‘‘সরকার চার বছরেও পারলো না সাগর-রুনির হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে! কি আজব দেশরে ভাই! আমরা নোংরা রাজনীতির কারণে পিছিয়ে পড়ে আছি৷ এখন রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতা ও কালো টাকার৷ শেখ হাসিনার গুলির ভয়ে মানুষ মুখ খোলে না৷ এটাই কঠিন বাস্তবতা৷'' এই মন্তব্য মুহাম্মদ আরিফুল হুদার৷
সরকারের কর্মকাণ্ডে খুবই বিরক্ত পাঠক রোকন মাহমুদ৷ সরকার সাংবাদিক দম্পতির রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের বিচার না করায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘অপরাধী লুকিয়ে রাখতে সরকার পুরাপুরি সফল৷''
সাগর সরওয়ার আর মেহেরুন রুনির হত্যার বিচারের দাবিতে ডয়চে ভেলের ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের পাঠক অনামিকা সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘বাংলাদেশে অপরাধ তো অনেক কিছুই...৷ কিন্তু কোনোটারই তো প্রতিকার হচ্ছে না৷ মানুষ এখন নিজেদের মতামত প্রকাশেও ভয় পায়৷ এটাই কি গণতন্ত্রের নমুনা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?''
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
ছবিতে বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ড
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে এই প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে সাগর-রুনির পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীরা৷ প্রদর্শনীটি চলবে ২৬শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
স্থান পেয়েছে কবরের ‘এপিটাফ’
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর দুই দরজায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির কবরের এপিটাফ-এর একটি আলোকচিত্র৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’
‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীটিতে সাংবাদিক দম্পতির কর্মস্থলের পরিচয়-পত্র৷ ঢাকায় মাছরাঙা টেলিভিশনে যোগ দেয়ার আগে সাগর সরওয়ার কাজ করতেন ডয়চে ভেলেতে আর মেহেরুন রুনি কাজ করতেন বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’-এ৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
ছোটবেলার সেই দিনগুলো...
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির পরিচয়-পত্রের পাশে রুনির ছোটবেলার আলোকচিত্র৷ মেহেরুন রুনির পারিবারিক অ্যালবামের এ সব ছবিও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
‘আজও বড় ভালোবাসি তোমায়’
সাগর-রুনি ও তাঁদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘের একটি মর্মস্পর্শী ছবি৷ ছবিটির বামদিকে মেঘের আঁকা বাবার ছবি আর ডানে মায়ের ছবি৷ কোনো এক ‘মা দিবসে’ ছবিটি এঁকেছিল মেঘ, যার পাশে কাঁচা হাতে লেখা – ‘‘ভালোবাসি মা’’৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
চঞ্চল মেঘের প্রশ্নবিদ্ধ চোখ
প্রদর্শনী জুড়ে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে মাহির সরওয়ার মেঘের চঞ্চলতা৷ পুরো গ্যালারি জুড়ে আপন মনে খেলে চলা ছোট্ট এই শিশুটির দু’চোখেই যেন বাবা-মা হত্যার বিচারের আকুতি৷ মেঘ কি পাবে বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার?
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
ছোট্ট মেঘের হাতের কাজ
ডয়চে ভেলেতে কাজের সূত্রে মেঘকে নিয়ে সাগর-রুনির বসবাস ছিল জার্মানিতে৷ সে সময়ে স্কুলের জন্য তৈরি করা মেঘের একটি ছবির অ্যালবাম৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
সত্যি কি আমরা ভুলে যায়নি?
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর প্রকাশিত বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা৷ আর তার সামনে, দেয়ালে লেখা ‘Let’s Forget Sagar-Runi’ – ‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
হারিয়ে যাওয়া বোনের জন্য...
প্রদর্শনীতে মেহেরুন রুনির ছোটবেলার একটি ছবি বোর্ডে লাগাচ্ছেন ভাই নওশেদ আলম৷ চার ভাই-বোনের মধ্যে রুনি ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
দোষীদের খোঁজ পাওয়া যাবে তো?
