1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

ব্রণের কারণ ও মোকাবিলা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য

৫ ডিসেম্বর ২০২২

কিশোর বয়সে ব্রণ দেখা দিলে অনেক ভুল পরামর্শ শোনা যায়৷ যেমন পরিচ্ছন্নতার অভাব মেটাতে সাবান ও কসমেটিক্স প্রয়োগ৷ প্রচলিত ধারণা আঁকড়ে না ধরে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে সেই সমস্যা অপেক্ষাকৃত দ্রুত দূর করা সম্ভব৷

https://p.dw.com/p/4KUc3
In Good Shape
ছবি: Colourbox

কিশোর বয়সে ব্রণ অনেকেরই বিরক্তি ও ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে৷ কিন্তু ত্বকের এমন রূপান্তরের কারণ কী? চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইয়েল আডলার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘বয়ঃসন্ধির সময় যৌনাঙ্গ সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে পুরুষের হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়৷ নারীদের ক্ষেত্রেও সেটা ঘটে, কারণ তাদের শরীরে কম হলেও কিছু পুরুষ হরমোন থাকে৷ তখন সেবাশাস গ্ল্যান্ড বা স্বেদ গ্রন্থি উদ্দীপিত হয়৷ গ্রোথ হরমোনের মাত্রাও বেড়ে যায় বলে ইতোমধ্যে জানা গেছে৷ ফলে স্বেদ গ্রন্থি বড় হয় এবং ত্বকের উপর ব্রণ দেখা দেয়৷’’

অ্যাকনি ও পিম্পেল – দুই ধরনের ব্রণের জন্য পরিচ্ছন্নতার অভাবকে প্রায়ই দায়ী করা হয়৷ সেটা কি সত্য? প্রচলিত এই ধারণা খণ্ডন করে আডলার বলেন, ‘‘না, এটা পরিচ্ছন্নতার অভাবের লক্ষণ নয়৷ কারণ ত্বকের গভীরে, ছিদ্রের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া ঘটে৷ সেখানে প্রদাহ বেড়ে যায়৷ আর নোংরা ত্বকের উপরে থাকে, ব্রণের কারণ হতে পারে না৷’’

কিন্তু ব্রণ দেখা দিলে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করা ভালো নয় কি? ইয়েল আডলার সেই ধারণাও ভুল হিসেবে তুলে ধরে বলেন, ‘‘ব্রণ গজালেই সাতপাঁচ না ভেবে সাবান ঘষা, স্ক্রাব করা, এক্সফোলিয়েট করা ভুল পদক্ষেপ৷ এতে বরং উলটো ব্রণ আরও বেড়ে যেতে বা প্রদাহ দেখা দিতে পারে৷ তার উপর শরীরে গ্রোথ হরমোন তরান্বিত করে, এমন খাবার খেলে তো অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে৷ যেমন গরুর দুধ, চিনি, ময়দা, ফাস্টফুড ইত্যাদি৷ গাঁজা সেবন করলেও ত্বক তৈলাক্ত হবে এবং প্রদাহ বাড়বে৷’’

ত্বকের গঠন উন্নত করতে ডাক্তার হিসেবে তিনি জিংক, সেলিনিয়াম ও বায়োটিন-সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণের পরামর্শ দেন৷ মাংসের মধ্যে যথেষ্ট মাত্রায় জিংক থাকে৷ বাদাম, ওটমিল এবং কুমড়ার বীজের মধ্যে সেলিনিয়াম ও বায়োটিন পাওয়া যায়৷ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও উপকারী, কারণ এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে৷

ব্রাজিল নাটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেলিনিয়াম থাকে৷ দিনে অর্ধেক বাদাম খেলেই উপকার পাওয়া যায়৷ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইয়েল আডলার বলেন, ‘‘খাদ্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে কখনো সাবস্টিটিউট খেতে হয়৷ তবে তার আগে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত৷’’

অসংখ্য কসমেটিক্স রয়েছে, যেগুলি ব্যবহার করলে নাকি ব্রণ উধাও হয়ে যায়৷ দোকানের তাকে ব্রণ দূর করার সামগ্রীর অভাব নেই৷ কিন্তু এগুলি কি সত্যি কার্যকর? আডলার মনে করিয়ে দেন, ‘‘অ্যাকনি ও পিম্পেল একটা রোগ৷ সেটা দূর করতে সুপারমার্কেটের তাকে হাত বাড়ানোর বদলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত৷’’

