ভারতে কঠোর হচ্ছে মোটরযান আইন
১৭ জুলাই ২০১৯পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দেড় লাখ মানুষের৷ গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে চার হাজার মানুষ৷ আহতের সংখ্যা হয় দুই থেকে পাঁচ কোটি৷ কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ভারতের ৩০ শতাংশ ড্রাইভিং লাইসেন্সই ভুয়া৷ দায় স্বীকার করেছেন মন্ত্রী নিজেই৷ সংসদে তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে আমার ব্যর্থতা হল, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারিনি৷'
সরকার মনে করছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বর্তমান ট্রাফিক নিয়মে বেশকিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন৷ তাতে দুর্ঘটনার মাত্রা কমবে বলেও মনে করছে বিজেপি সরকার৷ পরিবেশ দূষণ রোধ এবং আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাও সরকারের লক্ষ্য৷ তাই ১৯৮৮-র আইন পরিবর্তন করতে মোটরযান (সংশোধনী) বিল, ২০১৯ সংসদে তুলেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷
ভারতের নিয়ম অনুযায়ী লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার পর বিলটি পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে৷ তাঁর ছাড়পত্র পেলেই আইনে সংশোধনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে৷
বিলটির বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, ‘‘পরিবহনের পুরো বিষয়টিই রাজ্য সরকারের অধীনে রয়েছে৷ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স ইত্যাদি বিষয়েও যদি কেন্দ্রিয় সরকার হস্তক্ষেপ করে, তাহলে রাজ্যগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে৷ তাই কেন্দ্র-রাজ্য সম্মিলিত ভাবে কাজ করা উচিত৷''
তবে নীতিন গাডকারি চিন্তাটা ভিন্ন৷ সংসদে তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বে ভারতই একমাত্র দেশ, যেখানে অতি সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স মেলে৷ এরফলে ফি-বছর দেড় লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান৷ এ জন্যসড়ক পরিবহনে আমূল পরিবর্তন এনে ভারতে ‘লন্ডন পরিবহন মডেল'চালু করা হবে৷''
বিরোধীরা বলছেন, ‘‘মোটরযান কঠোর হচ্ছে হোক৷ সেইসঙ্গে বেহাল সড়কের মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিক সরকার৷''
তৃণমূল এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দুষছেন শাসক দল বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে নিতে চাই৷ এমন সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিত নয়৷ কেন্দ্রিয় সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সবকটি দলের উচিত তাকে সাধুবাদ জানানো৷ দুর্ঘটনা কমাতে সরকার যখন উদ্যোগী, তখন রাজনৈতিক স্বার্থে তার বিরোধিতা করছে তৃণমূল৷''
বর্তমান আইনে গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে দেরি হলে জরিমানা একশো টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হয়েছে৷ মোটরযান আইনে ট্রাফিক নিয়ম অমান্যকারীদের জরিমানার পরিমাণ ১০ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সরকার৷ হেলমেটবিহীন চালকের জরিমানা একশো থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকার করার ইচ্ছে সরকারের৷ গতিসীমা ছাড়ালে জরিমানা ছিল পাঁচশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজারে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার৷ মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে জরিমানা দু-হাজার টাকা৷ এবার তা ১০ হাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ কোনো নাবালক চালক ট্রাফিক আইন অমান্য করলে তার দায় নিতে হবে অভিভাবককে অথবা গাড়িক মালিককে৷ বাতিল করা হতে পারে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন৷ আর ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ২০ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করারও সুপারিশ করছে সরকার৷ ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের গাড়ির লাইসেন্স দেয়া হবে পাঁচ বছরের জন্য৷ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারকে তিন মাসের মধ্যে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত আইনে৷
এর আগে ২০১৬ সালে আইনটি সংশোধন করতে চেয়েছিল সরকার৷ ২০১৭ সালের এপ্রিলে লোকসভায় পাশও হয়৷ কিন্তু দেশজুড়ে পরিবহন ধর্মঘট ডাকে একাধিক সংগঠন৷ তার জের ধরে, বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা হলেও পাশ হয়নি৷ এরমধ্যে সরকারের মেয়াদ শেষ হয়েছে৷ তাই আবার নতুন করে বিলটি এনেছে সরকার৷