ব্যাংক খাতের আলোচিত কিছু অনিয়ম-দুর্নীতি
ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নেয়ার অভিযোগ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে৷ ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা অতীতেও ঘটেছে৷
ইসলামী ব্যাংকে ঋণ অনিয়ম
সম্প্রতি প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে৷ এসব মূলত নামসর্বস্ব কোম্পানি৷ এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত শুরু করেছে৷
স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে অনিয়ম
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদন বলছে, নিয়ম না মেনে দুই কোম্পানিকে ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধায় বছরের পর বছর ধরে পণ্য আনার সুযোগ দিয়ে স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) প্রায় ১৫৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার এখন আটকে গেছে৷ কোম্পানি দুটি হলো শার্প নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ ও ব্লাইথ ফ্যাশনস লিমিটেড৷
হলমার্ক কেলেঙ্কারি ও সোনালী ব্যাংক
২০১২ সালে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফাঁস হয়৷ সে সময় কেবল সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা থেকে ২০১০-২০১২ সময়ে মোট তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়৷ এর মধ্যে অখ্যাত হলমার্ক গ্রুপ একাই আত্মসাৎ করে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা৷ এই ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও হলমার্কের মালিককে আটক করা হয়৷ সেই ঘটনার বিচারকাজ এখনো চলছে৷ টাকাও আদায় করতে পারছে না সোনালী ব্যাংক৷
বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতি
রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া আব্দুল হাই বাচ্চু পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিয়োগ পাওয়ার পর ব্যাংকটি অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়৷ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ব্যাংকটিতে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণে বড় ধরনের অনিয়ম পায় বাংলাদেশ ব্যাংক৷ ব্যাংকের টাকা মেরে দিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হয়৷ এসব ঋণের বেশিরভাগই আর ব্যাংকে ফেরত আসেনি৷
ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে (বর্তমানে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক) লুটপাট
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে ঘটে এই ঘটনা৷ ব্যাংকটির তৎকালীন উদ্যোক্তারা অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন প্রায় ৬০০ কোটি টাকা৷ লুটপাটের কারণে ২০০৬ সালে ব্যাংকটি অতিরুগ্ন হয়ে পড়ে৷ মালিকপক্ষের হাতে থাকা ব্যাংকের ৮৬ শতাংশ শেয়ারও বাজেয়াপ্ত করা হয়৷ তা কিনে নেয় আইসিবি গ্রুপ৷ তারপর ব্যাংকটির নাম পরিবর্তিত হয়ে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক হয়৷
বিসমিল্লাহ গ্রুপের কারণে সমস্যায় পাঁচ ব্যাংক
২০১২ ও ২০১৩ সালে বিসমিল্লাহ গ্রুপ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল৷ এতে জনতা, প্রাইম, যমুনা, প্রিমিয়ার ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক সমস্যায় পড়েছিল৷
সাবেক ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক)
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংকের ছয় শাখায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম পাওয়া যায়৷ পরে সরকারের উদ্যোগে সরকারি চার ব্যাংক ও একটি বিনিয়োগ সংস্থা মূলধন সহায়তা দেয়৷ বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে ব্যাংকের নাম হয়েছে পদ্মা৷
অ্যাননটেক্স গ্রুপকে দেয়া ঋণ পাচ্ছে না জনতা ব্যাংক
অ্যাননটেক্স গ্রুপের মালিক ইউনুস বাদলকে জনতা ব্যাংক মাত্র ছয় বছরে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা দিয়েছিল৷ গ্রাহক এখন এই ঋণ এখন পরিশোধ করতে পারছেন না৷ ছবিতে অ্যাননটেক্স গ্রুপের কার্যালয় দেখা যাচ্ছে৷
ইউনিয়ন ব্যাংকের ঋণ বিতরণে অনিয়ম
প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে কোম্পানি গঠন করে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ঋণের বড় অংশ তুলে নিয়েছে৷ অনেকের আবার ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না৷ এসব ঋণের বেশিরভাগেরই এখন খোঁজ মিলছে না৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ইউনিয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার যোগ্য, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ৷