1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভেষজ ওষুধও অস্ত্র হতে পারত!

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১০ আগস্ট ২০২০

অজানা, অচেনা কোভিড ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আয়ুর্বেদ, ভেষজ ওষুধ, প্রাকৃতিক উপাদানও কাজে দিত, যদি তার সপক্ষে থাকত গবেষণালব্ধ বৈজ্ঞানিক তথ্য৷ বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷

https://p.dw.com/p/3giTs
প্রতীকী ছবিছবি: Imago Images/Zuma/D. Husni

কোভিড সংক্রমণের এখনও কোনও প্রতিষেধক নেই৷ কোভিড আক্রান্তদের কীভাবে চিকিৎসা হবে, তারও কোনও নির্ভরযোগ্য এবং সর্বজনগ্রাহ্য পদ্ধতি এখনও তৈরি হয়নি৷ ফলে আতঙ্কিত মানুষজন এখন সুস্থ থাকার উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন৷ এই খোঁজ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কাঁচা হলুদ, কাঁচা রসুন, পাতিলেবু, করমচা জাতীয় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল থেকে রোগমুক্তির উপায় খোঁজার চেষ্টা৷ নানা ধরনের শাকসবজির চাহিদা বাজারহাটে হঠাৎই বেড়ে গেছে, যা নাকি প্রাকৃতিকভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে৷
কিন্তু বাইরের উপাদানের সাহায্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অমন গণ হারে বাড়ানো যায় না৷ বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ যেহেতু প্রতিটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাঁর জিনের গঠনের ওপর নির্ভরশীল৷ অর্থাৎ কিছুটা জন্ম থেকেই নির্ধারিত হয়ে যায়, একজন লোক ভাইরাস–ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে কতটা লড়তে পারবে৷ তবে এটাও ঠিক যে, এর পাশাপাশি সুষম ও স্বাস্থ্যকর আহার এবং সতর্ক জীবনযাপনের সুবাদে শরীরের সেই সহজাত, স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্ষম ও সতেজ থাকতে পারে৷

গবেষণার মাধ্যমে হলে গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়ত!: ডাঃ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার

কিন্তু তা হলে কি ভেষজ, বা প্রাকৃতিক উপাদানের কোনও গুরুত্বই নেই এই ধরনের পরিস্থিতিতে? লোকে কি যা শুনছে, তাতেই ভরসা রাখতে চাইছে? রাজ্য প্রাণীবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জীবাণুবাহিত রোগ সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ ডাঃ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলছেন, গুরুত্ব আছে, অবশ্যই আছে, কিন্তু ঠিক কতটা গুরুত্ব, বা এই পরিস্থিতিতে তা আমাদের কতটা কাজে লাগতে পারে, সে ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট ধারণা, বা গবেষণানির্ভর বৈজ্ঞানিক তথ্য নেই৷ কাঁচা হলুদ, রসুন, ইত্যাদি প্রাকৃতিক টোটকা সম্বন্ধে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখানে যেহেতু, ইনগ্রেডিয়েন্টস যদি জানা থাকেও, আমরা কিন্তু পিউরিফায়েড ফর্মে খাচ্ছি না৷ আমরা একটা ক্রুড ফর্মে খাচ্ছি৷ সুতরাং তার মধ্যে অন্যান্য যে উপাদান আছে, সেটা কীভাবে তাকে সাপ্রেস করছে, বা বাধা দিচ্ছে, কতটা পরিমাণ খেলে আমাদের উপকার হতো— এই জিনিসটা নিয়ে যদি আমরা সামগ্রিকভাবে, একটা গবেষণার মাধ্যমে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালসের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারতাম, তা হলে গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়ত৷ কোনও একটা জিনিসের পজিটিভ, বা কোনও একটা জিনিসের নেগেটিভ এফেক্ট যদি আমরা বুঝতে চাই, তা হলে একটা পরীক্ষার মাধ্যমে, গবেষণার মাধ্যমেই সেটা পেতে হবে৷’’
অর্থাৎ ডঃ জোয়ারদারের বক্তব্য, প্রথাসিদ্ধ উপায়ে গবেষণা না হওয়ার কারণেই এই প্রাকৃতিক চিকিৎসার সুফল নিয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারেননি৷ নয়ত, ভারতীয় উপমহাদেশ বহু বছর ধরেই ভেষজ চিকিৎসার দেশ৷ কবিরাজির ইতিহাস এই অঞ্চলে দীর্ঘ দিনের৷ কিন্তু সেসব ভেষজ উপাদানের কার কী কাজ, কতটা ক্ষমতা, সে নিয়ে গবেষণা সেভাবে হয়নি, যেটা হওয়া উচিত ছিল৷ ডঃ জোয়ারদার বললেন, ‘‘এই নিম, বা এই তুলসী, বা বাসক পাতা, বা সর্পগন্ধা— এই যেগুলোর কথা আমরা বলছি আর কী, সেগুলোর ক্ষেত্রে আরও অনেক গবেষণা করে, সত্যিকারের যে উপাদানটা, যেটা অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বলি, সেগুলোকে যদি আমরা নির্ণয় করে, পিউরিফাই করে, তার ডোজ ডিটারমাইন করে আমরা সেই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম, তা হলে নিশ্চয়ই উপকার পেতাম৷’’
এমনকী যে হোমিওপ্যাথিক, বা আয়ুর্বেদ ওষুধকে সাধারণভাবে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকরা কোনও গুরুত্বই দিতে চান না, কোষের আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণে তারাও যে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে উৎসাহিত করে, এমন লক্ষণ দেখা গেছে৷ কাজেই সঠিক পথে গবেষণা হলে এমন হতেই পারত যে এই পদ্ধতিগুলোও কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারত৷ কিন্তু সেই গবেষণা, সেই উদ্যোগের অভাবই থেকে গেছে৷