ভেনিজুয়েলায় স্বৈরশাসন: দেশ ছাড়ছেন নাগরিকরা!
প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর শাসন এড়াতে অনেক ভেনিজুয়েলাবাসী দেশ ত্যাগ করছেন৷ এর ফলে অভিবাসীদের ভিড় বাড়ছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে৷ এদিকে পেরু, ইকুয়েডর, ব্রাজিলসহ অনেক দেশ অভিবাসী ঠেকাতে নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ৷
প্রতীকী চিত্র
প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার ভেনিজুয়েলাবাসী ৩১৫ মিটার লম্বা সিমন বলিভার নামের এ সেতুটি পাড়ি দিয়ে পাশের দেশ কলম্বিয়ায় যান৷ ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশটির প্রায় দুই কোটি নাগরিক দেশ ত্যাগ করেছে৷ ভেনিজুয়েলা ও কলম্বিয়ার মাঝে অবস্থিত এ সেতুটি তাই ভেনিজুয়েলাবাসীর দেশ ত্যাগের একটি প্রতীকী চিত্র হয়ে উঠেছে বলা যেতে পারে৷
সীমান্তের ওপারে কেনাকাটা
অধিকাংশ ভেনিজুয়েলান পাশের দেশ কলম্বিয়া থেকেই তাঁদের ঔষধ, খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়াজনীয় কেনাকাটা সারেন৷ নিজ দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কারণেই মূলত তাঁরা পাশের দেশ থেকে কেনাকাটা করতে চান৷ এদিকে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে বলিভার নামে স্থানীয় মুদ্রার বলতে গেলে কোনো মূল্যই নেই৷
অভিবাসীদের স্বাগতম
কলম্বিয়ার অধিকাংশ মানুষই ভেনিজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্বাগত জানিয়েছিলেন, ঠিক যেভাবে জার্মানরা ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা নাগরিকদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে, অভিবাসীদের প্রতি কলম্বিয়ানদের মনোভাবও পালটাতে থাকে৷ দেশটির অনেকেই এখন অভিবাসীদের দেয়া সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছেন৷
গন্তব্য শুধু কলম্বিয়াই নয়
সম্প্রতি প্রায় ত্রিশ লক্ষ ভেনিজুয়েলান কলম্বিয়াতে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তবে সরকারী তথ্য অনুযায়ী, পাড়ি জমানো এ ত্রিশ লক্ষ অভিবাসীর মধ্যে ১০ লক্ষ থেকে গেছেন কলম্বিয়াতেই৷ বাকি ২০ লক্ষ অভিবাসী অন্য কোনো দেশে আশ্রয় খুজঁছে৷ প্রায় পাঁচ লক্ষ ভেনিজুয়েলান আশ্রয় নিয়েছে দক্ষিণের দেশ ইকুয়েডরে৷
ইকুয়েডরে যাত্রা বিরতি
তথ্য অনুযায়ী, ভেনিজুয়ালান অভিবাসীদের মাত্র ২০ ভাগ ইকুয়েডরে আশ্রয় নিতে চা্য়৷ বাকি ৮০ ভাগ আরো দক্ষিণের দেশ পেরু, চিলি ও আর্জেন্টিনার অভিমুখে যাত্র করে৷
পাসপোর্টের ঝামেলা
ইকুয়েডর ও পেরু বলছে, তারা একটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, যার ফলে তাদের দেশে প্রবেশ করতে চাওয়া কোনো ভেনিজুয়েলান নাগরিককে পাসপোর্ট দেখাতে হবে৷ কলম্বিয়া সরকারও একই আইন প্রণয়নের জন্য কাজ করছে৷ প্রবেশের অনুমতির জন্য পাসপোর্ট দেখানো ভেনিজুয়েলানদের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দেখা দিয়েছে, কেননা তীব্র অর্থনেতিক মন্দা দেখা দেওয়া দেশটিতে পাসপোর্ট থাকা শুধুই আভিজাত্যের প্রতীক৷
ব্রাজিলে উত্তেজনা
২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষ ভেনিজুয়েলান নাগরিক ব্রাজিলে পাড়ি জমিয়েছেন, যাঁদের অর্ধেক আবার ব্রাজিলে স্থায়ী না হয়ে পেরু কিংবা ইকুয়েডরে চলে গেছেন৷ তবে এ অভিবাসীদের নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে উত্তর ব্রাজিলের কিছু শহরে৷ ব্রাজিল সরকার বলছে, ভেনিজুয়েলা থেকে আসা এ অভিবাসীদের দেশটির অন্য কোনো অঞ্চলে সরিয়ে নেয়া হবে৷
শরণার্থী শিবিরে হামলা
গত সপ্তাহে ব্রাজিলের পেকারাইমা শহরের কিছু স্থানীয় বাসিন্দা ভেনিজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের অস্থায়ী ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, এ উত্তেজনা প্রশমনে পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি৷ ব্রাজিলায়ান এক ব্যাবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ স্থানীয়রা এ ডাকাতির ঘটনার জন্য অভিবাসীদের দায়ী করে অভিবাসী ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয়৷