1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার খরচ কেমন?

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৫ নভেম্বর ২০১৯

ছাত্র আন্দোলনের চাপে ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সংশোধন করলো ভারতের দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু উচ্চশিক্ষার খরচ কম রাখার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে৷

https://p.dw.com/p/3T5Yu
Aligarh Muslim University in Aligarh, Indien
ছবি: imago/Indiapicture

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউর পড়াশোনার খরচ দীর্ঘ ১৯ বছর পর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল৷ এতদিন যে হোস্টেল খরচ ছিল মাসে ১০-‌২০ টাকা, তা বাড়িয়ে ৩০০-‌৬০০ টাকা করা হয়েছিল৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল মাসে ১,৭০০ টাকার এক নতুন সার্ভিস চার্জ৷ এছাড়া বছরে ২,২০০ টাকার এস্টাবলিশমেন্ট কস্ট, মাসে ৩,০০০ টাকার মেস ফি এবং বছরে ৩০০ টাকার অ্যানুয়াল ফি এক রাখা হয়েছিল৷ এর ফলে মাসে জেএনইউর হোস্টেল খরচ বাড়ত ২,০০০-২,৩০০ টাকা৷ সারা বছরের খরচ ২৭,৬০০-৩২,০০০ থেকে বেড়ে হতো ৫৫,০০০-৬১,০০০ টাকা৷

এই সিদ্ধান্তের সমালোচকরা বলছেন, আগামী বছর থেকে এই বর্ধিত ফি চালু হলে জেএনইউ হতো ভারতের সবচেয়ে দামি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়৷ পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী, জামিয়া মিলিয়া, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি কিংবা এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও বেশি, যেসব জায়গায় খরচ এখন জেএনইউর প্রায় সমান৷ সেই তুলনায় আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, পন্ডিচেরি বা হায়দ্রাবাদ ইউনিভার্সিটিতে খরচ অনেক কম৷

রাজ্য সরকারের আওতায় থাকা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়ার খরচও প্রায় একই, কিন্তু তা নির্ভর করে রাজ্যের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের ওপরও৷ পাশাপাশি, প্রতি রাজ্যের নিজস্ব ‘ডোমিসাইল' বা আবাস নীতির কারণে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার অগ্রাধিকার সেই রাজ্যের শিক্ষার্থীদেরই বেশি৷

তবে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি বা আইআইটি, যা আরেকটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে পড়ার খরচ অনেক বেশি৷

জেএনইউ ছাত্র-ছাত্রীদের ১৬ দিনের লাগাতার আন্দোলনের মুখে পিছু হটে দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে বছরের হোস্টেল খরচ ৩,৬০০ থেকে কমিয়ে ১,৮০০ করেছে কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু মুম্বই আইআইটিতে এই খরচটাই বছরে ২০ হাজার টাকা, দিল্লি আইআইটিতে ১৫ হাজার টাকা৷

ভারতে যেসব জাতীয় ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট, অর্থাৎ আইআইএম আছে, সেখানেও খরচের বহর একই রকম৷ আইআইএম ইন্দোরে স্নাতক স্তরে বার্ষিক মাথাপিছু হোস্টেল খরচ (‌পাঁচজনের ঘরে) ‌২৫ হাজার টাকা৷ স্নাতকোত্তর স্তরে হোস্টেলে একার ঘরে থাকার খরচ ৭৫ হাজার টাকা৷

সেখানে জেএনইউর মতো এক প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সেও দেশের রাজধানী দিল্লির মতো জায়গায়, মাসে ১০-‌২০ টাকা দিয়ে সব সুযোগসুবিধা নিয়ে থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত?

‘‘অর্থনৈতিক সংরক্ষণ জরুরি’’: ডঃ পবিত্র সরকার

জেএনইউর ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি লেনিনকুমারের বক্তব্য, ‘‘জেএনইউতে যারা পড়তে আসে, তাদের ৪০ শতাংশই দরিদ্র, শ্রমজীবী পরিবারের ছেলেমেয়ে৷ আর যে সরকার স্রেফ বিজ্ঞাপনের পিছনে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে, (‌প্রধানমন্ত্রীর) ‌বিদেশ সফরের জন্য হাজার হাজার কোটি খরচ হয়, সেখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বছরে ১০ কোটি ভর্তুকি দিতে পারে না, এই যুক্তিটাই হাস্যকর৷ আসলে এতে বোঝা যায়, সরকার কোনটাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে৷ তার কাছে শিক্ষার চেয়ে (‌প্যাটেলের)‌ মূর্তি গড়া বেশি জরুরি৷''

কিন্তু ৪০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী দরিদ্র পরিবার থেকে এলে বাকি ৬০ শতাংশ কেন কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ পাবে?‌ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলছেন, ‘‘এই কারণেই সংরক্ষণ জরুরি৷ অর্থনৈতিক সংরক্ষণ৷ যারা নানা দিক দিয়ে সংখ্যালঘু, তাদের জন্য সংরক্ষণ৷ কেবল শিক্ষা নয়, স্বাস্থ্য, আবাস, কর্মসংস্থান সবেতেই সমাজের পিছিয়ে থাকা অংশের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া উচিত৷''