1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে মানবপাচারবিরোধী আইন: বন্ধ হবে যৌনপল্লি?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ জুলাই ২০২১

মানবপাচার রোধে নতুন আইন হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার৷ সেটি নিয়ে উদ্বেগে পড়েছে যৌনকর্মীদের সংগঠনগুলি। তাদের আশঙ্কা এই আইনে বন্ধ হয়ে যেতে পারে যৌনপল্লিগুলো৷

https://p.dw.com/p/3wdu5
মানবপাচার রোধে নতুন আইন হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার৷ সেটি নিয়ে উদ্বেগে পড়েছে যৌনকর্মীদের সংগঠনগুলি। তাদের আশঙ্কা এই আইনে বন্ধ হয়ে যেতে পারে যৌনপল্লিগুলো৷
ছবি: Payel Samanta/DW

সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় এরিমধ্যে পাশ হয়েছে মানবপাচার রোধ, সুরক্ষা ও পুনর্বাসন বিল৷ এখন সেটি রাজ্যসভায় পাশের অপেক্ষা৷ রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই তা আইন বলে গণ্য হবে৷ তবে আইনটি এমন কিছু ধারা আছে যা বাস্তবায়ন হলে যৌনকর্মীদের এই পেশায় থাকা কঠিন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সমাজকর্মীদের৷ বন্ধ হয়ে যেতে পারে যৌনপল্লিগুলোও৷ এজন্য আইন পাশের আগে সব দিক খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷

বিপদের আশঙ্কা যৌনকর্মীদের

মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়

সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মানবপাচার নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে ভারতে মানবপাচারের প্রকটতার চিত্র উঠে এসেছে৷ অতিমারির কালে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, একদিকে যেমন শিশুশ্রমের জন্য পাচার হচ্ছে, তেমনি যৌন কারবারের জন্যেও পাচারের শিকার অনেকে

অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে, জোরপূর্বক নারীদের যৌন পেশায় বাধ্য করা হয়৷ এ বিষয়ে মানবপাচার বিরোধী আইন ততটা কঠোর ছিল না৷ তাই শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে ট্র্যাফিকিং পার্সনস (প্রিভেনশন, প্রোটেকশন, রিহ্যাবিলেটশন) বিল ২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে৷ এই আইনে সুরক্ষা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷ কিন্তু যৌনকর্মীদের জন্য তা উল্টো আশঙ্কার কারণ হিসেবে দেখছেন তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো৷

দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির অ্যাডভোকেসি অফিসার মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা একেবারেই যৌনকর্মীদের স্বার্থবিরোধী৷ এই বিলের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের পেশাটাকেই অস্বীকার করার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে৷ পাচার রোখার নাম করে যৌনপল্লিগুলি উচ্ছেদ করার আশঙ্কা করছি৷”

তাদের সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গে নথিভুক্ত যৌনকর্মীর সংখ্যা ৬৫ হাজার৷ অনথিভুক্তদের নিয়ে সংখ্যাটা দেড় লাখ৷ মহাশ্বেতা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ৯৫ শতাংশ মেয়েই কাজটা জেনেবুঝে করতে আসছে৷ পরিবার ভরণপোষণের জন্য তারা এ কাজে আসেন৷ সেলফ রেগুলেটরি বোর্ড তৈরি হয়েছে, যাতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে এই পেশায় আসতে না হয়৷ কিন্তু এই ক্ষেত্রে (নতুন আইনে) ধরে নেওয়া হবে যে এই এলাকায় নারী মানেই পাচার হয়ে এসেছে৷’’

পুনর্বাসনের  কী  হবে

এই আইন কার্যকর হলে কি পাচার কমে যাবে? নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘‘অতিমারিতে দারিদ্র্য আরও বেড়েছে৷ বিশেষ করে শিশু ও মেয়েদের মধ্যে স্কুলছুট হওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে৷ ফলে প্রশাসনের চেষ্টায় আইন দিয়ে পাচার বন্ধ হবে বলে মনে হয় না৷ আইন কার্যকর করতে হলে একটা সংগঠিত প্রয়াসে পাচারের তদন্ত করতে হবে৷”

শাশ্বতী ঘোষ

পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে নয়া বিলে ‘হোমকেই’ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এমনকি সঙ্গে শিশুসন্তান থাকলে তারও ঠাঁই হবে ‘হোম’-এ৷ শাশ্বতী বলেন, ‘‘এখন রি-ট্র্যাফিকিং একটা বড় সমস্যা৷ যে মেয়েদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, সামাজিক স্বীকৃতির অভাবে তারা যেনতেন প্রকারেণ আবার ওই পরিবেশে ফিরে যেতে চায়৷ পুনর্বাসন হলেও তারা আগের জীবনের মতো স্বাধীনতা, সম্মান পাচ্ছে না৷’’

এদিকে পুনর্বাসন কেন্দ্র বা হোম পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি, যৌন নিগ্রহের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই প্রকাশিত হয়৷ একের পর এক ঘটনায় রাজ্যের লিলুয়া, গুড়াপ, বা বেহালায় দৃষ্টিহীনদের হোমে যৌন নিগ্রহের ঘটনা উঠে এসেছে৷ এরপরেও কি হোমে পুনর্বাসন কখনো পরিবারের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে? প্রশ্ন তুলেছেন সমাজকর্মীরা৷ বরং তারা বিকল্প কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিতে বলছেন৷

যৌনকর্মীদের একাংশের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার আসলে যৌন পেশাকেই অস্বীকার করতে চায়৷ অপরাধী তকমা দিতে চাইছে৷ তাই এই বিল পাস হলে পুলিশি জুলুমও বাড়বে৷ এই আইন পাশ করানোর আগে বিশদ আলোচনা চাইছেন যৌনকর্মীদের নিয়ে আন্দোলনকারীরা৷ ইতিমধ্যে ১৭ রাজ্যের সমাজকর্মী, সংগঠনের প্রতিনিধিরা নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকে আইন পাশের আগে  সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের মতামত নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে৷ মহাশ্বেতা বলেন, ‘‘একটা জনগোষ্ঠী যখন উঠে দাঁড়াতে চাইছে, সন্তান মানুষ করার দায়িত্ব নিচ্ছে, তাহলে পাচারের নাম করে তাদের অপরাধী বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে কেন?’’

২০২০ সালের  জুলাইর ছবিঘর দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান