1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে আবর্জনা সংকট ও বেসরকারি উদ্যোগ

১ জুন ২০২২

গোটা বিশ্বে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহারের গুরুত্ব বেড়ে চলেছে৷ ভারতের মতো জনবহুল দেশে এখনো এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা রয়ে গেছে৷ তবে বেসরকারি উদ্যোগে পরিস্থিতি বদলানোর নানা প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4C6uu
Eco India vom 11.03.2022
ছবি: DW

পশ্চিমা বিশ্বের সুবিধাভিত্তিক সংস্কৃতির ছাপ ভারতেও অনেক পরিবর্তন আনছে৷ জঞ্জালের বিশাল পরিমাণ সেই প্রবণতার অন্যতম সূচক৷

ভারত আনুমানিক দৈনিক দেড় লাখ টন কঠিন বর্জ্য সৃষ্টি করে৷ অনেক পশ্চিমা দেশের তুলনায় সেই পরিমাণ কম হলেও ২০২৫ সালের মধ্যে সেটি দ্বিগুণ হয়ে ওঠার কথা৷ টক্সিক্স লিংক সংগঠনের সতীশ সিনহা বলেন, ‘‘পরিমাণ বেড়েই চলেছে৷ প্রতি বছর আমরা নতুন ধরনের বর্জ্য যোগ করছি৷ ফলে জঞ্জালের উপাদানও বদলে চলেছে৷ ব্যাটারি, সিএফএল বাতির মতো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো আলাদা পদ্ধতি আমাদের নেই৷ তাই মানুষকে উৎস অনুযায়ী বর্জ্য আলাদা করতে বাধ্য করা বা উৎসাহ দেওয়ার নানা উপায় খোঁজা হচ্ছে৷''

‘সোর্স সেগ্রিগেশন'-এর অর্থ, সবার আগে শক্ত ও তরল বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করা৷ ভারতের শহরগুলিতে সেটা এত কম করা হয় বলে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷ একই সঙ্গে ভারতের পৌর স্তরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকার স্থির করা আছে৷ তহবিলের সিংহভাগই শুধু বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহণে ব্যয় হয়৷ ফলে ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য সামান্য অর্থ অবশিষ্ট থাকে৷

যে সব শিল্পশাখা বিশাল পরিমাণ বর্জ্য সৃষ্টি করে, বলিউডও তার অন্যতম৷ সেট তৈরি থেকে শুরু করে অনেক মানুষের জন্য ক্যাটারিং সার্ভিস দৈনিক তিনবার খাদ্য সরবরাহের কারণে জঞ্জাল জমে যায়৷ সাধারণত সেগুলি ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয়৷ কিন্তু আজ ফিল্ম সেটে ব্যতিক্রমী কিছু ঘটছে৷ ওয়াইআরএফ প্রোডাকশনসের সার্থক শিণ্ডে জানান, ‘‘আমাদের মৌলিক টিমের কর্মীর সংখ্যা দেড়শোর মতো, যাঁরা প্রতিদিন সেটে থাকেন৷ এছাড়া দুই থেকে আড়াইশো অস্থায়ী কর্মীও যোগ দেন৷ প্রথমদিকে মানুষ এ বিষয়ে মাথা ঘামাতো না৷ বিষয়টি না বুঝলেও এখন মানুষকে কমপক্ষে বোঝানো হচ্ছে যে ময়লা ফেলার দুটি বিন রয়েছে, ফলে আলাদা করে ফেলতে হবে৷''

ভারতে আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় টক্সিক্স লিংক

দিব্যা রবিচন্দ্রন শুটিংয়ের সময়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানির মালিক৷ ২০১৭ সালে তিনি ‘স্ক্র্যাপ' নামের এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ দিব্যা বলেন, ‘‘এমন সাধারণ শুটিংয়ের ফলে ১৫ থেকে ৩০ হাজার কিলো বর্জ্য সৃষ্টি হতে পারে৷ প্রত্যেক মাসে গড়ে শুটিং-প্রতি আট থেকে দশ হাজার কিলো বর্জ্য দেখা যায়৷''

স্ক্র্যাপ কোম্পানির প্রথম প্রকল্প ছিল ‘উইকেন্ডার এনএইচসেভেন' সংগীত উৎসব৷ দুই দিনের এই কনসার্টে কোম্পানিটি সাত টনেরও বেশি বর্জ্য সামলেছে৷ প্রায় ৮০ শতাংশ বর্জ্য প্রসেস করা হয়েছে, যা সাধারণত ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয়৷ দিব্যা রবিচন্দ্রন বলেন, তিনি নিজে বছরে মাত্র ১০০ গ্রাম বর্জ্য সৃষ্টি করেন৷ ‘জিরো ওয়েস্ট' জীবনযাত্রাই তাঁর লক্ষ্য৷

‘জিরো ওয়েস্ট' এমন এক দর্শন, যার লক্ষ্য যত কম সম্ভব বর্জ্য সৃষ্টি করা৷ একেবারেই কোনো বর্জ্য সৃষ্টি না করা আদর্শ৷ এর প্রবক্তারা জীবনের সব ক্ষেত্রেই সেই দর্শন প্রয়োগ করতে চান – যেমন খাদ্যে বর্জ্য এড়িয়ে চলা, ভ্রমণের সময়ে যতটা সম্ভব কার্বন নির্গমন কমানো এবং ভাগাড় থেকে দূরে রাখতে জিনিসপত্রের পুনর্ব্যবহার ইত্যাদি৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দিব্যা রবিচন্দ্রন বলেন, ‘‘২০১৬ সালে মুম্বইয়ের দেওনার আবর্জনা ক্ষেত্রে বিশাল অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল৷ এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আগুন জ্বলেছিল৷ প্রথম বার আমি নিজের বাসার ময়লা ফেলার বিনের দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, এ সব জঞ্জাল কোথায় যায়৷ এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডই বা কী, সেখানে কেন আগুন লেগেছে?''

বর্জ্য কমাতে হলে একাধিক ক্ষেত্রে সমান্তরালভাবে চেষ্টা চালাতে হয়৷ পুরানো দিনের মতো কোনো বস্তুর পুনর্ব্যবহারের উপায় নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে৷ একমাত্র এভাবেই আমরা নিজেদের তৈরি বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো৷

শ্রীবাস্তব/চৌধুরী/রাজাগোপাল/এসবি