ভবিষ্যতের হাতছানিতে পলাতক শিশুরা...
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ...৷ চারিদিকে যুদ্ধ-বিগ্রহ, দাঙ্গা৷ এর হাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষত-বিক্ষত ফুলের মতো শিশুরা৷ শুধু এশিয়া-আফ্রিকার শরণার্থী শিবির নয়, ইউরোপ অভিমুখী শিশুদেরও তাই স্বপ্ন – একটা ছাদ, পেট ভরা খাবার৷
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস বারবারই ইরাকের উত্তরে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালিয়েছে৷ শ্লীলতাহানি করেছে অসংখ্য নারীর৷ এর ফলে একদিকে যেমন আইএস-এর নৈরাশ্যবাদী পুরুষতান্ত্রিক চরিত্র ফুটে উঠেছে, তেমনি হাজারো ইয়াজিদি বাধ্য হয়েছেন নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়তে৷ ছবিতে ইরাক-তুরস্ক সীমান্তের অদূরে ‘সিলোপি’ ক্যাম্পে এমনই এক ঘরছাড়া শিশু৷ চোখে তার স্বপ্নহীন এক ভবিষ্যতের কালো ছায়া৷
স্কুলেই ঘর, বিছানা-বালিশ
শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েছে জার্মানির সাধারণ মানুষ৷ ম্যার্কেল সরকারের উদার নীতি প্রশংসাও কুড়িয়েছে৷ কিন্তু প্রতিদিনের বেড়ে চলা ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে জার্মানি৷ শরণার্থী শিবিরগুলোতে আজ আর তিল ধারণের জায়গা নেই৷ বাভারিয়া রাজ্যের নয়স্টাট শহরের একটি স্কুলে আজ আর পড়াশোনা হচ্ছে না৷ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন পরিণত হয়েছে একটি শরণার্তী শিবিরে, যেখানে ছোট্ট এই শিশুটিকেও থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন৷
‘নো ম্যান’স ল্যান্ড’
গ্রিস আর ম্যাসিডোনিয়ার সীমান্ত বরাবর গত কয়েক মাস যাবৎ বহু মানুষের ভিড়৷ উদ্দেশ্য একটাই – সীমানা পেরিয়ে কোনোরকমে প্রথমে সার্বিয়া, তারপর হাঙ্গেরিতে পৌঁছানো৷ ইউরোপে ঢোকার অন্য কোনো পথ যে তাঁদের জন্য খোলা নেই৷ ছবির এই মেয়েটিও সেই দঙ্গলের একজন৷ তবে সীমান্তে বসবাস করলেও, এখনও হাসতে ভোলেনি সে৷ অবশ্য এভাবে চললে অচিরেই হয়ত হাসি আর অটুট থাকবে না তার৷
কু-ঝিক-ঝিক
হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট থেকে জার্মানির মিউনিখগামী একটা ট্রেন৷ বলকান রুট ধরে হাঙ্গেরির মধ্য দিয়ে ইউরোপে সফর, যদিও ইতিমধ্যেই তাদের সীমান্তে তালা লাগিয়েছে বুদাপেস্ট৷ ট্রেনে অসম্ভব ভিড়৷ কিন্তু তারমধ্যেই ঘুমে কাতর শরণার্থী-সন্তানেরা৷ ট্রেনের সেই কু-ঝিক-ঝিক আওয়াজ আজ আর তাদের কানে স্বপ্নের মতো বাজে না, যেমন বাজতো ‘পথের পাঁচালী’-র দূর্গা বা অপুর৷ এ ট্রেন এমন সর্বহারাদের জীবনে যেন সর্বগ্রাসী৷
রণাঙ্গন থেকে পালিয়ে
ইয়েমেনের শিয়াপন্থি হুতি বিদ্রোহীদের দমনে সৌদি আরবের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি দেশ অভিযান শুরু করেছিল এ বছরের শুরুতে৷ এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ৷ কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি৷ আজও সেখানে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে হুতিরা, যার শিকার নিরস্ত্র, নিষ্পাপ, অবুঝ শিশুরাও৷
যেন সারিবদ্ধ ভিখারি
হিংসা ও নিপীড়ন, ক্ষুধা ও রোগব্যাধী – সিরিয়া ও ইরাকে গৃহযুদ্ধের ফলে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ শিশুর জীবন আজ দুর্বিসহ৷ সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এ দুই দেশের শিশুদের পাশে দাঁড়াচ্ছে ইউনিসেফ৷ আন্তর্জাতিক ত্রাণ না পেলে সিরিয়ার বহু মানুষই হয়তো এতদিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত৷ ছবিতে ইদলিব শহরে ঘরহারাদের তাঁবু৷ আর সেখানে একমুঠো ভাতের জন্য অপেক্ষা করছে শিশুরা৷ নিজ দেশেই তারা যেন ভিখারি!
পরিবাহন ব্যবস্থার ফ্যাসাদ
শরণার্থী সমস্যা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপ৷ আবার সদ্য জার্মানিতে আসা মানুষগুলোকেও মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানারকম সমস্যার৷ তার মধ্যে একটা হলো মেশিনে বাস-ট্রাম-ট্রেনের টিকিট কাটা৷ ছবিতে স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে৷ শরণার্থী শিশুদের তিনি নিজেই শিখিয়ে দিচ্ছেন সেই মেশিন ব্যবহারের নিয়মকানুন৷
‘ট্রানজিট’ বৈ তো নয়!
এশিয়া বা আফ্রিকা থেকে উদ্বাস্তুদের ইউরোপে আসার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়৷ ডিঙি নৌকা বা জাহাজে করে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে প্রথমে ইটালি, তারপর ইউরোপের অন্যান্য কোনো দেশে যাওয়াই এঁদের মূল লক্ষ্য৷ এ বছরও প্রায় ১ লক্ষ ২১ হাজার মানুষ এভাবেই পৌঁছেছে ইউরোপে৷ দুর্গম এ যাত্রায় মৃত্যুও হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬০০ মানুষের৷ ছবির শিশুটির কাছেও এই লাম্পেডুসা দ্বীপ ‘ট্রানজিট’ বা মধ্যবর্তী একটি অবস্থান ছাড়া আর কিছুই নয়৷
স্বপ্ন জোগাচ্ছে স্কুল
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা যেন বেড়েই চলেছে৷ শুধু বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নয়, এই সংকটের প্রভাব পড়ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও৷ তবে এ সবের মধ্যেও আশার আলো ধরে আছে শিশুরা৷ মিয়ানমারে অবস্থিত ‘খেত কেল পিন’ নামের এই শরণার্থী শিবিরে ছোট ছোট শিশুদের জন্য খোলা হয়েছে স্কুল৷ হাজারো রোহিঙ্গা মুসলমানের বাড়ি আজ এই শিবির৷ আজ এটাই তাঁদের ঘর-বাড়ি, বেড়ে ওঠার জায়গা৷
ভয়াবহ বর্তমান, প্রশ্নবিদ্ধ ভবিষ্যৎ
কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আজও এলআরএ বিদ্রোহীদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে নারী, শিশু৷ ওদিকে নাইজেরিয়ার উত্তরে জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের নিয়ন্ত্রণ থেকে এখনও মুক্তি পায়নি সাধারণ মানুষ৷ তাই দেশ ছেড়ে দিশাহীন পথে পাড়ি জমিয়েছে মানুষ৷ আর এদিকে অভুক্ত শিশুদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউনিসেফ, চেষ্টা করছে বর্তমানের ভয়াবহতা একটু হলেও দূর করতে৷