মধ্যপ্রাচ্যে এক ‘আশার হাসপাতাল’
যুদ্ধ লেগেই আছে মধ্যপ্রাচ্যে৷ যুদ্ধাহতদের আর্তনাদ প্রতিদিন ভারি করে তুলছে সিরিয়া, ইরাকসহ প্রতিবেশী আরো কয়েকটি দেশের আকাশ-বাতাস৷ যুদ্ধের কারণে ভুগছেন এমন অনেকেরই আশার আলো হয়ে উঠেছে জর্ডানের এক হাসপাতাল৷
শরণার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় জর্ডান
সিরিয়া যুদ্ধের পর থেকে জর্দান শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর এক হিসেব অনুযায়ী, এ মুহূর্তে ৬ লক্ষ ৩০ হাজারের মতো সিরীয় শরণার্থী রয়েছে জর্ডানে৷
যুদ্ধাহতদের জন্য সুখবর
জর্ডানের এই হাসপাতালটির নাম ‘হসপিটাল ফর রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জারি’৷ ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স নামের আন্তর্জাতিক সংগঠন জর্ডানের রাজধানী আম্মানে হাসপাতালটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাহতদের জন্যই তৈরি করেছে৷ ২০০৬ সাল থেকে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে হসপিটাল ফর রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জারি৷
বিনা খরচে সব চিকিৎসা
উদ্বোধনের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের সব যুদ্ধাহতদের জন্য জর্ডানের এই হাসপাতাল নিরাপদ ঠিকানা৷ এখানে চিকিৎসার জন্য কোনো টাকা খরচ করতে হয় না৷ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেন এই হাসপাতালে৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইরাকে গাড়ি বোমার আঘাতে হাত হারানো এক তরুণ এবং তাঁর চিকিৎসককে৷ চিকিৎসকও ইরাকি৷
১০ বছরের অর্জন
গত দশ বছরে অন্তত ৩ হাজার ৬০০ যুদ্ধাহত চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন এই হাসপাতালে৷ ছোট-বড় অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে প্লাস্টিক সার্জারির ব্যবস্থাও আছে এখানে৷
অসহায়ের পাশে
গত দশ বছরে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে যুদ্ধ হয়েছে বা এখনো হচ্ছে সেগুলো তো বটেই, এমনকি আশপাশের অনেক দেশেই আহতদের সব ধরনের জটিল চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই৷ কিন্তু আম্মানের এই হসপিটাল ফর রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জারি-তে এসব ব্যবস্থা আছে৷ তাই দূর দূরান্তের দেশ থেকেও অনেক রোগী ছুটে আসে এখানে৷
চিকিৎসকের তৃপ্তি
হসপিটাল ফর রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জারি অস্ত্রোপচারের পরই রোগীকে ছেড়ে দেয় না৷ ফিজিওথেরাপি এবং সাইকোথেরাপি দিয়ে শারীরিক এবং মানসিকভাবে যতটা সম্ভব সুস্থ করার পরই হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয় তাঁদের৷ খুব তৃপ্তি নিয়েই এই তথ্য জানালেন সাইকোথেরাপিস্ট সাজদি মওলা (ওপরের ছবিতে, ডানে)৷
পায়ে পায়ে এগিয়ে চলা
মৌয়াদের পায়ে এ পর্যন্ত তিনটি অস্ত্রোপচার হয়েছে৷ তিনটি অস্ত্রোপচারই সফল হওয়ায় এখন ধীরে ধীরে হাঁটার চেষ্টা করছে ২৬ বছর বয়সি এই সিরীয় তরুণ৷
শিশুদেরও ভরসা
যুদ্ধাহত শিশুরাও চিকিৎসা নিতে আসে জর্ডানের এই হাসপাতালে৷ সব শিশুরই সাধারণত দু’ধরনের চিকিৎসার দরকার পড়ে৷ প্রথমত শরীরের ক্ষতস্থানের চিকিৎসা৷ এই পর্ব শেষ হলে শুরু হয় শিশুমন থেকে যুদ্ধের আতঙ্ক মুছে ফেলার জন্য মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা৷ শিশুদের মন থেকে যুদ্ধের বিভীষিকাময় স্মৃতি মুছে ফেলা সত্যিই খুব কঠিন৷