বেলুন ফাটিয়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন নরওয়ের শিল্পী
১৯ জুন ২০১৯নরওয়ের ইয়ান হোকন এরিখসেন একাধারে ভিশুয়াল আর্টিস্ট ও স্বঘোষিত ‘বেলুন ডেস্ট্রয়ার' বা বেলুন বিনাশকারী৷ প্রায় প্রতিদিন তিনি অসলো শহরে নিজের স্টুডিওতে নতুন একটি ভিডিও তোলেন৷ তাতে তিনি নিজের তৈরি সরঞ্জাম দিয়ে বেলুন ফাটান৷
বেলুন কখনো দ্রুত ফেটে যায়, কখনো আবার বেলুন ফাটাতে তাঁকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালাতে হয়৷ এমন উদ্ভট শক সম্পর্কে ইয়ান বলেন, ‘‘আসলে মজার জন্যই এ সব করি৷ শুরুতে শুধু নিজের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করছিলাম৷ তারপর মানুষ আমার কাজ দেখে বেশ ইতিবাচকভাবে সাড়া দিতে লাগলো৷ তাই আমি কাজ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম৷ এখন এছাড়া প্রায় কিছুই করি না৷''
ধ্বংসাত্মক এই শিল্পী তাঁর ভিডিওগুলির মাধ্যমে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছেন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁকে অনুসরণ করছেন৷ তবে ৪০ বছর বয়সি এই শিল্পী শুধু বেলুন ফাটান না৷ ২০১৮ সালে তিনি স্পাগেটি নিয়ে এক ভিডিও সিরিজের কারণে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন৷ নিজের মাথা দিয়ে তিনি নুডলসগুলি আলাদা করেন৷
অথবা তিনি এমন সব জিনিসপত্র নিয়ে চর্চা করেন, যা তাঁকে বিরক্ত করে৷ যেমন অ্যালার্ম ঘড়ি অথবা ব্যায়ামের সরঞ্জাম৷ সে সব ব্যবহার করতে গেলেই তাঁর মনে হয়, যেন তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে৷ খেলাধুলা সম্পর্কে অনীহার কথা নিজেই স্বীকার করেন তিনি৷ এরিখসেন বলেন, ‘‘আমার কোনো বিশাল বার্তা নেই৷ শিল্প তার নিজস্বতার মধ্যেই যথেষ্ট৷ কোনো বার্তার প্রয়োজনই নেই৷ আমি স্ট্রিট আর্টের মতো এমন সব শিল্প খুবই অপছন্দ করি৷ এটার মানে এটাই৷ এর থেকে খারাপ কিছু হতেই পারে না৷ আমি খুবই অপছন্দ করি৷''
অনেক শিল্পী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্টুডিওর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন৷ ইয়ান এর ঠিক বিপরীতটাই করেন৷ শিল্পী ও পারফর্মার হিসেবে তাঁর কাছে ইন্টারনেট স্থায়ী প্রদর্শনীর মতো৷ তিনি বেশ সচেতনভাবে অ্যানালগ শিল্পের জগত এড়িয়ে চলেন৷ তবে তিনি এর মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিজের ইনস্টলেশনের প্রদর্শনী করেছেন৷ ইয়ান হোকন এরিখসেন মনে করেন, ‘‘সৃষ্টির কাজের শেষে প্রদর্শনীর জায়গার জন্য আবেদন করতে হয়৷ তারপর প্রদর্শনীর সুযোগ হবে কিনা, তা জানতে কয়েক মাস ধরে অপেক্ষা করতে হয়৷ কখনো এক থেকে দুই বছর সময় লাগে৷ এত দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে আমার খুবই কষ্ট হয়েছে৷''
বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর মাথায় ভিডিওর আইডিয়া আসে৷ সঙ্গে সঙ্গে সেই আইডিয়া কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷ এক স্টুডিওর স্থায়ী সাজসজ্জার মধ্যে তিনি সব সময়ে স্মার্টফোন নিয়ে ভিডিও তোলেন৷ শেষে তিনি নিজের সৃষ্টিকর্ম পোস্ট করেন৷ আদর্শ সব ছবির মাঝে তাঁর ভিডিওগুলি চোখে পড়ার মতো৷ ইয়ান বলেন, ‘‘আমির সৃষ্টিকর্মের তুলনায় আমি আরও অনেক বেশি লাইক পেলে আমার বেশ মজা লাগে৷ যেমন একটি বেলুন ফাটালে সেই দৃশ্য বছরের পর বছর ধরে জনপ্রিয় থেকে যায়৷ অনেকেই এর ফলে ক্ষুব্ধ হন৷ দেখলে খুব সহজ মনে হয়৷ আমি প্রতিদিনই এই কাজ করেছি৷''
লাইক ও মন্তব্যের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না৷ তাতে উৎসাহ পেয়ে ইয়ান হোকন এরিখসেন ইন্টারনেটে নিজের সৃষ্টিকর্ম ধ্বংস করেন৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেৎসান/এসবি