রুনির আরেক ভাই নওশের রোমান৷ তিনি জানান, ‘‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন৷ এতে পুরো ঘটনার ভয়াবহতা ফুটে না উঠলেও, জঘন্যতম এই অপরাধের প্রতি মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়াস রয়েছে৷’’
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
কোথায় গেল সাগরের ল্যাপটপ?
প্রদর্শনীতে সাগর সরওয়ারের ব্যবহৃত ল্যাপটপের পাশে তাঁরই লেখা একটি বই৷ মাঝে প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছে একটি খেলনার পিস্তল৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
চোখে চশমা, মুখে সেই অনবদ্য হাসি
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে মেহেরুন রুনি ও সাগর সরওয়ারের ব্যবহৃত চশমা৷ এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সাংবাদিক দম্পতির বিভিন্ন আলোকচিত্র ছাড়াও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রও স্থান পেয়েছে৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
আজও কেমন জলজ্যান্ত!
প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রের পাশাপাশি দেখানো হচ্ছে ভিডিও ক্লিপও৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর নানা ঘটনার ভিডিও-চিত্র দেখানো হচ্ছে প্রজেক্টরে৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
নৃশংসতার প্রতীক
নিহত এই সাংবাদিক দম্পতির প্রতি সম্মান জানাতে এবং একই সাথে পুরো রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন৷ ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে, অজ্ঞাত আততায়ীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন তাঁরা৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
নীরবে-নিভৃতে কাঁদে...
মেহেরুন রুনির পুরনো ছবির সামনে অশ্রুসজল মা নুরন নাহার মির্জা৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে আজও নীরবে-নিভৃতে চোখের জল ফেলে চলছেন এই মা৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই
প্রদর্শনীতে সাগর-রুনি ও মেঘের ছবির সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলছেন এক দর্শনার্থী৷ সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান পাওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার এখন বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের দাবি৷
লেখক: মুস্তাফিজ মামুন/ডিজি
আতাহারের করুণ মিনতি, ‘‘আমি এই সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই৷''
বন্ধু শাবলু আহমেদ অবশ্য এখনও আশাবাদী৷ তিনি বলছেন, ‘‘একটুখানি অপেক্ষা করুন,
বিচার হবেই হবে৷''
খুনিদের বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের আন্দোলনও হঠাৎ করে থামিয়ে দেয়া হয়েছে৷ আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী সাংবাদিক নেতাকে দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার পদ৷ সেই পদ পাওয়ার পর সাগর-রুনির খুনিদের বিচার চেয়ে তাঁর আর কোনো উদ্যোগ আর চোখে পড়েনি৷ অন্যান্য সাংবাদিকরাও থেমে গেছেন ভয়ে৷ কোনো কোনো সাংবাদিককে আবার হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে৷
তবে সাংবাদিকদের হাল ছেড়ে দেয়া ভালো লাগছে না পাঠক যাযাবরের৷ সাংবাদিকদের সম্পর্কে তাঁর মত, ‘‘অধিকাংশ সাংবাদিক প্রশাসনের দালাল, দুর্নীতির সেবক৷ এদের কাছে জাতি বেশি কিছু আশা করে না৷ সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাইতেও তারা ভয় পায়৷ হায়রে সাংবাদিক!''
হত্যার মতো অপরাধ কি আরো কিছু আছে? নেই৷ আর সে কারণেই হয়ত তাহের সরদার বলছেন, ‘‘যে কোনো হত্যকাণ্ডের বিচারপ্রার্থীকে ভয় প্রদর্শন করা হত্যা করার মতোই অপরাধ৷''
‘‘সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার যারা করছে না বা বিচার করতে বাঁধা দিচ্ছে তাদের ধিক্কার৷'' এই মন্তব্য ওমর ফারুক চঞ্চলের৷
আর পাঠক জুয়েলের কথায়, ‘‘মনে হয় এই হত্যাকাণ্ডের সাথে কোনো রাঘব বোয়াল জড়িত৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