1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেটবাসী

২০ মে ২০২২

সিলেটে উজানের ঢল, টানা বৃষ্টিতে বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে ঘর, আসবাবপত্র, গবাদিপশু৷ বাড়ছে বন্যার পানি, সেইসঙ্গে বাড়ছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট৷ ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় এলাকাবাসীরা দুর্বিসহ দিন পার করছেন৷

https://p.dw.com/p/4BcdD
ছবি: Mohammad Rafayat Haque Khan

এর আগে ২০০৪ সালে তাদের এলাকায় এমন বন্যা হয়েছিল বলে জানান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রমজান আলী৷ এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় কি না, সেই শঙ্কায় আছেন তিনি৷ আশ্রয় কেন্দ্রেও বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকটের কথা বলছেন আশ্রয়গ্রহণকারীরা৷ পানিবন্দি মানুষগুলো ‘চোখে অন্ধকার' দেখছেন বলে ভাষ্য রমজান আলীর৷

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেটের ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে৷ ৩২৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷

সিলেটের বন্যকবলিত এলাকার বাসিন্দারা দুর্বিসহ দিন পার করছেন৷ সেসব কথাই জানাতে গিয়ে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পুর্ব রংপুর বস্তির বাসিন্দা রাশিদা বেগম বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে৷ চার সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভাসুরের ঘরে৷ কিন্তু চার দিকে পানিঘেরা কাঁচা ঘর কখন ভেঙে যায়, এ শঙ্কায় তার ঘুম নেই৷ রাশিদা বলেন, ‘‘ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না৷ ঘরে সাপ চলে আসে৷ ঘরে খাবারও নেই৷ চার সন্তান নিয়ে বিপদে পড়ে গেছি৷’’

কোম্পানীগঞ্জের কাঁঠালবাড়ি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় থানাবাজার আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন বৃদ্ধা রুমিনা আক্তার৷ হঠাৎ আসা ঢলে সব তলিয়ে যাওয়ায় অনেকটা শূন্য হাতে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও সেখানেও স্বস্তিতে নেই তিনি৷ এক প্যাকেট চিড়া ও গুড় সাহায্য পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বন্যায় সব কেড়ে নিয়েছে৷ এখন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেও পেটের ক্ষিধা মিটছে না৷ সরকারি ত্রাণ সহায়তা অত পাচ্ছি না৷ গরীবের কোনো উপায় নেই৷ এখন সামনের দিনগুলোতে কীভাবে খেয়ে বাঁচব তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে৷’’

Bangladesch | Überschwemmung in Sylhet
ছবি: Mohammad Rafayat Haque Khan

হঠাৎ আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো বেশি বন্যা কবলিত হয়েছে৷ সীমান্ত উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাটের বাসিন্দারা দুর্বিষহ দিন পার করছেন৷ সড়কে বন্যার পানি থাকায় মানুষের যাতায়াত বন্ধ৷

মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর স্কুল বন্ধ ছিল৷ এখন হঠাৎ বন্যার কারণে আবারও স্কুল বন্ধ জানান কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের আব্দুল করিম৷

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ৩৪টি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে বিভিন্ন এলাকায়৷ তাতে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পর এবার বিয়ানীবাজার এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলারও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷   

‘‘পানি উঠেছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা কমপ্লেক্সে৷ এসব উপজেলার অনেক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রেও পানি ওঠায় আশ্রিতরা বিপাকে পড়েছেন,’’ বলেন নিলয়৷

শুক্রবার সকাল ৯টায় সুমরা নদীর পানি কানাইঘাটে বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৩৮ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ষোল সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল৷ তবে গত এক দিনে ওই তিন পয়েন্টেই সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে৷

Bangladesch | Überschwemmung in Sylhet
ছবি: Mohammad Rafayat Haque Khan

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সুরমা-কুশিয়ারা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে৷ আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও হবিগঞ্জ জেলার নদীর পানির সমতল কিছু স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে৷

এই সময়ে সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে, তবে সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে৷

বন্যাকবলিত মানুষের বড় সংকট খাবার পানি৷ টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার উপায় নেই৷

জৈন্তাপুর উপজেলার ঘাটের ছটি গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘‘টিউবওয়েলও পানির নিচে৷ বিদ্যুৎ নাই৷ খাবার পানিও নেই৷ বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে হাওরের পানিই খাচ্ছি, জীবনতো বাঁচাতে হবে৷’’

উপজেলাগুলোর মত সিলেট মহানগরেও খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে বন্যা৷ বিদুৎ না থাকায় পানির সংকটে পড়েছেন নগরবাসী৷ নিচু এলাকায় ঘরের ভেতর হাঁটু পানির কারণে রান্না বন্ধ৷

গত তিন ধরে তার বাসায় বন্যার পানি৷ জরুরি কাগজপত্রসহ বিভিন্ন জিনিস নষ্ট হয়েছে জানান নগরীর তালতলা এলাকার বাসিন্দা আফজাল করিম৷

তিনি বলেন, ‘‘বাসায় পানি ওঠায় পরিবারের সদস্যদের আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি৷ পাহারা দেওয়ার জন্য কাছের একটা আবাসিক হোটেলে উঠেছি আমি৷’’

Bangladesch | Überschwemmung in Sylhet
ছবি: Mohammad Rafayat Haque Khan

এদিকে নগরীতে বন্যার পানি দুর্গন্ধ ছড়ানোয় ভোগান্তিতর কথা জানিয়েছেন উপশহর এলাকার রহমান মিয়া৷

তিনি বলেন, ‘‘ঘরে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি৷ এর উপর বিদুৎ নেই তিন দিন ধরে৷ জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে৷’’

নগরীর শেখঘাট বস্তির বাসিন্দা অনামিকা দাশ বলেন, ‘‘পুরো ঘরে জল৷ রান্না করতে পারছি না, খাবার পানিও নেই৷ আমার এক আত্মীয় কিছু খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছিলেন, সেটাই কাল খেয়েছি৷ আজ রাতে কী করব জানি না৷’’

অনামিকার মতো একই অবস্থা বন্যাকবলিত নগরীর বিভিন্ন এলাকার বস্তির মানুষদের৷ নগরীর যতরপুর এলাকার বাসিন্দা আজমল হোসেন জানান, বাসার সামনে পানির স্রোত বইছে৷ বাসা দোতলায় হওয়াতে রক্ষা পেয়েছেন৷ তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, এত দ্রুত পানি বাড়তে আগে কখনও দেখেননি তিনি৷

সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহসান জানান, জেলার ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে৷ ৩২৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ বর্তমানে ৯৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭ হাজার ৩৪৯ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন৷

আশ্রিতদের শুকনো খাবার সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেট মহানগর ও উপজেলাগুলোতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য ১৩ লাখ টাকা, ২৩৪ মেট্টিকটন চাল, ৩ হাজার ৯৯ প্যাকেট শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে৷

এনএস/জেডএইচ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য