1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌ভাস্কর্যের নামে পুতুল

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন দিয়েগো মারাদোনা৷ সেই উপলক্ষ্যে শহরের শ্রীভূমি এলাকায় বসল তাঁর একটি ফাইবার গ্লাসের মূর্তি, যা দেখে মারাদোনা নাকি নিজের বলে চিনতেই পারেননি!‌

https://p.dw.com/p/2pYy2
Indien Kalkutta Statue vom Fußball-Spieler Maradona
ছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay

শোনা যাচ্ছে ক্ষিপ্ত হয়েছেন ফুটবল সম্রাট৷ ফুটবল-পাগল কলকাতা শহর যে তাঁকে ভালোবাসে, তার নমুনা আগেই পেয়েছেন মারাদোনা৷ কাজেই এই শহরে তাঁর একটা মূর্তি বসবে, এটাও খুব অবাক করা কোনো ব্যাপার নয়৷ কিন্তু সেই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করতে গিয়ে নাকি কষ্ট করে চিনতে হয়েছে যে ওটা তাঁরই মূর্তি৷ হাতে ফুটবল বিশ্বকাপ আর পরনে আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের নীল-সাদা ডোরাকাটা জার্সির আভাস পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু মুখের আদলে বা মূল মারাদোনার সঙ্গে মূর্তিটির সাদৃশ্য এতটাই কম, যে নীচে লিখে না দিলে বোঝা মুস্কিল এটা কোন ফুটবলারের মূর্তি!‌ শুধু মারাদোনাই বিরক্ত হয়েছেন, তা নয়৷ অ্যামেরিকা এবং ইংল্যান্ডের কিছু খবরের কাগজেও এই নিয়ে হাসাহাসি হয়েছে৷ তুলনা টানা হয়েছে পর্তুগালের মেদেইরা বিমানবন্দরে বসানো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সমান হাস্যকর মূর্তিটির সঙ্গে, যা নিয়ে একই রকম ঠাট্টা-তামাসা আর বিদ্রূপ হয়েছে আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকায়৷

‘শুধু মারাদোনার এই মূর্তি নয়, ইদানীং কলকাতা শহরের সব মূর্তি আর ভাস্কর্যের একই কুৎসিত দশা’

কলকাতার মূর্তিটি যিনি গড়েছেন, সেই মন্টি পাল কিন্তু একেবারেই মানতে রাজি নন যে এই মূর্তিটির কোনো ত্রুটি আছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, এর আগে তিনি ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মূর্তি গড়েছেন, যেটি রাখা আছে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনের সংগ্রহশালায়৷ আর  মারাদোনার এই মূর্তিটিগড়তে তিনি সাহায্য নিয়েছেন একাধিক ফটোগ্রাফের৷ ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনার সেই বিশ্বকাপ জেতার বছরে তরুণ মারাদোনার যেমন চেহারা ছিল, তার আদলেই তিনি এই মূর্তিটি গড়েছেন৷ মন্টি পালের বক্তব্য, তাঁর তৈরি মূর্তি নিয়ে নয়, সমালোচনা হচ্ছে কলকাতার মোমমূর্তির সংগ্রহশালায় রাখা মারাদোনার একটি মূর্তির৷

‘একেবারেই মানতে রাজি নন যে এই মূর্তিটির কোনো ত্রুটি আছে’

মন্টি পাল যে মোমের মূর্তির কথা বলছেন, সেটিও একই রকম খারাপ৷ সেটি দেখেও একরকম জোর করে চিনতে হয় মারাদোনাকে৷ কিন্তু এই ফাইবার গ্লাসের মূর্তিটিও যে সাদৃশ্যে  মারাদোনার থেকে অনেকটাইদূরে, সেটা একজন ভাস্কর বুঝতে পারছেন না, এটা সম্ভবত বেশি অস্বস্তির৷ বিশিষ্ট শিল্পী প্রদোষ পালকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এই নিয়ে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, শুধু মারাদোনার এই মূর্তি নয়, ইদানীং কলকাতা শহরের সব মূর্তি আর ভাস্কর্যের একই কুৎসিত দশা৷

উদাহরণ হিসেবে তিনি বললেন, সদ্য হয়ে যাওয়া অনূর্ধ ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য সল্ট লেক স্টেডিয়ামের বাইরে বসানো বদখৎ একটি মূর্তির কথা৷ কোমর থেকে দু'টি পা৷ দুই পায়ে দু'টি ফুটবল৷ এবং কোমরের ওপরে বসানো বিশ্ববাংলার গোলক৷ শোনা যায়, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাবনায় তৈরি ঐ মূর্তি৷ প্রদোষ পালের বক্তব্য, এ সব দেখেই বোঝা যায়, যে যাঁরা কাজের বরাত দিচ্ছেন এবং যাঁরা সেই কাজ করছেন, তাঁদের কারও শিল্প সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা নেই৷ ভাস্কর্য শিল্পের একটি ধারা, যা পরিশ্রম করে রপ্ত করতে হয়৷ শিখতে হয়, শিল্পবোধ তৈরি করতে হয়৷ পুতুল আর ভাস্কর্যে তফাত আছে৷ দুর্ভাগ্য যে সেটা বোঝার মতো পরিস্থিতিও এখন আর নেই৷

প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো বন্ধু? জানান আপনার মন্তব্য, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য