1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধন্যি মেয়ে ভারতের হাদিয়া!

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৭ মার্চ ২০১৮

হাদিয়া শেষ পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিস্বাধীনতার আইনি লড়াই জিতে গেলেন৷ ভারতের শীর্ষ আদালত ফিরিয়ে দিল তাঁর ব্যক্তিস্বাধীনতা৷ তবে অখিলা থেকে হাদিয়া হবার লড়াইটা ছিল দীর্ঘ, বিচার প্রক্রিয়া ছিল প্রলম্বিত৷ তবুও হাল ছাড়েননি হাদিয়া৷

https://p.dw.com/p/2uS7S
ছবি: Imago/Hindustan Times/S. Mehta

প্রথমে হাইকোর্ট, তারপর জাতীয় তদন্ত এজেন্সি শেষে সুপ্রিম কোর্ট৷ এ সময় অসহ্য মানসিক চাপ এবং হেনস্থা সহ্য করতে হয়েছিল হাদিয়াকে৷ তাই তো, মামলার পরিণতির দিকে তাই তাকিয়েছিল গোটা দেশ৷ কিন্তু বিতর্কিত মামলার মূল বিষয়টা ঠিক কী ছিল?

ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কেরালার ২৪ বছর বয়সি হিন্দু তরুণী অখিলা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম নেয় হাদিয়া৷ নিকাহ করেন মুসলিম যুবক সাফিন জাঁহানকে৷ তরুণীর বাবা তা মেনে নিতে পারেননি৷ বাবা কে. এম অশোকান কেরালা হাইকোর্টে যান, এই বিয়ের বিরুদ্ধে৷

পিতার অভিযোগ, কথিত লাভ জেহাদের জেরে তাঁর মেয়েকে ফুঁসলিয়ে মগজ ধোলাই করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে৷ ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে৷ এটা মুসলিম মৌলবাদী কিছু গোষ্ঠীর লাভ জেহাদের চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই না৷ এই ভাবে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধদীর্ণ দেশে পাচার করা হচ্ছে৷ এই অভিযোগের ভিত্তিতে কেরালা হাইকোর্ট এই বিয়েকে নিছক ধোঁকাবাজি বলে বাতিল করে দেন৷ হাদিয়াকে পিতৃগৃহে থাকার নির্দেশ দেন৷ যদিও হাদিয়া আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, তিনি সাফিনকে নিকাহ করেছেন স্ব-ইচ্ছায়, চাপে পড়ে নয়৷

হাদিয়া স্বামী সাফিন জাঁহান এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন৷ সুপ্রিম কোর্ট গত বছরের নভেম্বর মাসে কেরালা হাইকোর্টের রায় খারিজ করে হাদিয়াকে পিতৃগৃহের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে হোমিওপ্যাথি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হস্টেলে থাকার অনুমতি দেন৷ হাদিয়া ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হোমিওপ্যাথির একটা কোর্স করছিলেন, সেটা যাতে সে সম্পূর্ণ করতে পারেন৷ আপাতদৃষ্টিতে এই রাযও হাদিয়ার কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি৷ তাঁর দাবি এক প্রাপ্ত বয়স্ক নারী হিসেবে কেন সে স্বামীর সঙ্গে থাকার অধিকার পাবে না, যাকে সে স্বেচ্ছায় নিকাহ করেছেন? এটা তাঁর ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্ন৷

‘এটাকে ধর্মনিরপেক্ষতার নজীর বলে ধরা যেতে পারে’

অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে গঠিত তিন বিচারকের বেঞ্চ রায় দেন, ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী হাদিয়ার বিয়ে সঙ্গত এবং বৈধ৷ তাই স্বামীর সঙ্গে থাকার অধিকার হাদিয়ার আছে৷ এই রায়ে অসন্তুষ্ট পিতার প্রতিক্রিয়া, তিনি রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন৷ তাঁর মেয়েকে তিনি মনে করেন তুলে দেওয়া হলো এক সন্ত্রাসবাদীর হাতে৷ তিনি এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই এখনও চালিয়ে যাবেন, জাতীয় তদন্তকারি এজেন্সি এনআইএ-কে দিয়ে বিশদ তদন্তের দাবি জানাবেন৷

ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার আদায়ে হাদিয়ার আইনি লড়াই সম্পর্কে গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা সংস্থার জেনারেল সেক্রেটারি ধীরাজ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করে বললেন, এটা সারা দেশে সাড়া জাগানো এক মামলা৷ যদিও শেষমেষ সর্বোচ্চ আদালত তাঁর বিয়েকে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ এটাকে ধর্মনিরপেক্ষতার নজীর বলে ধরা যেতে পারে৷ তার আগে প্রশ্ন উঠেছে একই আইন একটা হাইকোর্ট, যেটাকে তো কম বলা যাবে না, সেই বিয়েটা মানলো না কেন? আলোচনার সূচিতে প্রায় উঠে আসছে বিচারবিভাগে সাম্প্রদায়িকতার ছায়া পড়ছে কিনা৷ প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে৷ শুধু তাই নয়, আঙুল উঠছে বিচার বিভাগের ওপর সরকারের প্রভাব খাটানোর দিকে৷ তাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও অনেকটা প্রশ্নচিহ্নের মুখে৷ তাই হাদিয়ার কেসটা অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ৷

তবে এই ধরনের ঘটনা যে ঘটবে না তা বলা যায় না৷ এ রকম আরও অনেক কেস আছে৷ যেমন রাজস্থানে যদি উঁচুজাতের পুরুষ নীচু জাতের কোনো নারীকে ধর্ষণ করে, তাহলে সেটা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে না৷ সুপ্রিম কোর্টের রায় হাদিয়ার পক্ষে গেলেও বিচার বিভাগের রাজনীতিকরণ হচ্ছে, হিন্দুত্ববাদের ছাপ পড়ছে যেটা যথেষ্ট চিন্তার কারণ৷ ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বললেন গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা সংস্থার জেনারেল সেক্রেটারি ধীরাজ সেনগুপ্ত৷

অন্যদিকে, হাদিয়া মর্যাদাহানি এবং দীর্ঘ দুই বছর ধরে মানসিক ধকল এবং হয়রানির জন্য কেরালা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন৷ বলেছেন, আমার জীবন থেকে অতি মূল্যবান দুটো বছর খোয়া গেছে৷ বাবার কাছে সে ক্ষতিপূরণ চায়নি৷ কারণ তাঁর ধারণা, তাঁর বাবা-মাকে কিছু কট্টর হিন্দুত্বাবাদী সংগঠন রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে তাঁদের ওপর প্রভাব খাটিয়েছিল৷ হাদিয়ার স্বামী সাফিন জাঁহান বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রভাব থিতিয়ে যাবার পর তিনি হাদিয়ার বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করবেন৷ কারণ ইসলাম গুরুজনদের শ্রদ্ধা করতে শেখায়৷

ভারতের মতো দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর নিজের জীবন বেছে নেবার অধিকার ও স্বাধীনতা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মারপ্যাচে খণ্ডিত হয়৷ আইনও অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷ পাশাপাশি এটাও ঠিক, সংগঠিত মৌলবাদীদের ধর্মান্তরণের চক্রান্তের উপযুক্ত তদন্ত হওয়া দরকার৷ নিছক সন্দেহের বশে ব্যক্তিমানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ অবাঞ্ছিত৷

দক্ষিণ এশিয়ায় সত্যিই কি নিজের জীবন বেছে নেয়ার অধিকার আছে নারীর? মতামত লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