1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মঙ্গোলিয়ায় ঘাসজমি ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে

১৫ আগস্ট ২০১৮

অপরূপ প্রকৃতির দেশ মঙ্গোলিয়া৷ সেখানকার যাযাবর মানুষ আবহমানকাল থেকে পশুপালন করে আসছে৷ কিন্তু স্টেপ অঞ্চলের ঘাসজমি আজ হুমকির মুখে পড়ায় পশুপালকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷

https://p.dw.com/p/338b3
Transsibirische Eisenbahn
ছবি: picture-alliance/dpa/DB Lernidee Erlebnisreisen

স্টেপ অঞ্চলের অবক্ষয়

মঙ্গোলিয়ার বিশাল স্টেপ অঞ্চল৷ যেন অনাদি, অনন্ত প্রান্তর৷ বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দেয় এই উর্বর ঘাসজমি৷ কয়েক বছর আগেও লুপ্তপ্রায় মঙ্গোলীয় জংলী ঘোড়াদেরও বাসস্থান এটি৷ অন্য কোথাও তাদের মুক্ত অবস্থায় দেখা যায় না৷

স্টেপ অঞ্চল বিশাল আকারের হরিণেরও বাসভূমি৷ সেইসঙ্গে কয়েক'শ প্রজাতির পাখি ও পোকাদেরও এখানে দেখা মেলে৷ কিন্তু মনোরম এই পরিবেশ আসলে সম্পূর্ণ বাস্তব নয়৷ কারণ হুস্টাই জাতীয় পার্কের প্রায় ২,০০০ হেক্টর জমি ও অন্যান্য সংরক্ষিত এলাকার বাইরে পরিস্থিতি অন্যরকম৷

সেখানে স্টেপ অঞ্চল দেখতে অন্যরকম৷ বালুভরা শুষ্ক অঞ্চল – গাছপালা নেই বললেই চলে৷ সামান্যে যে ঘাসপাতা রয়েছে, সেগুলিও ছোট ও শুকিয়ে গেছে৷ স্টেপ অঞ্চল ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে৷

চিমেদ ওচির বাজারসাদ জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি-র হয়ে বহু বছর ধরে এই প্রবণতা পরীক্ষা করছেন৷ তাঁর কাছে এই সংকটের কারণ অত্যন্ত স্পষ্ট৷ অতিরিক্ত সংখ্যায় ভেড়া ও ছাগল ঘাস খায়৷ ফলে জমি সেই ধকল সামলানোর সময় ও সুযোগ পায় না৷ প্রায় ৫ কোটি পশু খাদ্যের সন্ধানে মঙ্গোলিয়ার ঘাসজমিতে বিচরণ করে৷ চিমেদ বলেন, ‘‘বিশেষ করে মঙ্গোলিয়ার মধ্যভাগের মতো কিছু জায়গায় ধারণক্ষমতা পাঁচ গুণ কমে গেছে৷''

জাতিসংঘের সহায়তা

টেকসই পদ্ধতিতে পশুদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ঘাসজমির উপর কর চাপানোর আইডিয়া দিচ্ছেন৷ কোনো পশুপালকের কাছে যত পশু থাকবে এবং ঘাসজমির অবস্থা যত খারাপ হবে, সেই অনুযায়ী প্রদেয় অর্থ স্থির করা হবে৷ এভাবে কম পশু পালনে উৎসাহ দেওয়া হবে৷ কারণ এমন পশুপালকও রয়েছেন, যাঁদের কাছে ১০,০০০ গরু অথবা ছাগল রয়েছে৷

