ভেনিসে কাসানোভা মিউজিয়ামের উদ্বোধন
প্রেমিকশ্রেষ্ঠ জিয়াকোমো জিরোলামো কাসানোভার জন্ম ১৭২৫ সালের দোসরা এপ্রিল৷ ২০১৮ সালে একই দিনে ভেনিসে খোলা হলো কাসানোভা মিউজিয়াম৷
তরুণ জিয়াকোমো
কাসানোভার বাবা-মা ছিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রী৷ কাসানোভা কিন্তু চেয়েছিলেন চিকিৎসক হতে৷ দাদীর টাকায় আইন আর ঈশ্বরতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করেন, এমনকি কয়েক বছর ধরে যাজকের কাজও করেছেন৷ একবার নাকি মত্ত অবস্থায় গির্জার বেদি থেকে পড়েও গিয়েছিলেন! কোনোকালেই প্রেমিকার গোনাগুনতি ছিল না, সেটা তো বলা বাহুল্য৷
নিশীথ অভিসার, নাকি অভিযান?
ভেনিসের অলিগলিও ছিল কাসানোভার নখদর্পণে, নয়তো রাতের আঁধারে গোপনে অভিপ্সীতার কাছে যাবেন কী করে? আর প্রেয়সীও তো একটি নয়, অনেক – তার ওপর আবার তাঁদের অনেকেই বিবাহিতা!
ইউরোপ জুড়ে
প্রেমিক কাসানোভার যাতায়াত ইউরোপের সর্বত্র, যেমন মহিলাদের বসবার ঘর, তেমনই তাদের শয়নকক্ষে – তা সে প্রাসাদেই হোক বা গণিকালয়ে৷ ‘বিবাহিতা’ প্রেমিকাদের রুষ্ট স্বামীদের সঙ্গে একাধিকবার ‘ডুয়েল’ করতে হয়েছে৷ কিন্তু মহিলাদের চিত্তজয়ে তাঁর কোনো জুড়ি ছিল না৷ শোনা যায়, কাসানোভার প্রেমিকার সংখ্যা ছিল নাকি সব মিলিয়ে শ’দুয়েক!
দু’শ-র একজন: মানোন বালেত্তি
অনেকেরই হৃদয়হরণ করেছেন কাসানোভা, আবার পরিত্যাগও করেছেন৷ কাসানোভার বয়স তখন ৩০৷ ১৭ বছর বয়সের মানোন বালেত্তি অন্যের বাগদত্তা হওয়া সত্ত্বেও দয়িতকে বিদায় করে জিয়োকোমোকে বিয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ কাসানোভাকে ৪২টি প্রেমপত্র লেখেন তিনি৷ তাঁকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য নিজের হীরের আংটি পর্যন্ত বন্ধক রেখেছিলেন৷ তাতে অবশ্য বিশেষ লাভ হয়নি৷ দু’জনের অনুরাগের গোটা তিন বছর ধরে কাসানোভা অন্য মহিলাদের সঙ্গ দিয়ে গেছেন৷
নির্বাসন
১৭৫৬ সালে কাসানোভা ঈশ্বরনিন্দার দায়ে কারাবাস করছেন৷ জেল থেকে পালিয়ে সারা ইউরোপ ভ্রমণ করেন, অবশ্য ভেনিস থেকে নির্বাসনের মূল্যে৷ ভেনিসের বাইরে কাসানোভা নিজেই নিজেকে ‘শেভালিয়ের’ বা ‘নাইট’ উপাধি দেন, যার ফলে রাজা-রাজড়া বা গির্জার বিশপ-কার্ডিনালদের ‘ইমপ্রেস’ করতে তাঁর বিশেষ অসুবিধা হয়নি৷
বহুরূপী
(ছবিতে) কাসানোভা মিউজিয়ামে কাসানোভার চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে– যাজক, বেহালাবাদক, সৈনিক, গুপ্তচর, কূটনীতিক, সাহিত্যিক ও ফরাসি লটারির প্রতিষ্ঠাতা! টাকা রোজগার করতে বা খরচ করতে কাসানোভা ছিলেন সমান দক্ষ৷ ধারের দায়ে একাধিকবার হাজতবাস করতে হয়েছে, তাতে অবশ্য কাসানোভার ‘সুনামের’ বিশেষ ক্ষতি হয়নি৷
আত্মজীবনী বেস্টসেলার
৬০ বছর বয়সে কাসানোভা ভেনিস থেকে বহু দূরে বোহেমিয়ায় গ্রন্থাগারিকের কাজ নেন৷ নিঃসঙ্গ, সিফিলিস রোগে আক্রান্ত কাসানোভা তখন বিষাদে ভুগছেন৷ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাসানোভা ‘কিছু একটা করার’ কথা ভাবেন ও তাঁর ৩,০০০ পৃষ্ঠার ‘‘আমার জীবনকাহিনী’’ রচনা করেন, যা দুনিয়া জুড়ে বেস্টসেলারে পরিণত হয় – অবশ্য বহুকাল তার একটি ‘মার্জিত’ অর্থাৎ সেন্সর করা সংস্করণ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যেতো না!
কাসানোভা মিউজিয়াম
মিউজিয়াম সৃষ্টির আইডিয়াটি আসে কার্লো পারোদি-র মাথায় (ছবি)৷ ভেনিসে বছরে যে দেড় থেকে দু’কোটি টুরিস্ট আসেন, তাদের কারোরই কাসানোভার নাম অজানা নয়৷