1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের সাপ মানুষদের কথা

২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ইরুলারা একসময় সাপের চামড়া বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন৷ পরে সাপ মারার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ায় তারা বিপদে পড়েছিলেন৷

https://p.dw.com/p/46Oic
ছবি: Reuters/A. Abidi

কিন্তু সাপের বিষ প্রতিরোধক ওষুধসহ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরিতে সাপের বিষ প্রয়োজন হওয়ায় এখন আবার তাদের কদর বেড়েছে৷

সাপকে হয়ত অনেকেই পছন্দ করেন না, কিংবা ভয় পান৷ কিন্তু জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাপের অনেক অবদান আছে৷ তারা ইঁদুর খায়৷ তাই শস্য নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়৷ আবার ইঁদুরের মাধ্যমে রোগও ছড়াতে পারে না৷ শিকার এবং শিকারী - এই দুই ভূমিকাতেই সাপকে দেখা যায়৷ যেসব এলাকায় ইঁদুরের উৎপাত আছে সেখানে সাপ না থাকলে ঐসব এলাকার ইকোসিস্টেম নষ্ট হয়ে যেত৷ এমনই এক এলাকা ভারতের তামিলনাড়ু৷

সাপুড়ে সি কালি জানান, ‘‘সাপ সাধারণত ইঁদুর মেরে তাদের গর্তে থাকে৷ সাপ গর্ত করে না৷’’

কালি ইরুলা সম্প্রদায়ের লোক৷ সাপ সম্পর্কে তারা অনেককিছু জানেন৷ কারণ কয়েক প্রজন্ম ধরে ইরুলারা সাপ ধরছেন৷ একসময় সাপের চামড়া বিক্রি করে তারা অনেক আয় করতেন৷

ভারতে ইরুলাদের গুরুত্ব বাড়ছে

১৯৭০ এর দশকে ইঁদুরের উৎপাতে ভারতে অনেক শস্য নষ্ট হয়েছিল৷ সেই সময় বন বিভাগ সাপের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল৷ তাই সাপ রক্ষায় তারা উদ্যোগ নিয়েছিল৷ এতে সাপুড়েরা বিপদে পড়েছিলেন৷

ঐ সময় সাপের কামড়ে অনেকে মারা যাচ্ছিলেন৷ তাই সাপের বিষ প্রতিরোধক ওষুধ তৈরির গুরুত্ব দেখা দিয়েছিল৷

কনজারভেশনিস্ট যাই হোয়াইটেকারের সাবেক স্বামী রমুলাস ১৯৭৮ সালে সাপুড়েদের নিয়ে দ্য ইরুলা স্নেক ক্যাচার্স কোঅপারেটিভ গড়েছিলেন৷ তাদের ধরা সাপের বিষ ওষুধ তৈরিতে সহায়তা করেছিল৷ ফলে ভারতে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছিল৷

হোয়াইটেকার জানান, ‘‘দেশে তখন সাপের বিষ প্রতিরোধক ওষুধের অভাব ছিল৷ তাই সাপুড়েদের দিয়ে সাপ ধরার প্রকল্প চালু করা হয়৷ কারণ বিষ প্রতিরোধক ওষুধ তৈরির জন্য গবেষণা করতে সাপের বিষ প্রয়োজন ছিল৷ এতে সাপুড়েদেরও লাভ হয়েছিল৷’’

ভারতে সাপের কামড়ে মৃত্যুর জন্য দায়ী মূলত চার জাতের সাপ - কোবরা, ক্রেইট, রাসেল ভাইপার এবং আরেক জাতের ভাইপার৷ প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান৷

প্রাণীর বিষ দিয়ে ওষুধ তৈরির গবেষণা

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ তৈরিতেও সাপের বিষ প্রয়োজন হয়৷

তবে ভারতের বিভিন্ন এলাকার সাপের বিষে পার্থক্য আছে৷ তাই বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাওয়া বিষ নিয়ে গবেষণা চালানো একটা চ্যালেঞ্জ৷

চেন্নাই স্নেক পার্কের কর্মকর্তা এস আর গনেশ জানান, ‘‘ভারতের উত্তর-পশ্চিমের কোবরার বিষ এতই অন্যরকম যে, তামিলনাড়ুতে পাওয়া যাওয়া সাপের বিষ থেকে তৈরি ওষুধ ঐ সাপের কামড়ের চিকিৎসায় কাজ করে না৷’’

সাপের কামড়ের চিকিৎসাসহ অন্যান্য রোগের ওষুধ তৈরির জন্য সাপ ধরা জরুরি৷ আবার ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যও সাপ রক্ষা করা দরকার৷ ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে খাদ্যচক্রে ভারসাম্য ধরে রাখা - আমাদের পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাপের অনেক গুরুত্ব আছে৷

ইরুলারা কয়েক প্রজন্ম ধরে মানুষ ও সাপের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছেন৷

ক্যাথেরিন গিলন/জেডএইচ

২০২০ সালের অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...