নারানতুইয়া ওর্চিবাত তাঁদের মধ্যে পড়েন না৷ পরিবারসহ তাঁর কাছে ৮০০ ভেড়া ও ছাগল রয়েছে৷ সেইসঙ্গে ১০০ ঘোড়া ও ৮০টি গরু৷ ঘাসজমির উপর করের আইডিয়া তাঁর মনে ধরেছে৷ কারণ তাঁর মতে প্রতি বছর ঘাসের মানের অবনতি ঘটছে৷ নারানতুইয়া বলেন, ‘‘হেমন্ত ও শীতকালে যখন আসি, এতটা ঘাস থাকা উচিত৷ আগের সঙ্গে তুলনা করলে ঘাসের অবস্থা ভালো নয়৷ আরও পরিবার, আরও গবাদি পশুর কারণে চারণভূমির ক্ষতি হচ্ছে, ধারণক্ষমতা কমছে৷''

৫৩ বছর বয়সি এই পশুপালক প্রায় ১০০টি পশুপালক পরিবারের প্রতিনিধি৷ তিনি ঘাসজমি ব্যবস্থাপনা করের পক্ষে অনেক প্রচার চালিয়েছেন৷ আরও ভাল খাদ্য ও তার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী পশুর স্বার্থে বেশিরভাগ পশুপালক এমন কর মেনে নেবেন বলে তিনি মনে করেন৷  

মঙ্গোলিয়ার ঘাসজমি হুমকির মুখে

করের অর্থে জরুরি তহবিল

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা একটি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে করের অর্থ দিয়ে জরুরি তহবিল সৃষ্টি করেছেন৷ খরা, জমাট বরফ অথবা মহামারী হলে পশুপালকরা সেখান থেকে অর্থসাহায্য নিয়ে আবার নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন৷ তা সত্ত্বেও মঙ্গোলিয়ায় এখনো ঘাসজমির উপর কর চাপানোর কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি স্থির করা হয়নি৷

চিমেদ ওচির বাজারসাদ বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত রয়েছে৷ কোনো কর চালু হলে কারো বেশি পশু থাকলে তাকে বেশি কর দিতে হবে৷ অর্থাৎ তাঁরা অপেক্ষাকৃত ধনী পশুপালক৷ কিন্তু তাঁরা কর দিতে চান না৷ অবশ্যই তাঁরা রাজনৈতিক স্তরে প্রভাবশালী৷''

বুভেইদোর্জ সানজাভ-এর জীবনে এমন করের আর কোনো অর্থ নেই৷ কয়েক বছর আগে মারাত্মক শীতে তিনি সব পশু হারিয়েছেন৷ তখন থেকে ৫৯ বছর বয়সি এই মানুষটি রাজধানী উলান বাটোরের উপকণ্ঠে বসবাস করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলে সবকিছু আমার জন্য সুন্দর ও মুক্ত ছিল৷ মনমেজাজ ভালো থাকতো৷ স্টেপ অঞ্চলের তাজা বাতাসে পশু চরাতে দারুণ লাগতো৷ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাকিদের মতো শহরে চার দেওয়ালের মাঝে সন্তানদের অনুসরণ করতে হয়৷ আর কী-ই বা করার আছে!''

আগে একান্নবর্তী পরিবার হিসেবে সবাই একসঙ্গে থাকতো৷ বর্তমানে ছেলে ও নাতিনাতনিরা সপ্তাহে একবার তাঁকে দেখতে আসে৷ ছেলে শহরে চাকরি করে৷ তাতে কোনোমতে সংসার চলে যায়৷ কিন্তু সে কোনোকালই বাবা-দাদাদের মতো মুক্ত প্রকৃতিতে পশুপালন করবে না৷ শহরের পরিবেশে চারিদিকে মানসিক চাপ, যানজট৷ বেশিরভাগ পশুপালকদের পরিবারের ভাগ্যে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য এই পরিণতি লেখা আছে৷ কারণ বর্তমানে মঙ্গোলিয়ার ঘাসজমির প্রায় ৭০ শতাংশে পর্যাপ্ত ঘাস গজাচ্ছে না৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই ভেড়া ও ছাগলের পাল লোপ পাবে৷ সেইসঙ্গে একমাত্র জাতীয় পার্কেই সম্ভবত জংলী ঘোড়া দেখা যাবে৷

ডান হিয়র্শফেল্ড/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান