ভালো সাংবাদিকতা, খারাপ সাংবাদিকতা
সাংবাদিকতা যেমন সত্য উন্মোচন করে, তেমনি অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নেও সাংবাদিকদের ব্যবহার করা হয়৷ ছবিঘরে এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা থাকছে৷
ওয়াটারগেট কেলেংকারি
সাংবাদিকতার ইতিহাসে এটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা৷ ১৯৭২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট কমপ্লেক্সে ডেমোক্রেটদের সদরদপ্তরে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল৷ পরবর্তীতে সেই ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করেছিল প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রশাসন৷ ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল ব্যার্নস্টাইনের রিপোর্টিংয়ের কারণে কংগ্রেস ঘটনাটি তদন্ত করেছিল৷ পরে নিক্সন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন৷
ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধে সহায়ক
সাংবাদিক ওয়াল্টার ক্রোনকাইটকে অনেকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক’ মনে করতেন৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে করা প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ জিততে পারবে না৷ তাঁর বক্তব্য মার্কিনিদের বিশ্বাসে পরিবর্তন এনেছিল৷ এমনকি প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনও নাকি বলেছিলেন, ‘‘যখন আমি ক্রোনকাইটের বিশ্বাস হারাই, তখন আমি মধ্যবিত্ত মার্কিনিদের বিশ্বাস হারাই৷’’ ক্রোনকাইটের রিপোর্টিং যুদ্ধ থামাতে সহায়ক ছিল৷
শিশু হত্যার ভুয়া খবর
১৯৯০ সালে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের এক প্রতিবেদনে কুয়েতে ইরাকি সেনাদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরা হয়েছিল৷ সেনারা নাকি ইনকিউবেটরে থাকা শিশুদের মেরে ফেলছে৷ পরে ওয়াশিংটন পোস্টও এমন তথ্য দিয়েছিল৷ এরপর মার্কিন কংগ্রেশনাল ককাসে একই বর্ণনা দেন ১৫ বছরের কুয়েতি মেয়ে নায়িরাহ৷ এসব তথ্যের ভিত্তিতে ইরাকে যুদ্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ পরে জানা যায়, তথ্যগুলো ভুয়া ছিল৷ আর নায়িরাহ আসলে কুয়েতি রাষ্ট্রদূতের মেয়ে ছিলেন!
ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র?
ইরাক যুদ্ধ শুরু করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সে দেশে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন৷ মূলধারার কয়েকটি পত্রিকাও এমন অভিযোগ তুলেছিল৷ নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন করেছিলেন জুডিথ মিলার৷ অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘পুরো ইরাক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের এক বড় আধার৷’’ যদিও পরে এমন অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি৷ নিউইয়র্ক টাইমস তাদের রিপোর্টগুলো মানসম্মত ছিল না বলে স্বীকার করেছিল৷
পানামা পেপার্স
পানামার ‘মোসাক ফনসেকা’ নামে আইন বিষয়ক এক প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মচারীর তথ্যের ভিত্তিতে কর ফাঁকি দেয়া দুই লাখের বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম’ আইসিআইজে৷ ২০১৬ সালে প্রকাশিত ঐ তালিকায় বাংলাদেশের অন্তত ৫০ ব্যক্তি ও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছিল৷ তবে আইসিআইজে বলেছে, তালিকায় যাদের নাম এসেছে তারা সকলেই যে অনিয়মে জড়িত, এমন নয়৷
এনএসএ-র নজরদারি
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ জননিরাপত্তার জন্য যাদের হুমকি মনে করতো তাদের উপর নজরদারি করতো৷ কিন্তু ২০১৩ সালে জানা গেল, ডাকঘরকর্মী, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সবার উপর নজরদারি করছে এনএসএ৷ এডওয়ার্ড স্নোডেনের সহায়তায় ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ান এই তথ্য প্রকাশ করে৷ জানা যায়, জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল, ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওঁলদের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরাও নজরদারির আওতায় ছিলেন৷