1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যঙ্গে বিদ্ধ ভারতের বহুত্ববাদ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১১ অক্টোবর ২০২০

সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের আক্রমণের মুখে বাংলা ও বাঙালি৷ এবার আক্রমণকারী অতীতে সাংবিধানিক পদে থাকা এক বিশিষ্টজন৷ এটা কি নিছকই ব্যক্তির বিদ্বেষ, না এই মানসিকতাই ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে সমাজে৷

https://p.dw.com/p/3jcxa
ছবি: Payel Samanta/DW

ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে পরস্পরকে কটাক্ষ বা গালিগালাজ করা একটা দস্তুর হয়ে উঠেছে৷ শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে ভাষা ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে৷ এর সর্বশেষ উদাহরণ প্রেস কাউন্সিলের প্রাক্তন সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু৷ তিনি বাঙালিদের উচ্চারণ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন৷ ব্যঙ্গ করেছেন বাঙালি ঘরের নবজাতককে নিয়েও৷ আক্রমণ থেকে বাদ পড়েননি তাঁরই একসময়ের বাঙালি শিক্ষক৷ বাঙালি কেন জল খায়, তা নিয়েও উপহাস করেছেন কাটজু৷ সম্প্রতি শুধু বাঙালি পরিচয়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলের মুখে পড়েছেন প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের বান্ধবী অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী৷ তাঁর ‘কালা জাদু’তে নাকি সুশান্তের এই পরিণতি! তাই যে কোনো বাঙালি মেয়েকেই কার্যত ‘ডাইনি’ হিসেবে দেগে দেওয়া হয়েছে৷ এই প্রথম নয়, অতীতে বাঙালি বিদ্বেষের এমন বহু নজিরই আছে৷

উপমহাদেশে বাংলার আলাদা জায়গায় রয়েছে: অধ্যাপক মননকুমার মণ্ডল

অথচ বহুত্ববাদী দেশ ভারতে সব ধর্ম, ভাষা, জাতির মানুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার৷ শুধু সাধারণ মানুষ নয়, আক্রমণ যখন আসে এক সময় সাংবিধানিক পদে থাকা বিশিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে, তখন প্রশ্ন ওঠে, আদৌ কি বহুত্ববাদের পথে রয়েছে দেশ৷ এই বিপদের কথা স্বীকার করে নেন নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক মননকুমার মণ্ডল৷ এর পিছনে কি ঈর্ষা কাজ করছে? এই সম্ভাবনা খারিজ না করে তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশে বাংলার আলাদা জায়গায় রয়েছে৷ এই ভাষাকে কেন্দ্র করে একটা রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে৷ এটা বাংলার জোরের জায়গা৷ এছাড়া আন্তর্জাতিকতার প্রশ্নে বাংলা অনেকটাই এগিয়ে৷’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কারো নাম না করেই বলেছেন, বিশ্বজুড়ে বাঙালিরা কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করছেন৷ সবচেয়ে বেশি নোবেল এসেছে বাংলায়৷ তাই তিনি কার্যত উপেক্ষা করেছেন কাটজুর মন্তব্যকে৷

ফেসবুকে সম্মিলিত সমালোচনার মুখে কাটজু নিজের আটটি পোস্ট সরিয়ে নিয়েছেন৷ পোস্ট সরালেও বিদ্বেষ কি মুছে যায়? তবে এটাকে ব্যক্তিবিশেষের ঈর্ষা বলে লঘু করতে রাজি নন বাংলা পক্ষের সভাপতি গর্গ চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ অহিন্দি সব ভাষাকে আক্রমণ করছে৷ তাই এ রাজ্যের বাঙালিদের বাংলাদেশি বলা হচ্ছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম পোস্ট করা হচ্ছে, আমফানে বাংলা যেন ধ্বংস হয়ে যায়৷ খড়্গপুর আইআইটি-র একদল পড়ুয়া বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে৷ ভোজপুরি গান লেখা হচ্ছে বাঙালি নারীকে পণ্য করে৷ এই মানসিকতা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে একটা বিশেষ রাজনীতির অঙ্গ হিসেবে৷’

ভাষা এতটা ঠুনকো নয় যে কেউ খাটো করতে চাইলেই তার সন্মানহানি হবে: সুহৃতা সাহা

কাটজুদের ধাঁচে আক্রমণকে তেমন আমল দিতে রাজি নন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রধান সুহৃতা সাহা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ভাষা এতটা ঠুনকো নয় যে কেউ খাটো করতে চাইলেই তার সন্মানহানি হবে৷ ভারতের বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ তাদের নিজস্ব ঢঙে ইংরেজি বলে৷ বাঙালিরাও তাই করে৷ অন্য ভাষার উচ্চারণ নিয়ে ঠাট্টা হয়ে থাকে, তবে বিদ্বেষ কাম্য নয়৷' অভিনেতার মৃত্যুর পর রিয়া চক্রবর্তীকে বাঙালি বলে যে ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তার সমালোচনাও করেন অধ্যাপিকা৷

পশ্চিমবঙ্গেই বাংলা ভাষাকে ব্রাত্য করার অভিযোগ বরাবরই ওঠে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে৷ সম্প্রতি রেলের লিলুয়া ওয়ার্কশপ থেকে বাংলাকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ৷ অর্থাৎ এখানে বাংলা ভাষায় কোনো বোর্ড রাখা হচ্ছে না৷ অথচ রেল চলে ত্রিভাষা সূত্র মেনে চলে৷ প্রথমে রাজ্যের ভাষা, দ্বিতীয় স্থানে সংযোগকারী ভাষা হিসেবে হিন্দি ও শেষে আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি৷ অথচ রেলের অনেক বোর্ডে বাংলায় নাম লেখা থাকে এমনভাবে যা খালি চোখে দেখা মুশকিল৷ সদ্য উদ্বোধন হওয়া ফুলবাগান মেট্রোর নামাঙ্কনে বাংলা না থাকার অভিযোগে ব্যাপক শোরগোল পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ আদতে বাংলা থাকলেও দিনের আলোয় তা বোঝার উপায় থাকছে না বলে অভিযোগ৷