1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভ্রমর ও ফুলের মধ্যে বৈদ্যুতিক যোগাযোগ

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

মানুষ যেভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে, তার বাইরেও কি অন্য কোনো ডাইমেনশন বা মাত্রা আছে? ভ্রমর ও ফুলের কুঁড়ির মধ্যে ভিন্ন মাত্রার যোগাযোগ সম্পর্কে জানতে চলছে মূল্যবান গবেষণা৷

https://p.dw.com/p/3iTZx
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul

ভ্রমরের সঙ্গে ‘কথোপকথন’ শুনতে বিজ্ঞানীরা ফুলের কুঁড়ির মধ্যে অতি সংবেদনশীল পরিমাপ যন্ত্রের তার বসিয়েছেন, যেটি ইলেকট্রিক ভোল্টেজকে শব্দে ‘অনুবাদ’ করে৷ ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লারা মন্টগোমারি বলেন, ‘‘এটাকে আমাদের জাদুকাঠি বলতে পারেন৷ অতি সাধারণ প্লাস্টিকের কাঠি৷ সবাই জানে, ফোলানো বেলুন ঘষলে চুল খাড়া হয়ে যায়৷ এ ক্ষেত্রেও আমরা এমনটাই করছি৷ চুলের উপর এই কাঠি ঘষলে যে চার্জ হয়, তা অনেকটা উড়ন্ত ভ্রমরের চার্জের মতো৷ এভাবে আমরা পরিমাপ যন্ত্রের পরীক্ষার জন্য ভ্রমর সিমুলেট বা নকল করছি৷’’

দূরত্ব অনুযায়ী শব্দ বেড়ে বা কমে যায়৷ সব যন্ত্রই ঠিকমতো কাজ করছে, এবার আসল ভ্রমর কাজে লাগানোর পালা৷ সেই পরীক্ষায় দেখা গেল যে, ভ্রমর ফুলের উপর অবতরণ করলেই ফুলের সঙ্গে সেটির চার্জ ব্যালেন্স হয়ে যায়৷

এর ফলে বাকি সব ভ্রমর বুঝতে পারে যে, এই কুঁড়িতে ইতোমধ্যেই অতিথি এসেছিল৷ অর্থাৎ সেখানে আর নেকটার নেই৷ নতুন করে নেকটার তৈরি করতে ফুলের সময় লাগে৷ সেই প্রক্রিয়ার সময়ে আবার নেগেটিভ চার্জ চলতে থাকে৷ নিউরো বায়োলজিস্ট হিসেবে প্রোফেসর ডানিয়েল রোব্যার্ট বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এখন সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন হলো, ঠিক কোন ইন্দ্রিয় দিয়ে ভ্রমর এই বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের অস্তিত্ব টের পায়? সেটা জানতে আমরা একটি ভ্রমরকে অজ্ঞান করে তার মাথার পাশে কিছু তার বসিয়েছি৷ সেগুলির মধ্যে অতি কম মাত্রার ভোল্টেজ চালানো হয়৷’’

ল্যাবের ‘বিচ্ছিন্ন’ এক ঘরে এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে৷ অর্থাৎ বাইরের কোনো কম্পনের প্রভাব সেখানে নেই৷ এক লেজার রশ্মির সাহায্যে প্রোফেসর রোব্যার্ট এমনকি অতি ক্ষুদ্র ন্যানো মাত্রার নড়াচড়াও পরিমাপ করতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘রোম ও অ্যান্টেনা ভোল্টেজের পার্থক্য অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ এই যে ভাইব্রেশন বা কম্পন দেখা যাচ্ছে, তা এতই কম যে সফটওয়্যারের সাহায্যে তা ফুটিয়ে তুলতে হয়, যাতে আমরা সেটা দেখতে পাই৷ বাস্তবে এই সব রোম ও অ্যান্টেনা নিজস্ব মাপের ভগ্নাংশের মাত্রায় কম্পন ঘটায়৷ আমদের চোখে সেই মাত্রা ধরা না পড়লেও পোকামাকড় অব্যর্থভাবে তা টের পায়৷’’

এমন সামান্য নড়াচড়া বুঝতে ভ্রমরের শরীরে ঠিক কোথায় প্রয়োজনীয় ইন্দ্রীয় রয়েছে, তা এখনো পুরোপুরি জানা যায় নি৷ তবে ভ্রমর ও ফুলের কুঁড়ির মধ্যে ‘জাদুময় আকর্ষণ’ যে সত্যি কাজ করে, সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই৷ প্রোফেসর রোব্যার্ট মনে করেন, ‘‘সব মিলিয়ে আমার মতে, ফুল ও পরাগবহনকারীর মধ্যে যোগাযোগের সম্পূর্ণ নতুন এক মাত্রা নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ মানুষ সেই ডাইমেনশন টেরই পায় না৷ হয়তো অন্যান্য পোকামাকড় ও গাছপালার মধ্যে অথবা বড় প্রাণীর মধ্যেও অন্য কোনোভাবে এমন যোগাযোগ ঘটে৷ আমরা এবার জানতে চাই, যে ইলেক্ট্রো-স্ট্যাটিক ক্ষেত্র বোঝার ক্ষমতা পোকামাকড় ও ফুলের কুঁড়ির বাইরেও দেখা যায় কিনা৷’’

ভ্রমর, মৌমাছি ও সেই জাতীয় প্রাণীর ক্ষেত্রে এই ইলেক্ট্রো-স্ট্যাটিক ফিল্ড অবশ্যই দিকনির্ণয়ের সূচক হিসেবেও সাহায্য করে৷ সেটির সাহায্যে এই সব প্রাণী সরাসরি নেকটারের উৎসে পৌঁছে যায় এবং ওড়ার পরিশ্রম সার্থক হয়৷

ইয়ুলিয়া শোয়েন/এসবি

গত বছরের ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...