1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভাইরাস শনাক্তে ‘কার্যকর নয়’ গণস্বাস্থ্যের কিট

১৭ জুন ২০২০

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট কিট’ রক্তে অ্যান্টিবডি চিনতে পারলেও অ্যান্টিজেন চিনতে পারে না৷

https://p.dw.com/p/3dv29
প্রতীকী ছবিছবি: bdnews24

তাই সংক্রমণের প্রথমভাগে করোনা ভাইরাস শনাক্তে এ কিট ‘কার্যকর নয়’ বলে প্রতিবেদন দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মূল্যায়ন কমিটি৷

কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য গঠিত পারফরম্যান্স কমিটির প্রধান অধ্যাপক শাহীনা তাবাসসুম বুধবার দুপুরে উপাচার্যের কাছে তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেন৷

প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া এক সংবাদ সম্মেলন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷

তিনি বলেন, ‘‘এই কিট উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের রোগ শনাক্তে কার্যকর নয়৷ উপসর্গের প্রথম দুই সপ্তাহে এই কিট ব্যবহার করে শুধুমাত্র ১১ থেকে ৪০ শতাংশ রোগীর রোগ শনাক্ত করা সম্ভব৷’’

পারফরম্যান্স কমিটি গণস্বাস্থ্যের ৫০৯টি র‌্যাপিড কিট পরীক্ষা করে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন জানিয়ে উপাচার্য  আরো বলেন, এই কিট অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে পারলেও আইজিএম (ইমিউনোগ্লোবিন এম, যা ইনফেকশনের শুরুতে তৈরি হয়) এবং আইজিজি (ইমিউনোগ্লোবিন জি, ইনফেকশনের বিলম্বিত পর্যায়ে তৈরি হয়) তা আলাদাভাবে পার্থক্য করতে পারে না৷

তবে কোভিড-১৯ এর বিস্তার বোঝার জন্য এ কিট ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত দেন তিনি৷ বলেন, এর মাধ্যমে ৭০ শতাংশ রোগী, যাদের ইতোপূর্বে কোভিড-১৯ হয়েছিল, তাদের শনাক্ত করা সম্ভব৷ যার মাধ্যমে প্লাজমা বিতরণ, কোয়ারান্টিন সমাপ্তির সময় নির্ধারণ এবং লকডাউনের রূপরেখা তৈরি করা যেতে পারে৷

গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান বিজ্ঞানী বিজন কুমাল শীল ওই কিট তৈরি করেছেন৷ তিনি বিএসএমএমইউ-র বিস্তারিত প্রতিবেদন এখনো হাতে পাননি জানিয়ে বলেন, ‘‘প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বিশ্লেষণ করে দেখব কিসের ভিত্তিতে তারা কিট অকার্যকর বলছেন৷’’

করোনা ভাইরাস শনাক্তে বিশ্বে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতির নাম রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটিপিসিআর)৷ বাংলাদেশে এখন কেবল এ পদ্ধতিতেই পরীক্ষার অনুমতি রয়েছে৷

এ পদ্ধতিতে পরীক্ষার জন্য নমুনা হিসেবে রোগীর লালা, শ্লেষ্মা বা কফ নেওয়া হয় এবং ভাইরাস আছে কিনা তা বুঝতে ব্যবহার করতে হয় বিশেষ রি-এজেন্ট৷ পিসিআর পরীক্ষার কিটকে বলা হয় পিসিআর প্রাইমারি প্রোব রি-এজেন্ট৷ রোগীর নমুনায় করোনা ভাইরাসের জিনোম বৈশিষ্ট্যের কোনো জেনেটিক বিন্যাস পাওয়া গেলে ফলাফল আসবে ‘পজিটিভ’৷ পরীক্ষাটি করতে সময় লাগে দুই ঘণ্টার বেশি৷ তাছাড়া ব্যয়বহুল আরটি-পিসিআর ব্যবহারে দক্ষ জনবল প্রয়োজন হয়৷

সে কারণে স্বল্প সময়ে অল্প খরচে ফল দিতে পারে-এমন কিট তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে৷ একে বলা হয় র‌্যাপিড টেস্টিং কিট৷ বাংলাদেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটও এ ধরনের কিট। এই কিটে পরীক্ষার জন্য নমুনা হিসেবে রোগীর রক্ত ব্যবহার করা হয়৷ ভাইরাস নয়, এই কিট দিয়ে আসলে শনাক্ত করা হয় অ্যান্টিবডি৷ অবশ্য গণস্বাস্থ্যের দাবি, তাদের কিট অ্যান্টিজেনও শনাক্ত করে৷

কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পাঁচ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে৷ ফলে, অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার আগে র‌্যাপিড কিটে নমুনা পরীক্ষা করা হলে ফলাফল নেগেটিভ হবে৷ অর্থাৎ, শরীরে ভাইরাস থাকলেও এই পরীক্ষায় তা ধরা পড়বে না৷ আবার কেউ আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও তার রক্তে অ্যান্টিবডি থেকে যাবে৷ ফলে তার শরীরে ভাইরাস না থাকলেও র‌্যাপিড কিটের টেস্টে ফলাফল পজিটিভ আসবে৷

বিশ্বের অনেক দেশেই বিশেষজ্ঞরা র‌্যাপিড কিট ব্যবহারের এই বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে আসছেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ওপর নির্ভর না করার পরামর্শ দিয়েছে৷

এসএনএল/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)