1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে গর্ভেই শিশুর পরিচয়

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

গর্ভাবস্থাতেই মায়ের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলোর মাধ্যমে অণুজীবের সঙ্গে একটি শিশুর পরিচয় ঘটে৷ তখন থেকেই এগুলোর বিরুদ্ধে তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়৷

https://p.dw.com/p/3pGP4
গর্ভাবস্থায় মায়েরা কী খাচ্ছেন তা শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণছবি: Colourbox

মায়ের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর কী প্রভাব ফেলে তা নিয়ে গবেষণা করেন অণুজীব বিজ্ঞানী স্টেফানি গানাল৷ তার মতে, জন্মের সময়ই শিশু প্রথমবার ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে৷ গর্ভনালীর ভেতরেই মায়ের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া শিশুর ভেতর ঢোকে৷ এই ব্যাকটেরিয়া তার জীবনের প্রথম ঢাল৷ এগুলো শিশুকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করে৷

‘‘আমরা যখন জন্মাই, তখন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি তৈরি থাকে না৷ আস্তে আস্তে শরীর রোগ, অর্থাৎ ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়াদের চিনতে শুরু করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে শেখে৷ এক্ষেত্রে অন্ত্রের অণুজীবগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং পরবর্তীতে ক্ষতিকারক অণুজীবগুলোর বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে,’’ বলেন গানাল৷ 

এক গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, গর্ভাবস্থায় মায়েরা কী খাচ্ছেন তা শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ মায়ের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া গর্ভাবস্থাতেই শিশুর ওপর প্রভাব ফেলছে৷ এই গবেষক দেখিয়েছেন কী করে মায়ের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া পরিবাহকগুলো গর্ভনালীর মাধ্যমে শিশুর ভেতরে যায় এবং তা তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে৷

নবজাতকের জীবনের প্রথম ঢাল যে ব্যাকটেরিয়া

গানাল বলেন, ‘‘মাকে খুব খেয়াল করে খাবার খেতে হবে, যেমন প্রচুর ভিটামিন আছে, ভারসাম্যপূর্ণ, এমন নানান ধরনের খাবার৷ মানে চিন্তা করতে হবে আপনার কি আদৌ চকোলেট বা ক্যান্ডি খাবার দরকার আছে, না মাঝে মাঝে না খেলেও হয়৷ খুব বেশি পরিবর্তন না আনতে পারলেও কী খাচ্ছি ও কতটা খাচ্ছি একটু খেয়াল করতে পারলে ভাল৷’’

ছোট শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও পুষ্টিকর খাবার খুব জরুরি৷ স্টেফানি পরের গবেষণায় দেখতে চান, প্রথম কয়েক বছর বয়সে শিশুর শরীরে কেমন করে অণুজীবগুলো তৈরি হয়৷

‘‘শিশুর জন্মের পর কেমন করে এই অণুজীবগুলো জন্মাচ্ছে, তা আমরা দেখতে চাই- অন্তত দুই বছর বয়স পর্যন্ত৷ মায়ের বুকের দুধ সেক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করে তা জানতে আগ্রহী আমরা৷ আরো জানতে চাই, এটা শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব ফেলে এবং কিছু নির্দিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে কেমন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে,'' বলেন এই অণুজীব বিজ্ঞানী৷

‘‘শিশুর প্রথম বছরগুলোর খাবারের পুষ্টিগুণ খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তার খাবার পরিপাকতন্ত্রের অণুজীব তৈরি করে৷ আজকে আমরা এটা জানি যে, পরিপাকতন্ত্রের অণুজীবগুলো তৈরি হয় শিশুর দুই থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যেই৷ আমরা জানি, এই বয়সে আপনি চাইলে সেগুলো বদলেও দিতে পারেন৷ দীর্ঘমেয়াদে তা শরীরের সার্বিক অণুজীবের গঠন ও শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে৷ বয়স বেড়ে গেলে এই পরিবর্তন আর সম্ভব না,’’ যোগ করেন তিনি৷

স্টেফানি জানেন, প্রথম কয়েক মাস মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই৷ তবে যেসব মা বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন না, তারা তার এই গবেষণা থেকে লাভবান হতে পারেন৷

গানালের ভাষায়, ‘‘দীর্ঘমেয়াদে আমরা বুঝতে পারব যে, কোন ব্যাকটেরিয়া শিশুর প্রথম বছরগুলোতে দরকার এবং সেগুলো মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত শিশুদের অন্যভাবে দেয়া যাবে৷ অন্যদিকে, কেউ কল্পনা করতেই পারেন যে, বোতলের খাবার আরো বেশি উন্নত করা সম্ভব৷’’

গবেষণার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে স্টেফানি৷ তিনি ব্যাকটেরিয়াদের পৃথিবীকে আরো ভাল করে বুঝতে চান এবং তা শিশুর স্বাস্থ্য বিকাশে ব্যবহার করতে চান৷

মারিয়া মিয়েথ/জেডএ