1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বোমা মেরে মাছ ধরা

২৩ নভেম্বর ২০১৬

ডিনামাইট দিয়ে মাছ-ধরার ফলে প্রবাল প্রাচীর বা কোরাল রিফগুলোর কী দশা হচ্ছে, তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই৷ অথচ সেখানেই নানা প্রজাতির মাছ ডিম পাড়ে৷ কাজেই মিয়ানমারের কাছে ব্লাস্ট ফিশিং নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা৷

https://p.dw.com/p/2T6Ee
ছবি: Project Moken / Sofie Olsen

বহু মাস ধরে ওরা এই মুহূর্তটির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন৷ সারা বিশ্ব থেকে মেরিন বায়োলজিস্টরা এসেছেন মিয়ানমারের মের্গুই দ্বীপপুঞ্জে গবেষণা করতে৷ বিরল প্রজাতি, অক্ষত কোরাল রিফ বা প্রবালপ্রাচীর, বিজ্ঞানীরা এ সব দেখার আশা রাখেন৷

গবেষণার জাহাজটিতে তারা আগামী এগারো দিন কাটাবেন৷ দিনে তিনবার করে জলে নামবেন, ডুবুরির সাজে, রাতেও, যা খুব সহজ কাজ নয়৷ শুধু এভাবে পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব৷ অর্থাৎ আগামী কয়েক মাসের জন্য পর্যাপ্ত কাজ৷

ফনা অ্যান্ড ফ্লোরা ইন্টারন্যাশনাল নামের পরিবেশ সংগঠন বিজ্ঞানীদের দলটিকে এখানে এনেছে৷ তাদের মধ্যে আছেন অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী ব্যারি রাসেল, যিনি মাছের প্রজাতি নির্ধারণের দায়িত্বে৷ অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটরির মিউজিয়াম অ্যান্ড আর্ট গ্যালারির ফিশ ট্যাক্সোনমিস্ট ড. ব্যারি রাসেল জানালেন, ‘‘গতবার আমরা কোরাল রিফের ৪০৯টি প্রজাতির মাছ নথিভুক্ত করেছিলাম; এবার এই অঞ্চলে আমরা ৫০০-র বেশি প্রজাতির দেখা পাবো বলে আমাদের ধারণা৷ কাজেই আমরা গতবার যে সব প্রজাতির দেখা পাইনি, তাদের খোঁজে রয়েছি৷''

এভাবেও মাছ ধরা যায়!

থাই প্রযুক্তি'

তবে চমকের কোনো অভাব নেই৷ প্রতিদিন সন্ধ্যায় একই দৃশ্য – ‘‘থাই প্রযুক্তি'', বললেন জেমস ট্রু, যিনি ডুবুরিদের দায়িত্বে রয়েছেন৷ তিনি ইতিপূর্বে থাইল্যান্ডে গবেষণা করেছেন, কাজেই মাছ ধরার এই পদ্ধতি তিনি চেনেন৷ ‘‘ওদিকে আরো তিনটে জাহাজ দেখতে পাচ্ছি''....মিয়ানমারের রাজনৈতিক উন্মোচনের পর এই মাছ-ধরার বোটগুলি এখানেও উদয় হতে শুরু করেছে৷

থাইল্যান্ডের প্রিন্স অফ সংক্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জেমস ট্রু জানালেন, ‘‘আলো দেখে টোপের মাছ আসে, স্কুইড আসে, প্রচুর কচি মাছেরাও আসে – সেটাই একটা বড় সমস্যা, কেননা অনেক কচি মাছ এই আলোর বোটগুলোর হাতে ধরা পড়ে, তারা কোরাল রিফ অবধি পৌঁছায়ই না৷ কাজেই এই বোটগুলো মাছের সংখ্যা নতুন করে বাড়তে দিচ্ছে না, অনেক বোট গুলোর আর মাছ-ধরিয়েরা এত দক্ষ৷''

মাত্রাধিক মাছ ধরার ফলে প্রবালপ্রাচীরগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীদের দল জানতে চান, মের্গুই দ্বীপপুঞ্জের কোন কোন কোরাল রিফ এখনও অক্ষত আছে, আর কোথায় সম্ভবত বড় দেরি হয়ে গেছে৷ সেজন্য তারা ঝিনুক অনুসন্ধান করে দেখছেন; কানকোগুলোয় যে ব্যাকটেরিয়া গজায়, সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছেন৷ কেননা বিশেষ করে এই ঝিনুকগুলো থেকে পানির উৎকর্ষ সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়; কোরাল রিফ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঝিনুকগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিনা, তা জানা যায়৷

