অসন্তোষ বাড়ছে পাকিস্তানে
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে সরকার প্রধানের ভূমিকায় প্রথম একজন নারীকে পেয়েছে যে দেশ, সেই পাকিস্তানে আজও এমন অবস্থা কী করে থাকে ভেবে পান না জাভি ফাতিমা৷ নারী হিসেবে পুরুষের সমান অধিকার পাওয়া তো অনেক দূরের কথা, এখনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে, ভিসার জন্য দরখাস্ত করতে গেলে বা বাড়ি কিনতে গেলে বাবা, স্বামী এমনকি অন্তত ভাইয়ের পরিচয় উল্লেখ না করলে চলে না৷ যেন পুরুষের পরোক্ষ একটা অনুমোদন লাগবেই৷
অথচ জাভি ফাতিমা পাকিস্তানের একজন সংবাদপাঠিকা৷ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আছে, সামাজিক অবস্থানও দুর্বল নয় মোটেই৷ তারপরও ছোটখাটো কাজে তাঁকে দেখতে হয় অধিকার প্রশ্নে নারী আর পুরুষের ব্যবধান৷ বিষয়টা খুব কষ্ট দেয় তাঁকে৷ তারপরও মেনে নিতেই হয়৷ কারণ জানাতে গিয়ে জাভি বললেন, ‘‘মানতে তো হবেই, এই সত্যটা যে আমাদের জীবনেরই অংশ৷''
জাভি ফাতিমা কিন্তু পাকিস্তানের বেশ সুবিধাভোগী নারীদেরই প্রতিনিধি৷ সুতরাং তাঁর বাস্তবতা অনেক সহনীয়৷ গ্রামাঞ্চলের অবস্থা তো খুবই ভয়াবহ৷ বেশির ভাগ জায়গায় নারীকে দেখা হয় পরিবারের বোঝা হিসেবে৷ বিয়েতে মেয়দের মত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই৷ ইচ্ছে থাক, বা না থাক, একটা বয়সে মেয়েদের বিয়ে হবে এটা অনিবার্য৷ কোনো ছেলে পাওয়া গেলে ভালো৷ মেয়ে চলে যাবে পরের বাড়ি৷ তা পরের বাড়িই যার ঠিকানা তাঁর পেছনে আর টাকা খরচ করে কী লাভ? পাকিস্তানের অনগ্রসর অঞ্চলগুলোর বেশিরভাগ পরিবারই তাই মেয়েদের লেখাপড়ার পেছনে খরচ করতে নারাজ৷ কোনো মেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র খুঁজে পাওযা যাচ্ছে না? তাহলে তো মহামুশকিল৷ আছে মুশকিল আসান করার পথও৷ পাকিস্তানে আজও চালু আছে মেয়েকে পবিত্র কোরান শরিফের সাঙ্গে বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার জন্য মুক্তির শেষ উপায়৷
এমন বিয়ে এখনো হচ্ছে পাকিস্তানে৷ তবে পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভও বাড়ছে নারীদের মাঝে৷ অবশ্য পরিস্থিতি যত খারাপই হোক, এতে হতাশ হবার কিছু দেখছেন না নারী অধিকার কর্মী এবং আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর৷ তাঁর মতে, খুব ধীরে ধীরে হলেও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার পথে পাকিস্তান ঠিকই এগোচ্ছে৷ এগিয়ে চলার গতি নিয়েও হতাশ হবার কিছু নেই৷ এমন ভরসার কথা শোনাচ্ছেন হেইনরিখ বোয়েল ফাউন্ডশেনের পরিচালক ব্রিটা পিটারসেন৷ এক্ষেত্রে জার্মানির অতীত মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে জার্মানির মেয়েদেরও যে পুরুষের অনুমোদন লাগতো সেটা কিন্তু বেশি আগের কথা নয়৷''
প্রতিবেদন: ব়েচেল ইয়াসমিন বেগ/এসিবি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