1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যাংকপাড়ার খুদে আঁকিয়ে

২৪ জুলাই ২০১৯

কেজি ওয়ানের ছাত্রী রাইদা রায়হান৷ স্কুল শেষে অপেক্ষা করছিল মায়ের জন্য৷ মা ঠিকই সময়ের মধ্যে এলেন, রাইদাকে তুলে নিলেন গাড়িতে৷ কিন্তু বাসায় ফেরার আগে, সেরে নিতে হবে ব্যাংকের কিছু কাজ৷ ছোট্ট রাইদা সঙ্গে থাকায় চিন্তার শেষ নেই৷

https://p.dw.com/p/3Mdl1
Bangladesch Fakhraul Abedin Milon Aktion in Bank
ছবি: Fakhraul Abedin Milon

তাঁকে রেখে কাজ শেষ করাটাও মুশকিল৷ না করলেও আছে কিছু ঝামেলা৷ ঢুকলেন, মতিঝিলের ঢাকা ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় শাখায়৷ হাতের কাজ শেষ করতে মিনিট ২০/৩০ মিনিট লেগে যাবে৷ মনের মধ্যে একটু খচখচানি তো আছেই৷ কিন্তু গেটে ঢুকতেই বিস্মিত হলেন তিনি৷ কারণ ব্যাংকের লোকজন এগিয়ে এসে ছোট্ট রাইদাকে দিলেন ছবি আঁকার সব উপকরণ৷ রাইদাও আপন মনে আঁকা শুরু করলো ছবি৷

সেদিন একবারও বিরক্ত করেনি রাইদা, খুব আরাম করে কাজটা করতে পেরেছিলাম:মোমেনিনা

রাইদার মা যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেলেন, রাইদাও হয়েছে যারপরনাই খুশি৷ তাঁর মা মোমেনিনা বিনতে মাকসুদ জানান, ‘‘এর আগে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে অনেকগুলো ব্যাংকের শাখায় গিয়েছি৷ কিন্তু ব্যাংক বা অফিস পরিবেশের সঙ্গে বাচ্চারা অভ্যস্ত নয়৷ ফলে ৫/১০ মিনিট পার হলেই সে নিজে বিরক্ত হতো, আমাকেও বিরক্ত করা শুরু করতো৷''

মোমেনিনা বলেন, ‘‘সেদিন একবারের জন্য বিরক্ত করেনি রাইদা৷ আমিও খুব আরাম করে নিজের কাজটা শেষ করতে পেরেছিলাম৷'' তিনি আরো জানান, শুধু তাই নয় তাঁর হাতে দেয়া হয়েছে কিছু চকোলেট৷ তাতে তাঁর মেয়ে ভীষণ খুশি হয়ে যায়৷ এমনকি পরে আবারো ঢাকা ব্যাংকে যাওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে রাইদা৷

রাইদার মা জানালেন আরেকটি মজার তথ্য৷ শিশুটি যখন ছবি আঁকছিলো, তখন ব্যাংকের কাজে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষেরাও আগ্রহ নিয়ে তাঁর আঁকাআঁকি দেখছিলেন৷ ফলে, অপেক্ষমান মানুষের চোখেও ছিলো না কোনো প্রকার বিরক্তির ছাপ৷

ওই ঘটনার দিন কয়েক পর ছিল রাইদার জন্মদিন৷ তাই তাঁর আঁকায় ফুটে ওঠে নিজের জন্মদিন প্রস্তুতি৷

নিজের সন্তানকে নিয়ে গিয়ে একইরকম সন্তুষ্টির কথা জানালেন আরেক ব্যাংকার ফুয়াদ শাহরিয়ার৷ তিনি মনে করেন, ব্যাংকের কাজটি একটু একঘেঁয়ে৷ বাচ্চাদের সেই পরিবেশে খাপ খাওয়ানো যায় না৷ কিন্তু ঢাকা ব্যাংকের এই উদ্যোগকে তিনি শিশু বান্ধব মনে করছেন৷

আমার সবচে ভালো লেগেছে, বাচ্চাদের ক্রিয়টিভ জায়গাটাকে তাঁরা অ্যাড্রেস করেছে:ফুয়াদ শাহরিয়ার

ফুয়াদ শাহরিয়ার জানান, ‘‘আমার সবচে ভালো লেগেছে, বাচ্চাদের ক্রিয়টিভ জায়গাটাকে তাঁরা অ্যাড্রেস করেছে৷ আবার যাঁরা কাজের মধ্যে আছেন, তাদেরও কোনো প্রকার জটিলতা হলো না৷'' ছোট্ট পারমিতাও জানায়, তাঁর খুব ভালো লেগেছে এই আয়োজন৷

তবে উদ্যোগটি এখনও একেবারে ছোটো আকারেই আছে৷ মূলত মতিঝিলে ঢাকা ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় শাখার ব্যবস্থাপক ফখরুল আবেদীন মিলনের ব্যক্তিগত আগ্রহে শিশুদের জন্য বিশেষ এই কর্নারটি চালু করা হয়েছে৷

তিনি খেয়াল করেছেন, অনেকেই বাচ্চাদের নিয়ে ব্যাংকে আসেন৷ কিন্তু ব্যাংকিং কাজে কখনো কখনো সময় লাগে৷ ওই সময়টাতে বাচ্চারা খুব বিরক্ত হয়৷ শুরুর দিকে চকোলেট, চিপস দিতেন তিনি৷ পরে মনে হলো, শিশুদের বুদ্ধিভিত্তিক চর্চাতে সহযোগিতা করা দরকার৷

আর তাই, তার অফিসের একটি ছোট্ট কোনায় বাচ্চাদের ছবি আঁকার কর্নারটি করা হয়েছে৷ ফখরুল আবেদীন জানান, বাচ্চারা যাতে ব্যাংক সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে বড় না হয়, সেদিকে নজর দিতে চেয়েছেন তিনি৷

খুদে আঁকিয়েদের চিত্রকর্ম নিয়ে পরিকল্পনা আছে আমার :ফখরুল আবেদীন

বাচ্চাদের আঁকা ছবিগুলো খুব যত্ন করে রেখে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ৷ কারণ খুদে আঁকিয়েদের চিত্রকর্ম নিয়ে পরিকল্পনা আছে ফখরুল আবেদীনের৷

তিনি জানান, ‘‘আমার প্ল্যান হচ্ছে এই ছবিগুলো নিয়ে কোনো একসময় ব্যাংকের মধ্যেই বাচ্চাদের নিয়ে একটা এক্সিবিশন করবো৷''

ফখরুল আবেদীনের ইচ্ছে, তাঁর এই ধারণাটা সবাই গ্রহণ করবে৷ সব অফিসে শিশু বান্ধব একটা পরিবেশ গড়ে তোলা দরকার বলে মনে করেন তিনি৷ মিলন বলেন, শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত৷ তাই তাঁদের জন্য ডর ভয়হীন একটি সমাজ গড়ে তুলতে সবার এগিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করেন ব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুল আবেদীন মিলন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য