1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজশ্রীলঙ্কা

‘দেউলিয়া' শ্রীলঙ্কা ছাড়ার হিড়িক

৬ জুলাই ২০২২

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি সংকট, মুদ্রাস্ফীতি- সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা এখন এমন অবস্থায় যে প্রধানমন্ত্রীও আপাতত কোনো আশার আলো দেখছেন না৷ দেশের নাগরিকদের মাঝেও মহামারির মতো ছড়াচ্ছে দেশ ছাড়ার প্রবল ইচ্ছা৷

https://p.dw.com/p/4Dky8
Sri Lanka | Schlange vor einer Tankstelle in Colombo
ছবি: Saman Abesiriwardana/Pacific Press/picture alliance

শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি-সংকট এখন এমন চরমে যে সম্প্রতি (২৮ জুন) স্বল্প মজুদ সাবধানে খরচ করতে দুই সপ্তাহের জন্য শুধু জরুরি পরিষেবা খাতে সীমিত পরিমানে জ্বালানি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ এই সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়ে সেদিন সরকারের মুখপাত্র বান্দুলা গুণাবর্দনা বলেছিলেন, ‘‘আজ মাঝরাত থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের মতো জরুরি খাত ছাড়া অন্য কোনো খাতে জ্বালানি বিক্রি করা হবে না৷'' তিনি জানান, ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সংকটে পড়া দেশটিতে সামান্য যেটুকু জ্বালানি রয়েছে তা সংরক্ষণ করার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷

এর আগে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে জ্বালানি খাতে মোট ৬৫ বিলিয়ন রুপি (১৮৫ মিলিয়ন ডলার/১৭১ মিলিয়ন ইউরো)-র ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বড় রকমের ভর্তুকি দিয়ে আসা জ্বালানির দাম শতকরা ৮৩৫ ভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় সিলোন ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ড (সিইবি)৷

এসব পদক্ষেপের সুফল এখনো দৃশ্যমান নয়৷ বরং পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপের দিকে যাওয়ায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, মোট ঋণ ৫০ বিলিয়নও ছাড়িয়ে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা এখন ‘দেউলিয়া দেশ'৷

অবশ্য দ্বীপদেশটির অনেক মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এমন স্বীকারোক্তির আগেই সামনে যে আরো ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে তা বুঝতে পেরেছেন৷ তাই অনেকই এখন দেশ ছাড়ার জন্য মরিয়া৷

সবচেয়ে সহজ ভারতে চলে যাওয়া৷ তাই নৌকায় চড়ে ভারতে যাচ্ছেন অনেকে৷

২৭ জুন ভারতের এক সমুদ্র সৈকত থেকে প্রবীণ এক দম্পতিকে উদ্ধার করা হয়৷ দীর্ঘক্ষণ নৌকা চালানোয় পানি-শূন্যতা দেখা দিয়েছিল৷ তার সঙ্গে ভীষণ ক্লান্তি যোগ হওয়ায় দুজনই চলে যান মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে৷ অচেতন অবস্থায় দুজনকেই হাসপাতালে নেয়া হলেও বেশি কাহিল হয়ে পড়া নারীকে আর বাঁচানো যায়নি৷ চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ২ জুলাই অনন্তের পথে যাত্রা করেন তিনি৷

এভাবে নৌকায় চড়ে ইতিমধ্যে ৯০ জনেরও বেশি মানুষ শ্রীল্ঙ্কা থেকে ভারতে প্রবেশ করেছেন৷ আপাতত এক শরণার্থী শিবিরে রাখা হয়েছে তাদের৷

দেশ ছাড়ার যত কারণ

দুই সপ্তাহের জন্য হাসপাতাল, গণপরিবহণের মতো খাতগুলোতে শুধু তেল বিক্রি বা সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ কিন্তু জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষরাও সহজে জ্বালানি পাচ্ছেন না৷

দেহিওয়ালার ব্যবসায়ী আমান রিফাই জানান, পরিস্থিতি এখন লকডাউনের মতো৷ ডাম্বুলার রুভিনি গুনাবর্ধনে জানান, তার ভাই চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও এক ফোঁটা জ্বালানিও পাননি৷

সম্প্রতি জ্বালানির জন্য ফিলিং স্টেশনে টোকেন সিস্টেম চালু করেছে সরকার৷ সেই টোকেন নিয়ে অবশ্য শুধু লাইনে দাঁড়ানো যায়, জ্বালানির নিশ্চয়তা টোকেন দিতে পারে না৷৷

কলম্বোর রেডিও উপস্থাপক নিরোশ বিজয় জানালেন, টোকেন পাওয়ার পরও তার গাড়ির ট্যাঙ্ক ভরতে তিনদিন লেগেছে!

এমন হচ্ছে মূলত অব্যবস্থাপনার কারণে৷ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের বলা হয়েছে প্রতি শুক্রবার নিজেদের বাহনের জন্য জ্বালানি নিতে৷ কিন্তু কলম্বোর ইন্টার্নি ডাক্তার রাজমোহন গিয়ে দেখেন, ডাক্তারদের যে লাইন সেটা প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ হয়ে গেছে৷ তার মানে তেল পেতে পেতে নির্ঘাত সারাদিন পার৷ তাই রাজমোহনের প্রশ্ন, ‘‘ আমাদের তো হাসপাতালেও যেতে হবে, এত লম্বা লাইনে দাঁড়ালে কি আর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়া যাবে?'' তা যে আদৌ সম্ভব নয় তা বুঝতে পেরে কেউ কেউ বছরের প্রাপ্য ছুটি কাজে লাগিয়ে গাড়ির ট্যাঙ্ক ভরতে শুরু ছেন৷

জ্বালানি এমন দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাওয়ায় গ্যাসের চুলা বাদ দিয়ে ধৎশায়েনি কার্থিগেসু এখন স্টোভ ব্যবহার করছেন৷ ২৫ বছর বয়সি এই ক্যাটারিং ব্যবসায়ী জানান, তার বাড়ির কাছে এমন অনেকেই আছেন যারা স্টোভ কিনেও সংকট মোকাবেলা করতে পারছেন না৷ বড়দের খাবার তো দূরের কথা অনেকে শিশুর জন্য দুধও কিনতে পারছেন না তারা৷ ডাম্বুলার সার পরিবেশক বীজেন্দ্রনও তাদের একজন৷ তিনি জানান, তার সাড়ে তিন বছর বয়সি বাচ্চার জন্য নিয়মিত দুধ কেনা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে৷

দ্রব্যমূল্য বাড়ছে তো বাড়ছেই৷ অনেক পণ্য নিম্নবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে আগেই, তারপরও দাম বাড়ছে৷ জ্বালানিসংকটের কারণে অনেক মানুষ নিজের গাড়ি না চালিয়ে হেঁটে বা সাইকেলে যাতায়াত করছেন৷ ফলে সাইকেলের দামও বাড়ছে দ্রুত৷ এ মুহূর্তে সবচেয়ে সস্তা সাইকেলটির দাম ১০ হাজার শ্রীলঙ্কান রুপি৷ অনেকের এই সাইকেলই কেনার ক্ষমতা নেই, ৮০ থেকে ৯০ হাজার রুপির সর্বাধুনিক সাইকেল তারা কিনবেন কী করে!

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এত প্রতিকূল যে অনেকেই যত দ্রুত সম্ভব দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন৷ অনেকে আগে সন্তানদের অন্য দেশে পাঠাচ্ছেন পড়াশোনা করতে৷ খুব স্বচ্ছল নয় এমন পরিবারের সন্তানরা যাচ্ছেন ভারতে৷ স্বচ্ছল পরিবারগুলো ইউরোপ,অ্যামেরিকায় সপরিবারে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ পরিবারের সবার যেতে দেরি হবে মনে হলে সন্তানদের পাঠাচ্ছেন সেরকম দেশগুলোতে৷

অনেক নিম্ববিত্ত পরিবারের মানুষ আবার মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷রেনু গৃহকর্মী হিসেবে দুবাই গিয়েছেন গত বছর৷ তবে যাওয়ার পর দেশের আর্থিক সংকট আরো চরমে ওঠায় আরেকটি খণ্ডকালীন কাজ নিয়েছেন৷ দুটো কাজের আয় থেকে কিছু টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন৷ বাকি টাকা সঞ্চয় করে ৪০ বছর বয়সি রেনু স্বপ্ন দেখছেন একদিন নিজের মেয়েকেও দুবাইয়ে নিয়ে আসবেন এবং তারপর মা-মেয়ে থাকবেন একসঙ্গে৷ আরেক শ্রীলঙ্কান নারী দুবাই পৌঁছেছেন দুই মাস আগে৷ তিন মাসের ভিসা নিয়ে গিয়ে এখন দুবাইতেই স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি৷

কৃথিগা নারায়ণন/ এসিবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য