1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যভিচারে অপরাধী শুধু পুরুষ কেন?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১১ আগস্ট ২০১৮

ভারতে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় ব্যভিচারকে অপরাধ হিসেবে ধরা হয়৷ অথচ এক্ষেত্রে শুধু পুরুষ অপরাধীর শাস্তি হয়, নারীর নয়৷ প্রথমত আইনটি বৈষম্যমূলক এবং দ্বিতীয়ত পরকীয়া কি সত্যিই শাস্তিযোগ্য অপরাধ? এ নিয়েও রয়েছে বিতর্ক৷

https://p.dw.com/p/32xiC
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online/Begsteiger

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা খতিয়ে দেখে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের এক সাংবিধানিক বেঞ্চ মৌখিকভাবে রায় দিয়েছেন যে, পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌনাচারের অপরাধে পুরুষকে পাঁচ বছরের জন্য জেলে পাঠাবার কোনো অর্থ হয় না৷ এটা একটা সাধারণ বিচারবুদ্ধির প্রশ্ন৷ তাই এটা ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পড়ে না৷

যদি কোনো বিবাহবহির্ভূত যৌনসম্পর্ক পুরুষ ও মহিলা উভয়ের সম্মতিক্রমেই হয়ে থাকে, তাহলে কাউকেই জেলে পাঠানো যায় না৷ কিন্তু কেউ যদি পরস্ত্রীর সঙ্গে জোর করে বা সেই নারীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও যৌনাচারে লিপ্ন হয়, তবে সেটা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে৷ আর ধর্ষণ অবশ্যই শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ৷

‘বিষয়টাকে রাখা যেতে পারে নৈতিকতার জায়গায়, আইনের জায়গায় নয়’

কিন্তু যদি প্রাপ্তবয়স্ক কোনো পুরুষ ও নারী পরস্পরের সম্মতিক্রমে সেই সম্পর্ক রাখতে চায়, তাহলে সেটা অপরাধ হবে কেন? তাছাড়া সেই শাস্তি কেবল পরস্ত্রীর প্রেমিক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কেন? প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের মতে, ব্যভিচারের এক সামাজিক বিধান হচ্ছে ডিভোর্স৷ তাই পরকীয়ায় শুধু পুরুষকে অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করতে রাজি নয় আদালত৷ বলা বাহুল্য, ভারতীয় ফৌজদারি আইনের ৪৯৭ ধারাটি আইনের চোখে সমানাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷

কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান

এই প্রশ্ন নিয়ে শীর্ষ আদালতে এক জনস্বার্থ মামলা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী অতিরিক্ত সলিসিটার-জেনারেল পিঙ্কি আনন্দ এক হলফনামা দিয়ে বক্তব্য রাখেন, বিবাহ যেহেতু এক পবিত্র বন্ধন, তাই ব্যভিচার ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত৷ তাতেই সমাজের কল্যাণ৷ পরকীয়ার অভিযোগে নাকি মেয়েদের অভিযুক্ত করা যায় না৷ প্রধান বিচারপতি অবশ্য তা মনে করেন না৷ তাঁর মতে,  বিয়ে টিকিয়ে রাখা যদি স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের দায়িত্ব হয় এবং সেক্ষেত্রে যদি একজন ব্যর্থ হয় তাহলে সামাজিক উপায় তো আছেই, ডিভোর্স৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ভেঙে যাওয়া বৈবাহিক বন্ধনকে লোক দেখানো করে রাখলে তাতে সমাজের কল্যাণ হয় কীভাবে?''

সাংবিধানিক বেঞ্চের অপর বিচারপতি ডি.ওয়াই. চন্দ্রচূড় মনে করেন, ভেঙে যাওয়া বৈবাহিক সম্পর্কের পরিণাম অনেক সময় ব্যভিচার ডেকে আনে৷ তাছাড়া বিবাহবন্ধনের পবিত্রতা রক্ষা একা স্ত্রীর হতে পারে না৷ স্ত্রী-ই শুধু স্বামীর প্রতি অনুগত থাকবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না৷

বেঞ্চের আরেক বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা মনে করেন, এমনও দেখা গেছে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় তাঁরা বছরের পর বছর আলাদা থাকছেন৷ অপেক্ষা করছেন ডিভোর্স পেতে৷ এ সময় ব্যভিচারর মামলা এনে স্বামী-স্ত্রী একে-অপরকে হয়রানি করতে চাইতে পারে৷ সুতরাং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা যদি রাখতেই হয়, তবে তা শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কেন?

কী মনে করে সুশীল সমাজ?

এই প্রশ্নে বিশিষ্ট নারীবাদী কর্মী অধ্যাপিকা শ্বাশতী ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে দু'টো ব্যাপার আছে৷ প্রথম কথা, এটা আদৌ অপরাধের আওতায় থাকবে কেন? এটাকে ‘ক্রিমিনাল অফেন্স' হিসেবে দেখা হবে কেন? এভাবে তো দেখাই উচিত নয়৷ দ্বিতীয়ত, মেয়েটিই যদি এই ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, সেক্ষেত্রে এখানে বৈষম্য করার কোনো যুক্তি নেই৷ উভয়েই সমান দায়ী৷ আমি মনে করি, বিষয়টাকে রাখা যেতে পারে নৈতিকতার জায়গায়, আইনের জায়গায় নয়৷ শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে হলফনামায় বলা হয়েছে, এতে নাকি বিশ্ব সংসার রসাতলে যাবে৷ এটা যদি ফৌজদারি অপরাধ না হয় তাহলে সরকারের ধারণা দলে দলে নারী-পুরুষ ব্যভিচারে মেতে উঠবে৷ এই ধরনের রক্ষণশীল অবস্থান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়েছে৷ এটা বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কী-ই বা হতে পারে?''

ভারতীয় আইনে ব্যভিচার কী?

ব্যভিচার সংক্রান্ত আইনের ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো পুরুষ যদি কোনো পরস্ত্রীর সঙ্গে তাঁর স্বামীকে না জানিয়ে পারস্পরিক সম্মতিতে যৌনাচার করেন, তাহলে সেটা ধর্ষণ বলে গণ্য করা হবে না, হবে ব্যভিচার৷ এর জন্য পুরুষটির শাস্তি পাঁচ বছরের জেল বা জরিমানা কিংবা দু'টোই হতে পারে৷ অথচ এক্ষেত্রে মহিলাটিকে অভিযুক্ত করা যাবে না৷ সবথেকে বড় কথা, স্বামীর সম্মতি নিয়ে পরকীয়া করলে কিন্তু কোনো সমস্যা নেই৷ মানেটা দাঁড়ায়, স্ত্রী হলো স্বামীর স্থাবর সম্পত্তি৷ তাঁর নিজস্ব ব্যক্তি সত্তা থাকতে পারে না৷ থাকতে পারে না আলাদা অস্তিত্ব৷

বলা বাহুল্য, এই ধরনের আপত্তিকর আইনবিধি ভারতের পক্ষে গৌরবের নয়৷ তাই তো কেরালার জনৈক অনাবাসী এক ভারতীয় এই ধরনের আইনি লিঙ্গ বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন শীর্ষ আদালতে৷

আপনি কি মনে করেন বন্ধু? ব্যভিচার বা পরকীয়া কি ফৌজদারি অপরাধ? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য