এআরসি সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ফর কোরাল রিফ স্টাডিজের ড. অ্যামেলিয়া ওয়েঙ্গার বলেন, ‘‘রিফগুলো আরো ভালো অবস্থায় থাকবে বলে আমি ভেবেছিলাম৷ প্রথমবার জলে নেমে যখন ধ্বংসের পরিমাণ দেখলাম, তখন চমকে গেছিলাম৷ বিশেষ করে ডিনামাইট ফাটিয়ে মাছ ধরা৷ এতো ব্যাপকভাবে আমি তা কখনো ঘটতে দেখিনি৷''

বিপর্যয়ের পূর্বাভাস

মৃত প্রবালের ধ্বংসস্তূপ৷ পরিবেশ প্রণালীর পক্ষে একটি বিপর্যয়ের সমতুল৷ প্রবালপ্রাচীরগুলোতে বহু প্রজাতির মাছ ডিম পাড়ে৷ কোরাল রিফ ধ্বংস হওয়ার মানে, প্রজাতিগুলো উধাও হওয়া৷ গবেষকরা কিছু ‘‘ভুতুড়ে জাল'' খুঁজে পেলেন – পুরনো ফেলে দেওয়া বা হারিয়ে যাওয়া মাছ ধরার জাল৷ অথচ সেই জালে জড়িয়ে আজও সাগরের প্রাণী প্রাণ হারায়৷

বিজ্ঞানীদের কাজ হলো, সমাধানের খোঁজে তথ্য সংগ্রহ করা৷ জেমস ট্রু তাঁর সতীর্থদের নিয়ে জলের তলায় মাইক্রোফোন বসাবেন৷ এই সব মাইক্রোফোনে অনেক কিলোমিটার দূর থেকে ডলফিন কিংবা অন্যান্য প্রজাতির আওয়াজ ধরতে পারা যাবে; এছাড়া বেআইনিভাবে মাছ কিংবা অন্য প্রাণী ধরার হদিশ পাওয়া যাবে৷

কর্নেল ইউনিভার্সিটির মেরিন বায়োলজিস্ট ড. জোলেয়া ল্যাম্ব বললেন, ‘‘বর্তমানে মিয়ানমার, এমনকি সারা বিশ্বে কি পরিমাণ ‘ব্লাস্ট ফিশিং' বা ডিনামাইট ফাটিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে, তা আমাদের জানা নেই৷ এটাই প্রথম এ-ধরনের জরিপ৷ কিন্তু এখন আমরা মিয়ানমারের দৃষ্টান্ত থেকে দেখাতে চাই, কী পরিমাণ ব্লাস্ট ফিশিং হচ্ছে৷''

সাগরের তলায় যা কিছু অক্ষত অবস্থায় দেখতে পাবেন বলে জেমস ট্রু ও তাঁর গবেষকরা ধরে নিয়েছিলেন, তার অনেক কিছুরই খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ আটশ'র বেশি দ্বীপ বিশিষ্ট দ্বীপপুঞ্জটিতে বহু প্রবাল প্রাচীর বা কোরাল রিফ আছে, যেগুলোকে বাঁচানোর আর কোনো উপায় নেই৷ অন্যান্য রিফ আবার সুস্থ হতে ত্রিশ বছর লেগে যাবে, বলে গবেষকদের ধারণা৷ কিন্তু মেরিন বায়োলজিস্টরা এমন সব জায়গাও খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে বহু ছোট ছোট, তরুণ প্রবাল গজাচ্ছে

গবেষকদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে সংরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি করা যাবে – এভাবে যে কোরাল রিফগুলেো এখনও অক্ষত আছে, সেগুলোকে সুরক্ষিত করা যাবে৷ সেজন্য গবেষকরা তাদের দামি মাইক্রোফোনগুলো জলের নীচে এমন সব জায়গায় লুকিয়ে রাখলেন, যেখানে ব্লাস্ট ফিশিং-এর মাছ-ধরিয়েরা সেগুলোকে খুঁজে পেয়ে নষ্ট করে দিতে পারবে না৷

কার্মেন মায়ার/এসি

দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান