1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভর্তিতে বয়স কেন বাধা হবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ জুলাই ২০২২

বাংলাদেশে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়স বেঁধে দেয়া আছে৷ উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও এটি নির্ধারণ করা আছে৷ শিক্ষামন্ত্রী মনে করেন ভর্তিতে বয়সের বাধা থাকা উচিত নয়৷ আর বিশ্লেষকেরা পুরোপুরি একমত নন৷

https://p.dw.com/p/4ETDC
Bangladesch 2019 | Besuch Bildungsminister Dipu Moni
ফাইল ফটোছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com

তীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হলে ছয় বছরের বেশি বয়স হতে হবে৷ পরে এটা আরো সংশোধন করে  নবম শ্রেণি পর্যন্ত বয়স বেঁধে দেয়া হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে৷ সেই অনুযায়ী দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য বয়স সাত বছরের বেশি, তৃতীয় শ্রেণিতে  আট বছরের বেশি, ষষ্ঠ শ্রেণিতে  ১১ বছরের বেশি, সপ্তম শ্রেণিতে  ১২, অষ্টম শ্রেণিতে ১৩ ও নবম শ্রেণিতে ভর্তির ন্যূনতম বয়স ১৪ বছর বেঁধে দিয়েছে সরকার৷

এই নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বিদ্যালয়গুলো নির্ধারণ করবে৷ প্রচলিতভাবে স্কুলগুলো সর্বনিম্ন বয়সের সাথে এক থেকে দেড় বছর যোগ করে ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে৷

অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তির জন্য বয়স সীমা বলে দেয়া না হলেও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্যই ভর্তির সুযোগ থাকে৷ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পাস করার পরের ভর্তি পরীক্ষায়ই অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে৷ কোনো কোনো  বিশ্ববিদ্যালয়ে  দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থাকলেও অনেক  বিশ্ববিদ্যালয়ে   দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ারও সুযোগ নেই৷ এ বিষয়ে  বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যার যার মতো সিদ্ধান্ত নেয়৷ তবে দুইবারের বেশি ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ কোথাও নেই৷

ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ

শিক্ষামন্ত্রী যা ভাবেন

এই পরিস্থিতিতে  শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেক কিছু করার আছে৷ সারা বিশ্ব যখন সুযোগ অবারিত করার কথা বলছে সবকিছুতে, যখন জীবনব্যাপী শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে, তখন সব জায়গায় দেয়াল তোলা হচ্ছে কেন? কেন বলা হচ্ছে, এই বয়সের পর আর ভর্তি হতে পারবে না? কেন বলা হচ্ছে, একবারের পর আর ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে না? কেন বলা হচ্ছে, এ ধরনের পড়ার পর আর ওই ধরনের পড়ায় যেতে পারবে না? এটি বোধগম্য নয়৷ আজকে কেউ আইন নিয়ে পড়ছেন, তিনি কেন কাল ইঞ্জিনিয়ার বা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন না? যেকোনো শিক্ষায় যাওয়ার সুযোগটি অবারিত হতে হবে৷''

তিনি উচ্চ শিক্ষায় আরো বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পনা তৈরির আহ্বান জানান৷

বিশ্লেষকেরা যা মনে করেন

ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন শিক্ষামন্ত্রীর কথা শিক্ষার আদর্শগত জায়গা থেকে ঠিক আছে৷ শিক্ষার যেমন কোনো বয়স নেই৷ তেমনি ভর্তিরও কোনো বয়স থাকা উচিত নয়৷ তবে এটা প্রাথমিকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিকে ভর্তির জন্য একটি বয়সসীমা থাকা দরকার৷ কিন্তু সেটা যেন এখনকার চেয়ে আরো শিথিল করা হয়৷ ছয় থেকে সাত বছরের মথ্যে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতেই হবে এরকম যেন না হয়৷ এই বয়স সীমা আরো বাড়িয়ে দিয়ে আরো একটু সহজ করা দরকার৷ নানা কারণে কোনো শিশু ওই বয়সে  স্কুলে ভর্তি নাও হতে পারে৷ তবে খেয়াল রাখতে হবে একই শ্রেণিতে আবার  বয়সের পার্থক্য যেন খুব বেশি না হয়। তবে প্রাথমিকে  সর্বনিম্ন বয়স সীমা থাকতে হবে৷ তা না হলে শিশুদের খুব অল্প বয়সে স্কুলে পাঠানোর প্রবণতা তৈরি হতে পারে যা তাদের জন্য ক্ষতিকর৷ কিন্তু উচ্চ শিক্ষার জন্য, যেখানে সবাই প্রাপ্তবয়স্ক সেখানে বয়স সীমা থাকার দরকার নেই৷''

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান

তিনি বলেন, ‘‘কেউ এইচএসসি পাশ করে পাঁচ বছর চাকরি করতে পারেন৷ তারপর তিনি উচ্চ শিক্ষা শুরু করতে পারেন৷ তাকে কেন সুযোগ দেয়া হবেনা? আবার কতবার ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন তা নির্ধারণ করাও ঠিক না৷ হয়তো আমরা টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এখন একবার এবং সর্বোচ্চ দুইবার সুযোগ দিচ্ছি৷ কিন্তু এই সুযোগ অবারিত থাকা উচিত৷''

তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাজ্য এবং অষ্ট্রেলিয়ায় এই বয়স সীমা নেই৷ অন্যদেশে থাকলেও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক দেশেই নেই৷ আবার অনেক দেশ আছে যেখানে স্কুলে পড়তেই হবে তা বাধ্যতামূলক নয়৷ শিক্ষার্থী তার মত করে পড়াশুনা করে সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন৷''

শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ মনে করেন, ‘‘প্রাথমিকে একই ধরনের বয়সের শিক্ষার্থী না হলে পড়াশুনা করানো সমস্যা৷ মানসিক দিকে দিয়েও শিশুদের সমস্যা হয়৷ আর উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে বয়স বা সময়ের বাধা না থাকলে অসম প্রতিযোগিতা হবে৷ একজন পাঁচ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন৷ আরেকজন উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর দুই-তিন মাস সময় পাবেন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য৷ তাহলে তো হয় না৷''

তার কথা, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে অবশ্য বয়সের বা  উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তির ব্যাপারে কড়াকড়ি কোনো নিয়ম নাই৷ যেকোনে বয়সে ভর্তি হতে পারেন৷ কিন্তু তাদের তো সম্পদ আছে৷ শিক্ষা অবকাঠামো আছে৷ সবাইকে তারা সুযোগ দিতে পারে৷ আমাদের তো সেই অবকাঠামো ও সম্পদ নাই৷''

তবে তার বিকল্প প্রস্তাব হলো, ‘‘যদি কেউ উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর বিরতি দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হতে চান তাহলে বছর হিসেব করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নম্বর কেটে নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়া যেতে পারে৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমানের কথাও একই রকম৷ তার কথা, ‘‘প্রথম শ্রেণিতে একটি ছয় বছরের বাচ্চা এবং একটি ১০ বছরের বাচ্চা একই সঙ্গে পড়াশুনা করলে নানা ধরনের সমস্যা হয়৷ আর  বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য৷ যদি এটা তুলে দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে নিয়মিত ছাত্রদের  সুযোগ কমে যাবে৷''

তিনি মনে করেন, ‘‘যারা বেশি বয়সে পড়াশুনা করবেন৷ অনিয়মিতভাবে উচ্চশিক্ষা নেবেন তাদের জন্য এখন ওপেন ইউনিভার্সিটি আছে৷ এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে আরো বাড়ানো যেতে পারে৷ সবাইকে যে কোনো বয়সে শিক্ষার সুযোগ দিতে হলে সেইভাবে অবকাঠামো ও শিক্ষক তৈরি করতে হবে৷''

মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘এটা অনলাইনেও হতে পারে৷ আর এখনকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অবকাঠামো ও শিক্ষক বাড়িয়ে আলাদা কোর্স চালু করতে পারে৷'‘

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য