1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভিডিও রেকর্ডের অধিকার পুলিশ কর্মকর্তার নেই

তানজির মেহেদি
১৭ জুন ২০১৯

খুন হওয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাতের বক্তব্য রেকর্ড করার অভিযোগে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এ নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া৷

https://p.dw.com/p/3Kaoa
Bangladesch - Studentin wurde mit Feuer angegriffen nachdem Sie sich weigerte Vorwürfe sexueller Belästigung fallen zu lassen
ফাইল ফটোছবি: bdnews24

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনজীবী

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায়৷ ধারাটি এমন:

অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, ইত্যাদির দণ্ড:

২৬। (১) যদি কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

নুসরাত মারা যাওয়ার দশদিন আগে, ওসি মোয়াজ্জেমের সামনে যখন ঘটনা বর্ণনা করিছলেন, তখন তিনি তা রেকর্ড করেন৷ এই রেকর্ড করাটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী যদি বোঝার চেষ্টা করি, দেখা যাবে এখানে তার অপরাধের ধরনের কথা আসে৷ কিন্তু তার আগে আরেকটা বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া দরকরা৷

পুলিশের কাজ হলো তার দায়িত্ব পালন করা৷ পুলিশের দায়িত্ব মোটামুটি তিনটি আইন দিয়ে নির্ধারিত৷ এগুলোর মধ্যে আছে ১৮৬১ সালের আইন, ১৯৪৩ সালের পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল৷ সেখানে পরিস্কার করে বলা আছে, তাদের কর্মপদ্ধতি কেমন হবে, সাধারণ ডায়েরি কিভাবে লিপিবদ্ধ হবে কিংবা কিভাবে কোন কাজটি তদন্ত করবেন৷ আর এর বাইরে আছে ফৌজদারি কার্যবিধি৷ এখানেও কিভাবে তদন্ত করবে, কাউকে গ্রেপ্তার করবে, অভিযোগ কিভাবে লিখবে, মোদ্দা কথা কর্মপদ্ধতি সুষ্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা আছে৷

তাহলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা, তিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপ-পুলিশ পরিদর্শক কিংবা পরিদর্শক সম পদের যে কেউই হোক না কেন, তার কাছে কেউ অভিযোগ করতে গেলে ভিডিও করার কোনো বিধান এই তিন আইনের মধ্যে নেই৷ তিনটি আইনে এমন কোনো কাজ করার অধিকার কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে দেয়া হয়নি৷ তাহলে ওসি মোয়াজ্জেম কেন তা করলেন? 

তিনটি আইনে এমন কাজ করার অধিকার পুলিশ কর্মকর্তার নেই, যা ওসি মোয়াজ্জেম করলেন

ফৌজদারি অপরাধগুলো বিচার বিশ্লেষণ করার সময় একজন অভিযুক্তের মানসিক দিকও বিবেচনায় রাখা হয়৷ এর মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে যে ঘটনাগুলো ঘটলো, সেখানে অভিযুক্তের দায় কতটুকু তা বোঝার জন্য মানসিক বিষয়টা আইনি প্রক্রিয়ায় রাখা হয়েছে৷

শুরুতেই ওসি মোয়াজ্জেমের সদিচ্ছা ছিলো না৷ কারণ তিনি পুলিশিং করছিলেন না৷ বরং একধরনের শিকার করছিলেন৷ কারণ নুসরাতের বক্তব্য রেকর্ড করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিলেন তিনি৷ সে কারণেও ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায়৷ কারণ সরকারি একজন কর্মকর্তা হয়ে, তিনি বাংলাদেশ পুলিশের কোনো ওয়েবসাইটে তা আপলোড করেননি৷ তিনি আপলোড করেছেন ব্যক্তি মোয়াজ্জেমের ফেসবুক পেজে৷ তার ফেসবুক পেজ অফিসিয়াল না হওয়া সত্ত্বেও তিনি পেশাগত কিছু বিষয় সেখানে আপলোড করেছেন৷ তিনি ব্যক্তি ও পেশাকে আলাদা না করে দুটোকে এক করে ফেলেছেন৷ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে, তিনি যে কাজগুলো করবেন, সেগুলোর গোপনীয়তা রক্ষারও একটা ব্যাপার থাকে৷ কিন্তু সেই গোপনীয়তা তিনি রক্ষা রাখলেন না৷

সরকারি কাজের তথ্য, সে তার ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছে, এটা করার এখতিয়ার তার নেই৷ এত কিছুর প্রেক্ষিতে একজন আইনজীবী মামলা করেছেন ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে৷ তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি৷ বরং উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেয়ার চেষ্টা করছিলেন৷ পরে সে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে আদালতে হাজির করা হয়েছে৷ এখন অবশিষ্ট কাজগুলো আইন অনুযায়ী চলছে৷

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে নানা সমালোচনা আছে৷ ২৬ ধারাটি আদৌ সেভাবে হতে পারে কিনা বা কিভাবে হবে, সে বিষয়েও আইন তৈরির আগে আমরা মতামত দিয়েছি৷ কিন্তু আইনটি সংসদে পাশ হয়ে গেছে৷ ফলে আইনটি পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত, একজন অভিযুক্তের ওপর ধারাগুলো প্রযোজ্য হবে৷ আইনটিকে যদি চ্যালেঞ্জ করা না যায়, তবে এই ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ নেই৷

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক ট্রেন্ড হচ্ছে, অমুকের সঙ্গে তমুকের ফোনালাপ ফাঁস৷ ডিআইজি মিজানের সঙ্গে দুদক কর্মকর্তার অডিও ফাঁস হলো৷ সেটা বাজানো হলো বিভিন্ন গণমাধ্যমে৷ তাহলে প্রশ্ন আসে, এই অডিও উৎস কি? গণমাধ্যমকর্মীরা এটা কিভাবে পেলেন? যদি ডিআইজি মিজান দিয়ে থাকে, সেটাও অপরাধযোগ্য কাজ৷ কারণ নিশ্চিত না হয়ে, গণমাধ্যম প্রচার করছে কেন?

তিনি নিজেই বলছেন, তার বিরুদ্ধে একটা তদন্ত চলমান৷ ফলে চলমান তদন্তের মধ্য এমন ঘটনা তো তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারে৷ পছন্দের পাত্র হলে ফোনালাপ প্রচার করা যাবে না, অপছন্দের কেউ হলে প্রচার করা যাবে--এই যুক্তি তো খাটবে না৷ এইসব মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ হওয়া উচিত৷

কাউকে না জানিয়ে ফোনালাপ রেকর্ড তা ছেড়ে দেয়া কিন্তু পুরোপুরি সংবিধানের লংঘন৷ কারণ ব্যক্তিগতা গোপনীয়তার রক্ষার অধিকার সংবিধান দিয়েছে৷ কোনো শর্ত পূরণ করে নয়, বরং অ্যাবসুলুট রাইট হিসেব নাগরিক সংবিধান এই অধিকার দিয়েছে৷

ফলে কেউ যদি আমাকে না জানিয়ে ফোনালাপ বা যোগাযোগ রেকর্ড  করে ফেলে তাহলে সে আমার সাংবিধানিক অধিকারকেই খর্ব করছেন৷ চোর ডাকাত যেই হোক না কেন, কারো মৌলিক অধিকার খর্ব করার কোনো সুযোগ নেই৷ আদালত কাউকে দোষী বা অপরাধী না বলা পর্যন্ত তাকে কোনোভাবে অপরাধী বলার সুযোগ নেই৷ ফলে গণমাধ্যমকেও এবিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া উচিত৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য