ব্রণ দূর করতে অনেকে টুথপেস্ট লাগান৷ সেটাও কি করা উচিত? ইয়েল আডলার বলেন, ‘‘টুথপেস্টের বদলে আমি বরং জিংক পেস্ট লাগাতে বলবো৷ টুথপেস্ট ত্বকে প্রদাহ ঘটাতে পারে এবং এর কোনো উপকারী প্রভাব নেই৷ ব্রণ উধাও হয়ে গেলেও সাদা বিন্দু থেকে যায়৷’’

অন্যান্য কিছু পথ্য সম্পর্কেও ইয়েল আডলার নিজের মূল্যায়ন পেশ করেছেন৷ যেমন তাঁর মতে, লেবু টক বলে ভিনিগারের মতো ত্বকের পিএইচ ভ্যালু, অর্থাৎ অ্যাসিড প্রতিরোধী আবরণ শক্তিশালী করতে সাহায্য করে৷ তবে লেবুর টুকরো অতিরিক্ত টক বলে সতর্ক হতে হবে৷ ভিনিগারের ক্ষেত্রে এক লিটার পানিতে এক বা দুই চামচ অ্যাপল ভিনিগার আদর্শ৷ সেটা অ্যাসিড প্রতিরোধী আবরণ অনুকরণ করে৷

মধুর কার্যকরিতা সম্পর্কে আডলার বলেন, ‘‘মধু ব্যাকটিরিয়া প্রতিরোধ করে৷ ঠোঁট শুকিয়ে গেলেও মধু লাগানো হয়৷ আর্দ্রতা বাড়ানোর পথ্য হিসেবে এটির কদর রয়েছে৷ প্রদাহের ক্ষতের উপর মধু লাগানো যায়৷’’

রসুন কার্যকর হলেও কিছু ব্যবহারিক সমস্যা আছে৷ ইয়েল আডলার মনে করেন, ব্যবহারকারীর জন্য রসুন সামলানো তেমন সহজ নয়৷ কারণ লাগানোর জায়গায় রসুনের কড়া গন্ধ থেকে যায়৷ তাই তিনি কখনো এটি ব্যবহারের পরামর্শ দেন না৷ তার পছন্দের ঘরোয়া পথ্যের মধ্যেও সেটি পড়ে না৷

ইন্টারনেটে ব্রণ দূর করার আরও পরামর্শ পাওয়া যায়৷ শারীরিক মিলনও নাকি এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে৷ এমন ধারণা খণ্ডন করে আডলার বলেন, ‘‘সঙ্গমের সময় আমাদের সেক্স হরমোন সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ নারীদের মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য ও পুরুষদের মধ্যে পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্য বেড়ে যায়৷ তবে ব্রণের উপর মোটেই কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ে না৷’’

তাহলে ব্রণের সমস্যা আয়ত্তে আনার উপায় কী? তাছাড়া ভুক্তভোগীদের কত সময় ধরে কষ্ট সহ্য করতে হয়? তাদের আশ্বাস দিয়ে ইয়েল আডলার বলেন, ‘‘অ্যাকনি অবশ্যই নিরাময় করা সম্ভব৷ এর জন্য নানা রকম থেরাপি রয়েছে৷ বেশি সময় ধরে নিজেই প্রতিকার খোঁজা উচিত নয়৷ এটিকে কসমেটিক সমস্যা হিসেবে বিশ্বাস করে নিজেই কসমেটিক্স কিনলে চলবে না৷ বরং সাহায্য নিয়ে অযথা কষ্টের পথ থেকে সরে আসাই ভালো৷ সেটা না করলে ত্বকে স্থায়ী দাগ থেকে যেতে পারে৷ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে কয়েক মাসের মধ্যেই অ্যাকনি দূর করা সম্ভব৷’’

মোটকথা অ্যাকনি একটি রোগ৷ পরিচ্ছন্নতার অভাবের সঙ্গে এর বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক নেই৷ অ্যাকনি দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷ কারণ সেটি দূর করার বেশ কিছু কার্যকর থেরাপি রয়েছে৷

কিয়র্স্টিন শুমান/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান