ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশে নির্যাতনের অভিযোগ
২৮ মে ২০০৯ব্রিটিশ নাগরিকের ওপর নির্যাতনের খবর পাওয়া সত্ত্বেও সরকার কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এবার ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধেই মামলা ঠোকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জামিল রহমান এর আইনজীবি৷ বুধবার ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জ্যাকি স্মিথ-এর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা জামিল রহমানের আইনজীবির কাছ থেকে এসংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছে৷ এবং যথাযথভাবে চিঠির উত্তর দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
৩১ বছর বয়সী জামিল রহমান ব্রিটেনে বড় হয়েছেন৷ ২০০৫ সালে বাংলাদেশের এক মেয়েক বিয়ে করার পর তিনি বাংলাদেশে বসবাস শুরু করেন৷ কিন্তু ২০০৫ সালের জুলাইয়ে লন্ডনে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তাকে একই বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে স্বস্ত্রীক আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী৷
জামিল রহমানের দাবি, আটকে রাখার পর টানা তিন সপ্তাহ তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়৷ এরপর তিনি বাধ্য হয়ে ভিডিও জবানবন্দি দিতে রাজি হন এবং লন্ডনে বোমা হামলার মূল পরিকল্পনাসহ তাঁর বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ স্বীকার করে নেন৷
রহমান জানান, এরপর তাঁকে দুই ব্রিটিশ নাগরিক জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ এসময় তাঁর চোখ বাধা ছিল৷ তবে দুই ব্রিটিশ নাগরিক নিজেদের এমআইফাইভ এর কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয় বলে তাঁর দাবি৷ রহমান তাদেরকে জানান যে, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা৷ তিনি বলছেন, একথা শোনার পর এমআইফাইভ কর্মকর্তারা বেরিয়ে গেলে তাঁর উপর পুনরায় নির্যাতন চালানো হয় এবং তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষন এবং হত্যাসহ তাঁদের শিশুসন্তানকে পুড়িয়ে মারারও ভয় দেখায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা৷
রহমানের দাবি, দুই বছর তাকে শারীরিকও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়৷ এরমধ্যে একাধিকবার এমআইফাইভ এর কর্মকর্তারাও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে তিনি জানান৷
২০০৫ সালে জুলাইয়ে লন্ডনে বোমা হামলার মুল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছিল ব্রিটেনবাসী জামিল রহমানকে৷ তবে সেই সন্দেহ এখনো সপ্রমাণিত হয়নি৷ রহমান-এর আইনজীবি জানিয়েছেন, তারা ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জ্যাকি স্মিথ এর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ কারণ একজন ব্রিটিশ নাগরিককে হয়রানি, আইনবহির্ভুত আটক, মিথ্যা অভিযোগ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নির্যাতনে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
এদিকে, ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ব্রিটিশ নিরাপত্তা বা গোয়েন্দা বাহিনী কোন ধরণের নির্যাতন বা অমানবিক আচরণ বা কর্মকান্ডে অংশ নেয় না বা এধরণের কর্মকান্ডকে উৎসাহিতও করে না৷
প্রসঙ্গত, ভিন্ন দেশে নির্যাতনের সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দা বাহিনী এমআইফাইভ এর উপস্থিত থাকার অভিযোগ এটাই প্রথম নয়৷ এর আগে গত মার্চে গুয়ান্তানামো বে থেকে মুক্তি পাওয়া বিনায়েম মোহামদ অভিযোগ করেন, পাকিস্তানে তার উপর নির্যাতনের সময় এমআইফাইভ এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিল৷ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে ব্রিটিশ সরকার৷
প্রতিবেদক: আরাফাতুল ইসলাম, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক