1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নোবেলজয়ী জার্মান চ্যান্সেলর

ফল্কার ভাগেনার / এসবি১৮ ডিসেম্বর ২০১৩

ছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর, পেয়েছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার৷ দেশের অন্য কোনো নেতা এমন বিস্ময় ও শ্রদ্ধার পাত্র হন নি৷ জীবিত থাকলে বুধবার তাঁর বয়স হতো ১০০৷ ভিন্ন মাপের এই মানুষটি সম্পর্কে ফল্কার ভাগেনার-এর সংবাদভাষ্য৷

https://p.dw.com/p/1Abew
ছবি: imago/Sven Simon

বার বার কেন মনে পড়ে এই মানুষটির কথা? এত আবেগই বা কেন মনে আসে? চ্যান্সেলর হিসেবে পদত্যাগ করার ৪০ বছর পরেও তিনি মন থেকে মুছে যান নি৷ সে সময় আমি স্কুলে পড়তাম৷ লোকে বলে, প্রত্যেক যুগেরই একজন নায়ক থাকেন, যাঁকে ঘিরে যুগের নাম রাখা হয়৷ ব্রান্ট-এর কার্যকালের প্রথমার্ধকে ঐতিহাসিকরা সে রকম ভাবেই গণ্য করেন৷

মানুষ হিসেবে ভিলি

যাঁরা গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষে ও সত্তরের দশকের শুরুতে ভিলি ব্রান্ট-এর সান্নিধ্যে এসেছিলেন, তাঁরা তাঁর মধ্যে নিজেদের কণ্ঠ শুনতে পেয়েছেন৷ তাঁর কথা, তাঁর সুপরিচিত কণ্ঠ ও বলার ভঙ্গিমা শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে৷ নতুন ও প্রায় বৈপ্লবিক সব বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি৷ ‘‘আরও গণতন্ত্র চাই আমরা'' ছিল তাঁর মূলমন্ত্র৷ তাঁর ক্ষেত্রে সব কিছুই যেন ছিল ভিন্ন৷ এমন একটা সময় তাঁর মতো বহুভাষী মানুষ এসেছিলেন, যখন জার্মানরা বিদেশে ছুটি কাটাতেও যেতে শুরু করে নি৷ বয়স তেমন কম না হওয়া সত্ত্বেও তিনি তারুণ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন৷ শিল্পীদের কাছ থেকে পরামর্শ, অনুপ্রেরণা ও সহায়তা খুঁজতেন তিনি৷ মোটকথা জার্মানির প্রথম চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার-এর যুগের চূড়ান্ত ইতি ঘটেছিল তাঁর আমলে৷ সাদা চুলের প্রৌঢ় পুরুষদের হাতে রাজনীতির রাশ ও নারীদের স্থান রান্নাঘরে – এই ভাবনার অবসান ঘটেছিল৷

ব্রান্ট এক রঙিন ছটা নিয়ে এসে মানুষকে মাতিয়ে দিয়েছিলেন৷ ভোটের বুলি ছিল ‘ভিলি-কে ভোট দাও'৷ এর আগে কখনো কোনো নেতা তাঁর প্রথম নাম এভাবে ব্যবহার করেন নি৷ পরে সমাজতত্ববিদরা ‘ভিলি প্রজন্ম' নামের একটি শব্দ চয়ন করেছিলেন৷ তরুণ ও বৃদ্ধরাও দলে দলে এসপিডি দলে যোগ দিতে থাকেন৷ তাঁর আমলেই সামাজিক গণতন্ত্রী ভাবধারা সমাজে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল৷ তাঁর উত্থানকে ঘিরে বিপুল উৎসাহ দেখা গিয়েছিল, তাঁর পতন ছিল এক ট্র্যাজিডি৷

Deutsche Welle Volker Wagener Deutschland Chefredaktion REGIONEN
ডয়চে ভেলের ফল্কার ভাগেনারছবি: DW

দেশছাড়া ‘অ-জার্মান' দেশপ্রেমী

ব্রান্ট ছিলেন অন্য এক ধাঁচের জার্মান৷ বাবা-মা'র বিবাহবন্ধনের বাইরে তাঁর জন্ম হওয়ায় তিনি সমসাময়িকদের কাছে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়েছিলেন৷ ফলে তাঁর মনে খুব কষ্ট হয়েছিল৷ নাৎসি আমলে তিনি পরিস্থিতি দেখে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন৷ প্রবাস জীবনে তাঁর অভিজ্ঞতার উপর নাৎসি জার্মানির সরাসরি প্রভাব পড়ে নি৷ তিনি নাৎসিদের দোসর হন নি, সহায়তা করেন নি, তাদের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া করারও চেষ্টা করেন নি৷ তাই বহু বছর ধরে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁকে পরিহাস করেছে৷ অথচ প্রাক্তন নাৎসি হিসেবেও তাঁরা দিব্যি নিজেদের ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়িয়ে গেছে৷

ব্রান্ট কিন্তু নিজের জীবনকে কখনো নৈতিক মানদণ্ড হিসেবে তুলে ধরেন নি৷ তাঁর এই গুণ যথেষ্ট সমাদর পায় নি৷ ধীরে ধীরে বোঝা গেছে, তিনি আসলে বড় মাপের দেশপ্রেমী ছিলেন৷ নিজ দলের নেতারাই এই কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তেন৷ অনেক সামাজিক গণতন্ত্রীর কাছে বামপন্থা ছিল এক আন্তর্জাতিক আন্দোলন৷ ‘পিতৃভূমি' শব্দটি তাঁদের পক্ষে হজম করা কঠিন হতো৷ ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের সময় ব্রান্ট যখন দেশপ্রেমের কথা বলছিলেন, তখন এসপিডি দলে তা বেশ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷

The man who dared more democracy

অতীত ছাড়া ভবিষ্যৎ নয়

পূর্ব ইউরোপের প্রতি ব্রান্ট-এর বিখ্যাত নীতি ছিল তাঁর দূরদর্শিতার প্রমাণ৷ আডেনাউয়ার পশ্চিমা জোটের মধ্যে পশ্চিম জার্মানির স্থান করে নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির পথ মসৃণ করেছিলেন৷ তবে সেটা ছিল এক একপেশে নীতি৷ ব্রান্ট পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে আবার একটা ভারসাম্য নিয়ে এলেন৷ পূর্ব জার্মানি ও অন্যান্য পূর্ব ইউরোপীয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের প্রতি তাঁর নীতি ছিল ‘ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে পরিবর্তন'৷ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, অতীতের ক্ষত মুছতে না পারলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে না৷ তাঁর বাস্তববোধ ছিল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী শিবিরের চেয়ে বেশি৷ জার্মানি যে কখনোই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের মানচিত্র ফিরে পাবে না, এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন৷ এই বাস্তবকে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি স্বাভাবিক সম্পর্কের পথ খুলে দিয়েছিলেন৷ পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ-র স্মৃতিসোধে গিয়ে তিনি হাঁটু মুড়ে বসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে আরও এক প্রতীকী পদক্ষেপ নেন৷ সেই প্রতীক গোটা বিশ্বে আজও স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ রাজনীতিক ব্রান্ট-এর মধ্যে মানুষটিকেও বার বার দেখা গেছে৷

১৯৭০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় একটি বাক্য আজকের প্রেক্ষাপটে বৈপ্লবিক বলা চলে৷ তাতে লেখা ছিল, একমাত্র পারস্পরিক ঐকমত্যের মাধ্যমে সীমান্ত পরিবর্তন করা যেতে পারে৷ সেটাই ছিল সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা৷ ১৯৮৯ ও ১৯৯৯ সালে এই বাক্যের মর্মার্থ বুঝতে পেরেছিলাম আমরা, যখন তৎকালীন পূর্ব জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পশ্চিম জার্মানির মধ্যে পুনরেকত্রিত জার্মানির সীমান্ত স্থির হয়েছিল৷ সেই অর্থে ব্রান্ট ছিলেন জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পিতা এবং হেলমুট কোল ছিলেন সেই প্রক্রিয়ার ম্যানেজার৷

ট্র্যাজিক হিরো

১৯৭৪ সালে এক গুপ্তচর কেলেঙ্কারির জের ধরে চ্যান্সেলর হিসেবে পদত্যাগ করেন ভিলি ব্রান্ট৷ সেই ঘটনার পেছনে ছিল নিজেদের দপ্তরে পূর্ব জার্মান গুপ্তচরের উপস্থিতি৷ তবে সেটাই একমাত্র কারণ ছিল না৷ নারীঘটিত সম্পর্ক ও অবসাদও এই সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করেছে বলে ধরে নেয়া হয়৷ তার পরেও প্রায় ১৩ বছর ধরে এসপিডি দলের নেতা ছিলেন তিনি৷ তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ সংঘাত, তর্ক-বিতর্ক থেকে তিনি কখনো নিজেকে দূরে রাখেন নি৷ এমনকি নিজের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও পরস্পরবিরোধী অবস্থান দেখা গেছে৷ তবে সবার আগে ব্রান্ট ছিলেন একজন মানুষ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য