1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতীয়রা কেন বলকান রুট হয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন?

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সার্বিয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, গত কয়েক মাস ধরে অনেক ভারতীয় নাগরিক অবৈধ পদ্ধতিতে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন৷ 

https://p.dw.com/p/47con
Serbien Kikinda Migrantenlager
ছবি: Arafatul Islam/DW

সার্বিয়ার হাঙ্গেরি ও রোমানিয়া সীমান্তে অবস্থিত কিকিন্দা শহরের অভিবাসী শিবিরে প্রায় একশজন ভারতীয় রয়েছেন৷ জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তারা৷  

ক্যাম্পের কর্মকর্তা আন্দ্রেয়া মার্সেঙ্কো ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এ ক্যাম্পটিতে ৫৪০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে৷ তবে বর্তমানে এখানে আছেন মোট ৫৫০ জন আশ্রয়প্রার্থী৷ এর মধ্যে ৩৬০ জন বাংলাদেশি আর প্রায় একশজন ভারতীয় নাগরিক৷''  

এই কর্মকর্তার মতে, অভিবাসনের জন্য ভারতীয় নাগরিকদের এভাবে আসার বিষয়টি বেশ নতুন৷ গত কয়েক মাস ধরে এটি দেখা যাচ্ছে৷

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম কিকিন্দার এই ক্যাম্পটি পরিচালনা করছে৷ পরিদর্শনে দেখা গেছে, ক্যাম্পটিতে খেলাধুলার ব্যবস্থাও রয়েছে৷ দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনেকে আবার এখানে ক্রিকেটও খেলছেন৷

‘পুলিশের নির্যাতনের শিকার'

ভারতের পাঞ্জাবের হারজিন্দার কুমার কয়েক মাস আগে সার্বিয়া এসেছেন৷ মায়ের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে ঋণের চাপে পড়েন তিনি৷

‘‘একদিন ইউরোপের কোনো দেশে পৌঁছাবো এমন ইচ্ছা থেকেই আমি সার্বিয়ায় আসি৷ ইউরোপে পৌঁছানোর পর ঋণের সব টাকা পরিশোধ করার ইচ্ছা আমার৷’’

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে পৌঁছানোর চেষ্টা করে বেশ কয়েকবার ব্যার্থ হয়েছেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘অবৈধ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মানবপাচারকারীকে প্রায় দুই হাজার ডলার দিয়েছি৷ কিন্তু মনে হয় সার্বিয়াতে আটকে গেছি৷’’

হারজিন্দার কিকিন্দার ওই ক্যাম্পে বিরিয়ানি বিক্রি করেন৷ ‘‘আমি ও আমার বন্ধুরা এর মাধ্যমে পকেট খরচের টাকা জোগাড় করি৷''

শিবিরটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেল,অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনেকেই ক্যাম্পের মূল ভবনের ভেতরে থাকেন৷ কিন্তু ভারতীয়দের বেশিরভাগই  ক্যাম্পটির এক কোণায় অবস্থিত একটি সাদা তাঁবুতে বাস করছেন৷

কেন তারা এভাবে আলাদা বাস করছেন সে বিষয়ে কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ৷    

হারজিন্দ কুমারের মতো কয়েক মাস আগে সার্বিয়ায় এসেছেন ২৭ বছর বয়সের জাসবির সিং৷ নিজ দেশে চাকরি না পেয়ে অভিবাসনের চেষ্টা পাঞ্জাবের এ যুবকের৷ 

জাসবিরের দাবি, ইউরোপের দেশে পৌঁছাতে তিনি মানবপাচারকারীদের প্রায় ১২ হাজার ইউরো দিয়েছেন৷

তিনি জানান, সার্বিয়া থেকে অবৈধভাবে হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও ক্রোয়েশিয়া পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও সীমান্ত পুলিশের নজর এড়াতে না পারায় তিনি বার বার ব্যর্থ হয়েছেন৷ সেসময় সীমান্ত পুলিশের হাতে নাজেহাল হয়েছেন বলেও দাবি তার৷    

ডয়চে ভেলেক তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপের পুলিশ আমাদের প্রতি মোটেই শ্রদ্ধা দেখায় না৷ সীমান্তে চেক করার সময় তারা আমাদের মাথার পাগড়ি খুলে ফেলে এবং দাড়িতে ধরে টানা-হ্যাঁচড়া করে৷’’

‘‘তারা আমাদের কাপড়চোপড়ও খুলে ফেলে এবং ঠান্ডার মধ্যে হেঁটে হেঁটে সার্বিয়ায় ফেরত আসতে বাধ্য করে৷’’  

‘বলকান রুট' ধরে কেন আসছেন ভারতীয় অভিবাসনপ্রত্যাশীরা

২০১৫ ও ২০১৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার আশ্রয়প্রার্থী গ্রিস হয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশে আশ্রয় নেন৷ তাদের অনেকেই বসনিয়া এবং সার্বিয়া হয়ে ইউরোপের দেশ জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ ইউরোপের অভিবাসনের এ পথটি ‘বলকান রুট' নামে পরিচিত৷       

আর ২০১৭ সাল থেকে এ পথ ধরে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন৷

তবে ভারতীয়দের জন্য সার্বিয়া ইউরোপের এমন একটি দেশ, যেখানে তারা ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারে৷ আর এ কারণে এ পথ ধরে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা তাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে থাকে৷

ধারণা করা হচ্ছে, অভিবাসনের আশায় ভারতীয়দের অনেকেই সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে পৌঁছে সেখান থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে থাকে৷   

কিকিন্দার অভিবাসী ক্যাম্পের কমর্কর্তা আন্দ্রেয়া মার্সেঙ্কো বলেন, ভারত থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কেউ কেউ গ্রিসে থাকার চেষ্টা করেন৷ চলতি মাসের শুরুর দিকে উত্তর মেসিডোনিয়ার পুলিশ ১৬ জন ভারতীয়কে আটক করে৷ তারা গ্রিস সীমান্ত দিয়ে তারা ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন৷

জানা গছে, অনেক ভারতীয় অভিবাসনপ্রত্যাশী বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনা সীমান্ত পার হয়ে ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করে থাকেন, কেননা সার্বিয়া ও বসনিয়ার সীমান্ত অবৈধ পথে পাড়ি দেওয়া অনেক সহজ বলে মনে করেন তাদের কেউ কেউ৷   

এদিকে, বসনিয়ার বিহাচে অবস্থিত লিপা ক্যাম্পে কয়েক ডজন ভারতীয় অভিবাসনপ্রত্যাশী রয়েছেন৷ ইউরোপে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তারা বসনিয়া এসেছেন আর অর্থনৈতিক কারণেই তাদের ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা বলে জানান তারা৷   

লিপা ক্যাম্পে অবস্থানরত ভারতীয় অভিবাসনপ্রত্যাশী ভুপিন্দর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত মাসে আমি দুইবার ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছি৷ কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার সীমান্ত পুলিশের কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশে পৌঁছাতে পারিনি৷’’ 

ভুপিন্দর জানান, অভিবাসনের এ চেষ্টায় তিনি কোনো মানবপাচারকারীকে টাকা দেননি৷ বরং গুগল ম্যাপের সহযোগিতায় গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি৷

তবে বলকানের এই পথ ধরে অবৈধভাবে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা নিরাপদ নয় বলে জানান তিনি৷ ‘‘ভারতে যদি আমার একটি চাকরি থাকতো, তাহলে আমি এভাবে বসনিয়া আসতাম না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য