1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভাগ্য বদলাতে প্রাণ হারালেন বাবা-মেয়ে

২৭ জুন ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে রিও গ্র্যান্ড নদীর তীরে পড়ে আছে বাবা আর মেয়ের প্রাণহীন দেহ৷ দুই বছরের শিশুটির হাত তখনো জড়িয়ে ধরে আছে বাবার গলা৷ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে কতটা ঝুঁকি নিতে হয়, এ যেন তারই প্রতিচ্ছবি৷

https://p.dw.com/p/3LBvS
Mexico US Border Migrant Deaths
ছবি: picture alliance/AP Photo

এর আগে আয়লান কুর্দির ছবিও নাড়া দিয়েছিল বিশ্ব বিবেককে৷ সারা বিশ্বের মানুষ মানবিক পৃথিবীর কথা বললেন৷ কিন্তু অসহায় মানুষের কথা না ভেবে, সীমান্ত সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে দুনিয়ার সব দেশ৷ ফলে, সীমান্তে মৃত্যুর মিছিল থামেনি৷ আর এসব ঘটনার পরিণতি এমন হয়েছে যে, গীর্জার ঘণ্টা বাজার মতো শব্দ তুলে, মুহূর্তেই নীরব হয়ে পড়ছে সব৷

মেক্সিকো আর যুক্তরাষ্ট্রকে ভাগ করেছে, রিও গ্র্যান্ড নদী৷ আর সেটি পাড়ি দিলেই স্বপ্নের অ্যামেরিকা৷ তাই দুই বছরের কন্যা ভ্যালেরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে, অনিশ্চিত জীবনে পা বাড়িয়েছিলেন ২৫ বছর বয়সী পিতা মার্টিনেজ রামিরেজ৷ নদী পাড়ি দিতে গিয়ে বরণ করতে হলো মৃত্যু৷ মা তানিয়া ভানেসা অ্যাভলোসও নদীর পাড়ি দেয়ার ঝুঁকিটা নিয়েছেন, শুধু প্রাণেই বেঁচেছেন!

মেক্সিকোর দৈনিক লা জরনাডার সাংবাদিক জুলিয়া লা ডুকের ক্যামেরায় ধরা পড়ে মর্মান্তিক এই ছবিটি৷ পত্রিকাটি লিখেছে, গুয়েতেমালা সীমান্ত দিয়ে মানবিক কারণে পাওয়া দুই মাস মেয়াদি ভিসা নিয়ে আল সালভাদর থেকে মেক্সিকো পাড়ি জমান নিহত রামিরেজের পরিবার৷ রোববার যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী মেক্সিকান শহর মাটামোরজে আশ্রয়ের আবেদন জানাতে আসেন তারা৷ কিন্তু রোববার বলে সেদিন বন্ধ ছিল অফিস৷ উপায়ন্তর না দেখে, নিশ্চিত ঝুঁকি জেনেও পায়ে হেঁটে, নদী সাঁতরে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করেন রামিরেজ ও তার শিশু কন্যা৷

প্রথমে মেয়েকে নিয়ে নদী সাঁতরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রান্তে আসেন রামিরেজ৷ মেয়েকে তীরে রেখে, স্ত্রীকে সহযোগিতা করতে আবারো মেক্সিকো প্রান্তে আসেন৷ কিন্তু এ ফাঁকে মেয়ে নদীতে লাফিয়ে পড়লে, দ্রুত মেয়ের কাছে ছুটে যান রামিরেজ৷ শেষ রক্ষা হয়েই গেছিল প্রায়, কিন্তু তীব্র স্রোতের সঙ্গে পেরে উঠেননি অসহায় বাবা৷

আল সালভাদরে শোক

ঘটনায় শোক জানিয়েছেন আল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইয়িব বুকেলে৷ মৃতদেহ ফিরিয়ে এনে সৎকারের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে৷

এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ‘‘একদিন সবাই মিলে এমন এক রাষ্ট্র বানানো হবে, যেখানে অভিবাসন হবে একটা সুযোগ, প্রতিবন্ধকতা নয়৷''

তিনি স্বীকার করেন, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান আর সুযোগের অভাব ও অসমতার কারণে লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমানা পাড়ি দিতে চায়৷

এক সংবাদ সম্মেলনে অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি নিয়ে এমন পরিণতি যাতে ভোগ করতে না হয়, সেজন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্দ্রা হিল৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘২০ বছর ধরে চলে আসা অভিবাসনের এই প্রক্রিয়া দু্ই সপ্তাহের ব্যবধানে বন্ধ করা যায় না৷ তবে এই সংকট নিরসনে, মেক্সিকান সরকার ও মার্কিন কংগ্রেস নিবিড়ভাবে কাজ করছে আল সালভাদর৷''

সোমবার এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওবারডোর৷ অবৈধ অভিবাসন প্রসঙ্গে সতর্কও করেছেন তিনি৷ অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি বন্ধে কর্তৃপক্ষ যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারপরও এমন চেষ্টা অনৈতিক, বললেন মেক্সিকান রাষ্ট্রপ্রধান৷

অবৈধ অভিবাসনের এই চেষ্টা বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে এ প্রক্রিয়ার আসল কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে৷

মৃত্যুফাঁদ

যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকো সীমান্তের বেশিরভাগ অংশে আছে মরুভূমি আর রিও গ্র্যান্ড নদী৷ বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী তীব্র স্রোতের এই নদী পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷

যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্র্রোটেকশনের(সিবিপি) তথ্য মতে, ২০১৮ সালেই সীমান্ত পাড়ি দিতে প্রাণ হারিয়েছে ২৮৩ জন৷ তবে এটা প্রকৃত চিত্র না৷ কারণ, শুধু নিজেদের অংশে মৃতের হিসেব রাখে সিবিপি৷ আইওএম বলছে, গেল বছর এই দুই দেশের সীমান্তে মৃতের সংখ্যা ৪৪৪৷

আইওএম-এর নিখোঁজ অভিবাসী প্রকল্পের কর্মকর্তা কেইট ডিয়ারডেন বলছেন, এ বছেরর যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে ১৩ কন্যাশিশু প্রাণ হারিয়েছে৷ সারা বিশ্বের হিসেব সীমান্তে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ৭৩৷

জেনিফার ক্যামিনো গঞ্জালেস/টিএম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য