1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা

২৯ মার্চ ২০২০

ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেল হাজারের কাছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২২ শতাংশ হারে।

https://p.dw.com/p/3aAXl
ছবি: DW/A. Ansari

আশঙ্কা ছিলই। আশঙ্কা সত্যি হল। শুক্রবার থেকে ভারতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেল। গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা দেশ জুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৪ জন। যার জেরে সরকারি হিসেবে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে পৌঁছে গেল ৯৭০ জনে। মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। বেসরকারি সূত্রের দাবি রবিবার সকাল ১০টার মধ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০৩৭ এ পৌঁছে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা ২৫। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, পরীক্ষা ঠিক মতো হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতো।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ এবং এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত সহ উপমহাদেশে এই সময়ের মধ্যে করোনার সংক্রমণ কয়েকগুণ বাড়ার সম্ভাবনা। পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার প্রায় ২২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা আগামী সপ্তাহে এই হার আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভারত স্টেজ থ্রি-তে পৌঁছয়নি। অর্থাৎ, কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও ছড়িয়ে পড়েনি সংক্রমণ। কিন্তু অনেকেরই ধারণা, গত দুই দিন ধরে যে ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, তাতে মনে হচ্ছে সংক্রমণ সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে বা তার সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। লকডাউন সত্ত্বেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তারা চিন্তিত।

এক সপ্তাহ আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্লোগান ছিল 'টেস্ট টেস্ট টেস্ট'। অভিযোগ ভারতে সে ভাবে টেস্ট হচ্ছেই না। শুক্রবারই ডয়চে ভেলেকে বিশিষ্ট চিকিৎসক সাত্যকি হালদার জানিয়েছিলেন, ''দেশে করোনা পরীক্ষার যথেষ্ট পরিকাঠামোই গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। বিদেশ ফেরত বা বিদেশ ফেরতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্তদেরই কেবল পরীক্ষা হচ্ছে অধিকাংশ জায়গায়। ফলে আসলে ভাইরাসটি কতটা ছড়িয়েছে, সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়েছে কি না, এই তথ্য পাওয়াই যাচ্ছে না।''

দেশের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁর স্পষ্ট দাবি, ''প্রথম যখন করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, ভারতে তখন মাত্র ১৫টি পরীক্ষাগারে করোনা টেস্টের ব্যাবস্থা ছিল। এখন গোটা দেশে ১১৯টি সরকারি পরীক্ষাগারে এই টেস্ট হচ্ছে। ৩৫টি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতেও এর পরীক্ষা হচ্ছে। গত পাঁচ দিনে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার জনের পরীক্ষা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট ২৮ হাজার জনের পরীক্ষা হয়েছে।''

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৩০ কোটির দেশে ২৮ হাজার মানুষের পরীক্ষা সিন্ধুতে বিন্দুর মতো। বস্তুত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১০ লক্ষে ভারতে করোনার পরীক্ষা হচ্ছে মাত্র তিন জনের। যেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে প্রতি ১০ লক্ষে পরীক্ষা হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার জনের। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই পরিসংখ্যান এক সপ্তাহ আগের। গত সাত দিনে পরীক্ষার পরিমাণ আগের চেয়ে সামান্য বেড়েছে বলেই স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক আধিকারিকের দাবি।

প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাও বলছে, মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় হাজার ছুঁয়ে ফেললেও সকলের করোনা পরীক্ষা এখনও হচ্ছে না। কলকাতার এক ব্যক্তি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভুগছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, বিদেশ ফেরত কি না কিংবা কোনও বিদেশ ফেরতের সংস্পর্শে এসেছিলেন কি না। উত্তর না হওয়ায়, তাঁর স্ত্রীর করোনা পরীক্ষা হয়নি। হাসপাতাল বলেছে, পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট কিট নেই। দিল্লিতেও একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন বহু চিকিৎসক ও রোগী।

পরিসংখ্যানের নিরিখে কেরালায় এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত, ১৭৬ জন। মৃত্যু হয়েছে এক জনের। পাঞ্জাবে আক্রান্ত ৩৯ জন, মৃত এক। জম্মু-কাশ্মীরে আক্রান্ত ৩৩, মৃত এক। রাজস্থানে ৫৬ জন। মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত ১৭৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের। উত্তরপ্রদেশে এখনও পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ৬১ জন। কর্ণাটকে ৭৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। গুজরাতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩ ছাড়িয়ে গিয়েছে, মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য আক্রান্তের সংখ্যা সে ভাবে বৃদ্ধি পায়নি, এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত ১৮ জন, মৃত্যু হয়েছে এক জনের। দিল্লিতে ৪৯ জনের শরীরে এখনও পর্যন্ত করোনার জীবাণু মিলেছে।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, একমাত্র উত্তর পূর্ব ভারত ছাড়া দেশের প্রায় প্রতিটি কোণেই সংক্রমণছড়িয়ে পড়েছে। সেটাই চিন্তার কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিকদের দাবি, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে। ১৩০ কোটির দেশে এক হাজারের কাছাকাছি লোকের করোনায় আক্রান্ত হওয়াটা খুব বড় বিষয় নয়। লকডাউনের ফলেই করোনা কম ছড়িয়েছে। 

এসজি/জিএইচ (পিটিআই, রয়টার্স)