1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে কেমন যেতে পারে ২০২২

গৌতম হোড় নয়াদিল্লি
৩১ ডিসেম্বর ২০২১

২০২১ খুব একটা ভালো যায়নি। দীর্ঘ সময় করোনার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত ছিল গোটা দেশ। ২০২২ কেমন যেতে পারে?

https://p.dw.com/p/451Nd
নতুন বছর কি আনন্দ নিয়ে আসবে?ছবি: Satyajit Shaw/DW

২০২২ সালেও করোনা নিয়ে চিন্তা থেকে যাচ্ছে। কারণ, ২০২১-এর শেষের কয়েকটা দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ওমিক্রন ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও লাফ দিয়ে বাড়ছে। দিল্লিতে কয়েকদিন আগেও দিনে ৩০ থেকে ৬০ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার হয়েছেন এক হাজার ৩০০ জন। ভারতজুড়েই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

২০২২-এ করোনার তৃতীয় ঢেউ?

স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, ভারতে এবার করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। তার সব লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে। শুক্রবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৭৬৪ জন। ভারতে এখন ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ২৭০ জন। এদিন বিহারেও একজন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। গত কয়েকদিন ধরে করোনার ডেল্টা ও ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ও এটাই হয়েছিল। এখন আবার তাই হচ্ছে। তাই ২০২২-এর শুরুটা ভালো হবে না। করোনার প্রকোপ বাড়ার ষোলোআনা সম্ভাবনা আছে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন।

দিল্লিতে নতুন বছর শুরু হচ্ছে কড়াকড়ির মধ্যে দিয়ে। প্রকাশ্যে রাত বারোটার পার্টি করা যাবে না। কারণ, রাত দশটা থেকে কার্ফিউ শুরু হয়ে যাবে। তার আগে পর্যন্ত পাব, ক্লাব, রেস্তোরাঁয় মানুষ যেতে পারবেন। তবে মোট আসনের ৫০ শতাংশই ভর্তি করা যাবে। স্কুল, কলেজ, জিম বন্ধ। মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকেও একই ব্যবস্থা থাকবে। ফলে নতুন বছরের শুরুতে কড়াকড়ি থাকবে।

করোনার তৃতীয় ঢেউ আসবে কি না, আসলে তা কতটা ভয়াবহ হবে, তার উপর নির্ভর করবে, নতুন বছরে কতদিন ধরে কড়াকড়ির মধ্যে থাকতে হবে। আবার লকডাউনের পরিস্থিতি আসবে কি?

সাত রাজ্যের নির্বাচন

২০২২ সালে ভারতে সাতটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে। তার মধ্যে পাঁচটি রাজ্যে মার্চের মধ্যে ও দুইটি রাজ্যে ডিসেম্বরে। যে পাঁচটি রাজ্যে ফেব্রুয়ারি-মার্চে নির্বাচন হবে, সেগুলি হলো উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, গোয়া ও মণিপুর। তারমধ্যে রাজনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশ। ভারতীয় রাজনীতিতে চালু কথাই হলো, উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা যার হাতে থাকে, জাতীয় রাজনীতিতে তার প্রভাব বেশি থাকে।

পাঁচ রাজ্যের মধ্যে চারটিতে বিজেপি ক্ষমতায় আছে। পাঞ্জাবে শুধু কংগ্রেস ক্ষমতায়। তবে অমরিন্দর সিং-কে তারা মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেয়ায় তিনি আলাদা দল করেছেন। পাঞ্জাবে কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তুঙ্গে। গোয়ায় বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও সেখানে তাদের নেতৃত্ব নিয়ে সমস্যা আছে। তৃণমূল কংগ্রেস গোয়া দখলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কেজরিওয়ালের আপও গোয়া ও পাঞ্জাবে লড়ছে। ফলে প্রতিটি রাজ্যেই চিত্তাকর্ষক নির্বাচন হতে যাচ্ছে।

বছরশেষে মোদীর রাজ্য গুজরাট ও হিমাচলে নির্বাচন। ফলে রাজনৈতিক দিক থেকে ২০২২ রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ ও সরগরম থাকবে। বোঝা যাবে, কংগ্রেস সামান্য হলেও এগোতে পারছে কিনা, নাকি বিজেপি আগের মতোই রাজ্যগুলিতে তাদের প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে।

তবে এই রাজনৈতিক তৎপরতার মধ্যেই করোনার কারণে পাঞ্জাবে জনসভা বাতিল করে রাহুল গান্ধী আবার বিদেশে চলে গেছেন।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়

২০২১ কেটেছে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে। বন্যা, ধস, অতিবৃষ্টি, বাজ, আগুনের প্রচুর ঘটনা ঘটেছে। প্রচুর মানুষ মারা গেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। ২০২২-ও শুরু হচ্ছে এমনই এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে সঙ্গী করে। তামিলনাড়ুতে প্রবল বৃষ্টির ফলে বন্যা হয়েছে। তিনজন মারা গেছেন। চেন্নাই সহ রাজ্যের প্রচুর এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। চেন্নাইয়ের অনেক এলাকায় জল জমে গেছে। স্কুল, কলেজ সব বন্ধ। ফলে নতুন বছরের শুরুটা তামিলনাড়ুর জন্য অন্তত ভালো হলো না। আর বছরের বাকি দিনগুলোর জন্যও আশঙ্কা থেকে গেল।

কাশ্মীরের পরিস্থিতি

কাশ্মীরে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে আরো তিনজন জঙ্গি মারা গেছে। একদিন আগে ছয় জঙ্গির মৃত্যু হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর মধ্যে একজন পুলিশের বাসে আক্রমণ চালিয়েছিল বলে কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে। ২০২১ সালে কাশ্মীরে একশটি অপারেশন চালিয়েছে পুলিশ। তাতে ১৮২ জন জঙ্গি মারা গেছে।

সাধারণত শীতে কাশ্মীর শান্ত থাকে। কিন্তু এবার শীতেও একের পর এক এনকাউন্টার হচ্ছে। ফলে ২০২২ সালেও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা থাকবে সরকারের। প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরের দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করে বলেছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীর আবার রাজ্যের মর্যাদা পাবে। তবে কবে তারা এই মর্যাদা পাবে, তা জানানো হয়নি। ২০২২ সালে কাশ্মীর এই মর্যাদা পাবে কি না তার দিকে নজর থাকবে ভারতবাসীর।

অর্থনীতির হাল

২০২১ সাল অর্থনীতির নিরিখে ভালো য়ায়নি। আর্থিক বৃদ্ধির হার নেতিবাচক হয়ে গেছিল। তারপর করোনা পরিস্থিতি ভালো হওয়ার পর আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। তবে তা এখনো আগের অবস্থায় পৌঁছায়নি। ২০২২ সালের শুরুতে করোনা আবার চোখ রাঙাচ্ছে। ফলে আর্থিক পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে পারে। আবার কাজ হারাতে পারে মানুষ। করোনাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে আর্থিক প্রবৃদ্ধি ভালো হতে পারে। সেই অপেক্ষায় থাকবে আমজনতা।