1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে কন্যাসন্তান দত্তক নেয়ার সংখ্যা বেশি কেন?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
২৬ মার্চ ২০১৯

ভারতে যত শিশু দত্তক নেওয়া হয়, তার ৬০ শতাংশই কন্যাসন্তান বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়৷ কিন্তু কন্যাসন্তানের চাহিদা বেশি হওয়ার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কিনা, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার বলে মনে করছেন অনেকে৷

https://p.dw.com/p/3FfyD
Indien 10. Jahrestag der Anschläge von Mumbai
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee

ভারতে শতকরা ৯০টি পরিবারে যেখানে পুত্রসন্তানই কাম্য, সেখানে কন্যসন্তান দত্তক নেবার আগ্রহ, আশা জাগানোর মতো একটি খবর৷ সম্প্রতি সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দত্তক নেওয়া ৬০ শতাংশই কন্যাসন্তান৷ অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও যে দেশে কন্যাভ্রুণ হত্যা করা হয় বা জন্মলগ্ন থেকেই কন্যাসন্তানকে দূরছাই করা হয়, সেখানে এই হিসেবটা অবাক হবার মতো বৈকি৷

পাশাপাশি ছবিটা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণও বটে বলে মনে করছেন অনেকে৷ কন্যাসন্তান পরিত্যাগের সংখ্যা বেশি, বিশেষ করে গরিব পরিবারগুলিতে৷ সেজন্যই কি শিশু হোমগুলিতে আশ্রয় পাওয়া কন্যাসন্তানের সংখ্যা পুত্রসন্তানের চেয়ে বেশি? দত্তক নেওয়া শিশুর সংখ্যায় তারই কি প্রতিফলন ঘটেছে? তাই সংখ্যাটি যতটা আশা জাগায়, তারচেয়ে বেশি জাগায় আশঙ্কা ও উদ্বেগ৷

নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত তিন বছরের পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছে যে, এই সময়ে ১২ হাজারের কাছাকাছি অনাথ বা পরিত্যক্ত শিশু দত্তক নেওয়া হয়৷ এর মধ্যে কন্যাসন্তান প্রায় সাত হাজার এবং পুত্রসন্তান প্রায় সাড়ে চার হাজার৷ বিদেশে দত্তক নেওয়া হয়েছে ২,৩১০ জন শিশু, তারমধ্যে ১,৬০০ জন মেয়ে সন্তান অর্থাৎ প্রায় ৬৯ শতাংশ৷

দত্তক সংক্রান্ত বিষয়টি দেখার কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি'র (সিএআরএ) সদস্য প্রাযক্তা কুলকার্নি বলছেন, সন্দেহ নেই, বেশি সংখ্যায় মেয়ে সন্তান দত্তক নেবার মধ্য দিয়ে লিঙ্গ-পক্ষপাত এবং মেয়ে সন্তানের বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাচ্ছে৷ তিনি মনে করেন, বেশি সংখ্যায় মেয়ে সন্তান দত্তক নেবার কারণ খুঁজে দেখতে আরো বিশদ গবেষণার প্রয়োজন৷

যেখানে কন্যাভ্রুণ হত্যা হয়, সেখানে মেয়ে দত্তক নেয়া আমাকেও ধন্দে ফেলে: শাশ্বতী ঘোষ

শিক্ষাবিদ এবং সমাজসেবী অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ এ সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বললেন, পরিসংখ্যান দেখে প্রথমে খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম৷ তবে আমার মনে হয়, যেহেতু কন্যাসন্তান, তাই বড় হলে পরের বাড়িতে চলে যাবে, বিষয় সম্পত্তি পিতৃতান্ত্রিক পরিবারেই থেকে যাবে, সম্ভবতঃ এটা একটা কারণ হলেও হতে পারে৷ বংশরক্ষার দায় যেভাবে ছেলেদের, সেভাবে মেয়েদের নয়৷ মেয়েদের বিয়ে দিতে পারলেই দায় শেষ৷ এর সঙ্গে দত্তক নেবার সম্পর্ক কীভাবে টানা যেতে পারে, জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘নিঃসন্তান বা সন্তানহীন পরিবারের মধ্যে সন্তান লালনপালনের একটা স্বাভাবিক আগ্রহ বেশি থাকে, সেটা পূরণ হচ্ছে৷ তবে কন্যাভ্রুণ হত্যা যেখানে হয়, সেখানে মেয়ে দত্তক নেবার আগ্রহ বেশি কেন, সেটা আমাকেও ধন্দে ফেলে৷ তবে আসল কারণটা সমাজতাত্ত্বিকদেরই খুঁজে দেখতে হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমার যেটা মনে হয়, পুত্রসন্তান দত্তক নেবারঅপেক্ষমান সময় কন্যা সন্তানের চেয়ে বেশি৷ অর্থাৎ লাইনটা লম্বা৷ ওয়েটিং লিস্ট দীর্ঘ৷ এটাও একটা কারণ হতে পারে৷ যেমন ধরুন, কোনো মহিলা হয়ত তাঁর ৩২ বছরে গিয়ে বুঝলেন তিনি গর্ভধারণে অক্ষম৷ কিংবা স্বামী হয়ত ৩৮ বছরে গিয়ে বুঝলেন তিনি সন্তান উত্পাদনে অক্ষম৷ সেক্ষেত্রে ছেলে দত্তক নিতে গেলে অনেক বেশি সময়, ধরুন বছর চারেক অপেক্ষা করতে হবে৷ মেয়ে সন্তান হয়ত বছর খানেকের মধ্যেই পাওয়া যাবে৷''

কন্যাসন্তানকে বড় করে খারাপ কাজে লাগানোর ঘটনাও বিরল নয়৷ এই অভিযোগ অবশ্য শাশ্বতী ঘোষ মানতে নারাজ৷ কন্যাসন্তানকে দত্তক নিয়ে লালন পালনের পর তাঁকে খারাপ কাজে কেউ লাগাতে পারে বলে মনে হয় না৷ ‘‘তবে হ্যাঁ, একেবারে অসম্ভব, তাও বলছিনা৷ লখনৌউ-এর বাঈজিদের ক্ষেত্রে তা হতে পারে, এমনটাই বলা হয়ে থাকে৷ সেক্ষেত্রে কন্যাসন্তানকে প্রথম থেকেই সেভাবে বড় করা হয়,'' ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বললেন শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবী শাশ্বতী ঘোষ৷

সমাজবিদদের মতে, দত্তক নেবার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণের মধ্যে আছে এক, সমাজ সচেতনতা, দুই, যে শূন্যতাবোধ থেকে দত্তক নেওয়া তা মেয়ে সন্তানই পূরণ করতে পারবে বেশি, বৃদ্ধ বয়সে মেয়েরাই বেশি দেখবে, এমনই প্রত্যাশা৷ আর তিন, ছেলে সন্তানের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার বদলে মেয়ে সন্তানই শ্রেয়৷

দত্তক নেবার পুরো প্রক্রিয়াটা এখন হয় অনলাইনে৷ কাজেই সত্যি মিথ্যে যাচাই করা দরকার আরো গভীরে গিয়ে৷ দত্তক নেবার নিয়মকানুনের মধ্যে আছে,  দত্তক নিতে গেলে দম্পতিকে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ হতে হবে এবং তাঁদের আর্থিক সঙ্গতি থাকতে হবে৷ দত্তক নিতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের সম্মতি দরকার৷ সিঙ্গেল মহিলা হলে পুত্র বা কন্যাসন্তান যাকে ইচ্ছে দত্তক নিতে পারবেন৷ কিন্তু সিঙ্গেল পুরুষ হলে তিনি শুধু ছেলেই দত্তক নিতে পারবেন৷ দম্পতির সুস্থ ও স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে, তবেই তাঁরা দত্তক নেবার অধিকারী হবেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান