ভেলায় ভেসে সাগরে ৪৯ দিন
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ইন্দোনেশিয়ার ওই তরুণের নাম আলদি নভেল আদিলাং (১৯)৷ সাগর থেকে উঠে পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন তিনি৷
ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় ভাষায় ‘রমপং' নামে পরিচিত কুঁড়েঘরের মতো দেখতে মাছ ধরার ওই ভেলা উপকূল থেকে সমুদ্রের ১২৫ কিলোমিটার গভীরে বাঁধা ছিল৷
দেশটিতে ছয় মাস গভীর সাগরে নোঙর করে কাঠের তৈরি এসব ভেলায় বাতি জ্বালিয়ে রাতে মাছ ধরা হয়৷ ওই আলোতে আকৃষ্ট হয়ে মাছ ফাঁদে ধরা পড়ে৷
সুলাবেসি দ্বীপের বাসিন্দা আলদির কাজ ছিল ‘রমপং'-এ আলো জ্বালানো, যাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ কাজের একটি' হিসেবে বর্ণনা করেছে জাকার্তা পোস্ট৷ তিনি মানুষের দেখা পেতেন সপ্তাহে একদিন, তার জন্য কেউ খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গেলে৷ এর বাইরে ওয়াকি-টকিতে যোগাযোগ করতে পারতেন তিনি৷
গত ১৪ জুলাই ঝড়ো বাতাসে দড়ি ছিঁড়ে ভেলাটি সমুদ্রে ভেসে যায়৷ এতে কোনো ইঞ্জিন বা প্যাডল ছিল না৷ বাতাসে কয়েক হাজার মাইল ভাসতে ভাসতে সেটি চলে যায় যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন গুয়াম দ্বীপের কাছে৷
খাবার শেষ হয়ে গেলে আলদি সাগরে মাছ ধরা শুরু করেন৷ ভেলার থেকে কাঠ নিয়ে তাতে আগুন দিয়ে ওই মাছ পুড়িয়ে খেয়ে চলতে থাকে তার দিন৷ এ সময় অনেকগুলো জাহাজ তার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে চলে যায়৷ তবে কারো মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হন তিনি৷
অবশেষে ৩১ অগাস্ট পানামার পতাকাবাহী একটি জাহাজ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রেডিওতে তার সাহায্যের আকুতি শুনে আলদিকে উদ্ধার করে৷ তবে এই উদ্ধারও ততটা সহজ ছিল না৷ অনেক ঝামেলা পেরিয়ে আলদির কাছাকাছি পৌঁছানোর পর তার ভেলায় দড়ি ফেলা হয়৷ সেই দড়িতে ঝুলে ওই জাহাজে ওঠেন তিনি৷
এরপর জাহাজ থেকে বেতারে গুয়াম দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে যোগাযোগ করা হলে তারা তাঁকে তাদের গন্তব্য জাপানে নেওয়ার পরামর্শ দেন৷ জাপানে পৌঁছানোর পর ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাঁকে৷ ৯ সেপ্টেম্বর মানাদাও শহরে পরিবারের কাছে যান তিনি৷
অথৈ সাগরের এই পরিবেশে আলদি অনেকবারই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান ওসাকায় ইন্দোনেশিয়া কনস্যুলেটের কূটনীতিক ফজর ফিরদৌস৷
‘‘প্রতিবারই বড় জাহাজ দেখে তিনি আশাবাদী হয়ে উঠেতন৷ কিন্তু ১০টির বেশি জাহাজ তার পাশ দিয়ে চলে যায়৷ সেগুলোর কোনোটিই থামেনি বা আদলিকে দেখেনি,'' বলেন তিনি৷
এএইচ/এসিবি