1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বয়সের পরিমাপ ও রহস্য উন্মোচনে নতুন গবেষণা

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বয়স বাড়া নিয়ে অনেকের মনে হতাশা, আশঙ্কার মতো অনুভূতি সৃষ্টি হয়৷ সেই প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজার ও শরীরে বয়সের পরিমাপের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন এক বিজ্ঞানী৷

https://p.dw.com/p/34ybp
freiwillige Arbeit in Russland
ছবি: picture-alliance/dpa

লস এঞ্জেলেস শহরের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-স্ট্যাটিস্টিশিয়ান স্টিভ হর্ভাট বেশ কয়েক বছর ধরে মানুষের শারীরিক বয়স পরিমাপের পদ্ধতির খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বয়স কেন বাড়ে, তা জানার ইচ্ছা আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়৷ সেটা কী এবং চিকিৎসা বা ওষুধের মাধ্যমে তাতে কীভাবে হস্তক্ষেপ করা যায়, তা অবশ্যই জানতে চাই৷ এভাবে বার্ধক্যের প্রক্রিয়ার গতি কমাতে চাই৷ বার্ধক্য সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার পরিমাপ অন্যতম প্রধান বাধা ছিল৷ আগে অনেকে দাবি করতেন, অমুক ট্যাবলেট খেলে তারুণ্য ধরে রাখা যায়৷ কিন্তু তা যাচাই বা পরীক্ষা করার কোনো উপায় ছিল না৷''

বেশ কিছুকাল ধরে বার্ধক্য সংক্রান্ত গবেষকদের ধারণা ছিল, যে ক্রোমোজোমের প্রান্তে টেলোমেরেস পরীক্ষা করেই মানুষের বয়স মাপা সম্ভব৷ কিন্তু দেখা গেছে, সেই পরীক্ষা মোটেই উপযুক্ত নয়৷ ভুলের মাত্রা ১৫ বছর কম বা বেশি থাকতো৷

হর্ভাট কাকতালীয়ভাবেই সঠিক পথে অগ্রসর হয়েছিলেন৷ এক সহকর্মীর অনুরোধে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ডিএনএ-র মধ্যে সমকামিতার চিহ্ন খুঁজছিলেন৷ এই কাজে তিনি তথাকথিত ‘এপি মার্ক'-এর প্রতি মনোযোগ দেন৷ সেগুলি ডিএনএ-র নির্দিষ্ট কিছু অংশে যুক্ত বা বিযুক্ত হতে পারে৷

কোন কোন অংশে এপি-মার্ক যুক্ত রয়েছে, কোথায় নেই – হর্ভাট হাজার হাজার কোষ পরীক্ষা করে তা নথিভুক্ত করেন৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে তিনি সমকামিতার ইঙ্গিত খুঁজেছেন৷ কিন্তু তথ্যের মধ্যে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি৷ তারপর তিনি বয়সের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজতে সেই তথ্য আবার বিশ্লেষণ করেন৷ আচমকা তিনি সেই যোগসূত্র খুঁজে পেলেন৷ স্টিভ বলেন, ‘‘আমি প্রায় পড়ে যাচ্ছিলাম৷ কারণ, এত বড় সংকেত রয়েছে, যে বিশ্বাসই হচ্ছিলো না৷ এই সব এপিজেনেটিক তথ্যের উপর বয়সের বিশাল প্রভাব রয়েছে৷''

হর্ভাট আবিষ্কার করলেন যে, বয়স অনুযায়ী ডিএনএ-র মধ্যে এপি-মার্ক বদলে যায়৷ তিনি ডিএনএ-র মধ্যে এমন কিছু জায়গা চিহ্নিত করলেন, যা বয়স নির্ধারণের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত৷ সেই সব জায়গায় ছাপ বা চিহ্নের বিন্যাস অত্যন্ত সমান থাকে৷ বালুর ঘড়ির মতো এ ক্ষেত্রেও তিনি এপি-মার্ক বিশ্লেষণ করতে পারলেন৷

হর্ভাট এমন ৩৬৩টি এপিজেনেটিক বালুর ঘড়ি খুঁজে পেয়েছেন৷ সেগুলির গড় নির্ণয় করে মানুষের বয়স জানা সম্ভব৷ ভুলভ্রান্তির সম্ভাবনার পরিসর সর্বোচ্চ ৩ বছর ৫ মাস৷ হর্ভাট তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও কোনো বৈজ্ঞানিক পত্রিকা তাঁর আবিষ্কারের খবর ছাপতে প্রস্তুত ছিল না৷ সেই ঘড়ির কথা বিশ্বাস করতে তাঁদের সম্ভবত সমস্যা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সেখানে গিয়ে বললাম, বয়স পরিমাপের মানদণ্ড খুঁজে পেয়েছি৷ যে কোনো কোষের উপর তা প্রয়োগ করা সম্ভব৷ এবং ফর্মুলাও হুবহু এক৷ মনে হলো আমি যেন কাল্পনিক ইউনিকর্ন বা একশৃঙ্গ জন্তুর বর্ণনা দিয়েছি এবং প্রাণিবিদ বলছেন, এমন কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই, চলে যান৷''

হর্ভাট দমে যাবার পাত্র নন৷ অবশেষে তিনি প্রকাশককে বোঝাতে পেরেছিলেন৷ ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক লেখাটি প্রকাশিত হয়৷ ফলে বৈজ্ঞানিক জগতে আলোড়ন পড়ে যায়৷ স্টিভ হর্ভাট বলেন, ‘‘ঘড়ি দিয়ে শুরু হলো৷ কোনো অণু, কোনো জিন এই মুহূর্তে প্রভাব খাটাচ্ছে কিনা, এই ঘড়ি ব্যবহার করে তা বিচার করাই আমাদের লক্ষ্য৷''

আমাদের বয়স বাড়ার রহস্যের এখনো কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি বটে, কিন্তু তার উপর থেকে প্রথম যবনিকা উঠে গেছে৷