1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজকঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র

বয়স ১১০ হলেও সরকারি চাকরিতে অবসর মেলে না যেখানে

২৭ মার্চ ২০২২

কারো বয়স সত্তর পেরিয়েছে, কারো বা পেরিয়েছে শত বছর, তারপরও তারা অবসরে যাওয়ার সুযোগ পান না৷ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে এমন অনেকে আছেন যাদের আমৃত্যু সরকারি চাকরি করে যেতে হয়৷

https://p.dw.com/p/495gW
ছবি: Ute Grabowsky/photothek/imago images

চাকরিটা ভালোবেসেই নিয়েছিলেন বায়ার্ড কুমবিম্বা দিউবা৷ কিন্তু সেই চাকরি যে আর তাকে ছাড়বে না, তা ভাবেননি৷ বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন, কানে শুনতে পান না ঠিকমতো৷ তবুও ৮৪ বছর বয়সি দিউবা লুবুমবাসি শহরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন নিয়মিত৷ ‘‘আমি ১৯৬৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষকতা শুরু করি৷ এই চাকরি আমি নিজেই বেছে নিয়েছি৷ কিন্তু এখন আমি সামর্থের শেষ প্রান্তে'', বলছিলেন তিনি৷ তারপরও অবসর কেন নিচ্ছেন না? এমন প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘‘আমি ছাড়তে চাই৷ কিন্তু খালি হাতে নয়৷ আমার যা প্রাপ্য সেটা আমি চাই৷''

শিক্ষক দিউবার চাওয়া খুব বেশি নয়, সম্মানের সঙ্গে একটু অবসর৷ তার হিসাবে সেটি যথাযথ হবে, যদি এককালীন ত্রিশ হাজার ডলার আর নিয়মিত অবসর ভাতা দেয়া হয় তাকে৷ কিন্তু এই চাওয়া দেশটির অনেক শিক্ষক আর প্রশাসনিক কর্মীরই অধরা হয়ে আছে৷ যদিও ২০১৬ সালে এই সংক্রান্ত একটি আইন করা হয়েছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে৷ সেখানে বলা হয়েছে, যাদের বয়স ৬৫ বছর বা যারা ৩৫ বছরের চাকরি জীবন অতিক্রম করেছেন, তারা অবসরের জন্য বিবেচিত হবেন৷

কিন্তু দিউবাদের কথা সরকার ভুলে গেছে৷ মাসে মাত্র ১৮৫ ডলার বেতনে তার মতো শিক্ষককে এই বয়সেও অবসরের আশায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়িয়ে যেতে হচ্ছে৷ আরেকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফ্রান্সিসি ইউম্বা মিটওয়েলেরও একই অবস্থা৷ ৭৮ বছর বয়সি এই শিক্ষিকা চাকরিতে প্রবেশ করেন ১৯৬২ সালে৷ একসময় উদ্যম থাকলেও এখন ক্লান্ত তিনি৷ তারপরও চাকরি চালিয়ে যাচ্ছেন ‘বিদায়কালীন ভাতা' পাওয়ার আশাতে৷ তার আশা, সরকার তাকে প্রাপ্য ২৫ হাজার ডলার দেবে, যা দিয়ে সন্তানদের জন্য চলনসই একটা বাড়ি বন্দোবস্ত করা যাবে৷

গত সেপ্টেম্বরে দেশটির জনসেবামন্ত্রী জ্যা পিয়েরে লিহাউ জানিয়েছিলেন, সাড়ে তিন লাখ সরকারি চাকরিজীবী অবসরকালীন বয়সে রয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ১৪ হাজার জনের বয়স নব্বইয়ের উপরে৷ এমনকি ২৫৬ জন আছেন শতবর্ষী৷ আছেন সর্বোচ্চ ১১০ বছর বয়সি চাকরিজীবীও৷ পর্যায়ক্রমে তাদের অবসরে পাঠানোর কথা বলেন তিনি৷ কিন্তু সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি৷ ‘‘প্রত্যেক মন্ত্রী একই কথা বলেন, কিন্তু তা কার্যকর হয় না,'' বলছিলেন লুবুমবাসির হিউম্যান রাইটস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হুবার্ট শিসওয়াকা৷ তারা এ ধরনের মামলা নিয়ে লড়ছেন আদালতে৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের অবসর আর আসে না এবং বৃদ্ধ পিতা আর মাতারা কষ্টেই মারা যান৷'' এজন্য তিনি সরকারি অর্থের আত্মসাৎ আর বিচারহীনতাকে দায়ী করেন৷

শিক্ষিকা ফ্রান্সিসি ইউম্বা মিটওয়েল ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, ‘‘আমি মাথা উঁচু করে বিদায় নিতে চাই৷ আমাদের একটা পদকও নেই, যা নাতি-নাতনিদের জন্য রেখে যেতে পারি৷''

এ-তো গেল শিক্ষকদের কথা৷ ভালো নেই প্রশাসনিক খাতে নিয়োজিত বয়োবৃদ্ধ চাকরিজীবীরাও৷ ধরা যাক ইয়ানতুলা ববিনা পিয়েরের কথা৷ ৮০ বছর বয়সি এই প্রবীণ রাজধানী কিনশাসার লিংওয়ালার একটি প্রশাসনিক দপ্তরের প্রধান৷ প্রতিবেশী, আবাসন সংক্রান্ত অভিযোগ আর আদমশুমারির দায়িত্ব তার উপর৷ ১৯৬৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা হারান তিনি৷ রোববার ছাড়া সপ্তাহের ছয়দিনই অফিস করে যান৷ প্রতিদিন ভোর তিনটায় ওঠেন এবং যানজট এড়িয়ে তার কার্যালয়ে পৌঁছান৷ ক্লান্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বয়স নয়, বরং অফিসে কম্পিউটার না থাকাকে দুষলেন৷ ‘‘বিশ্ব বদলে গেছে, কিন্ত (এখানকার) প্রশাসন বদলালো না,'' তাকের পর তাক সাজিয়ে রাখা ফাইলের সামনে বসে বলছিলেন তিনি৷ সেই সঙ্গে দুঃখ করে বলেন, ‘‘আমার বয়স তো দেখতেই পাচ্ছেন, এখন বিশ্রামের সময়...কিন্তু অবসরের দেখা নেই৷ সেই অপেক্ষায় আছি৷''

এই মানুষগুলোর অবসরের জন্য সুনির্দিষ্ট কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে বার্তা সংস্থা এএফপি দেশটির জনসেবা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে তারা কোনো সাড়া দেয়নি৷

এফএস/এসিবি (এএফপি)