ করলে উল্টো হয়রানি হতে হয়৷ তবুও অভিযোগ করতে হবে৷ তাহলে যৌন হয়রানিকারী ভয় পাবে৷ আর নারীকে সচেতন হতে হবে৷ তাদের মধ্যে যৌন নিরাপত্তা বোধ গড়ে তুলতে হবে৷ তাদের জানতে হবে কোনটা যৌন হয়রানি৷ যৌন নিপীড়ককে বোঝার মত সচেতন হতে হবে৷''

আর ডা. মো. হেলাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ‘‘নারী পুরুষ উভয়কে যৌন শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন৷ এটা হলে নারীও নিজেকে রক্ষা করতে পারবে৷ পুরুষও অনেকটাই বিরত থাকবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য