1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেটোফেন সম্পর্কে ভুল ধারণা

রায়হানা বেগম১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮

বিশ্বখ্যাত সংগীতস্রষ্টা বেটোফেন ব্যক্তিমানুষ হিসাবে খুব সহজ ছিলেন না৷ কানে শুনতে না পারার সমস্যাটা সব সময় পীড়িত করত তাঁকে৷ খিটখিটে মেজাজি , নারীসঙ্গহীন এক মানুষ ছিলেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/FKuJ
বন শহরে বেটোফেন-এর মুর্তিছবি: Beethoven-Fest

প্রচলিত কোনো কাঠামোতেই ফেলা যাবে না নিঃসঙ্গ ও অসাধারণ প্রতিভাবান এই ব্যক্তিত্বকে৷ অধীনস্থ কর্মচারী থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বা রাজা রাজড়া কাউকে ছাড় দিতেন না তিনি৷

ব্যক্তি বেটোফেন

ব্যক্তি বেটোফেন সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানি, তার বেশির ভাগই পাওয়া গেছে বেটোফেনের চিঠিপত্র ও দিনলিপি থেকে৷ চিঠিতে তিনি মানুষের মন্দ দিক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ শ্রেণীগত পার্থক্যের কারণে তাঁর পক্ষে যে পছন্দের কোনো মেয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়া সহজ ছিল না, সে বিষয়েও অনুযোগ করেছেন তিনি৷

Ludwig van Beethoven bei einem Treffen von 1812
বেটোফেনকে নিয়ে ১৮১২ সালে আঁকা চিত্রকর্মছবি: Public Domain

নিজেকে তিনি খুব পরিশীলিত বলে দাবি করেননি কখনও৷ আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধব কাউকে বকা ঝকা করতে ছাড়তেন না বেটোফেন৷ এমনকি যে রাজন্যের কাছ থেকে প্রচুর সাহায্য পেয়েছেন, তাঁকেও কড়া কথা বলতে ছাড়েননি বেটোফেন৷ তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ 'রাজা, আপনি আজ যা, তা হঠাত্ করে জন্ম সূত্রে পাওয়া৷ কিন্তু আমি আজ যা, তা অর্জন করে পাওয়া৷ পৃথিবীতে হাজার হাজার রাজা রাজড়া আগেও ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন৷ কিন্তু বেটোফেন একমেবাদ্বিতীয়ম৷'

সবার প্রয়োজনে বেটোফেন

বেটোফেনের চিঠিপত্র বা দিনলিপি থেকে যার যখন যা প্রয়োজন, সেই অংশটুকুই বেছে নিয়েছেন ৷ সেজন্য বেটোফেনের কোনো কোনো উক্তিকে হয়তো রাজনীতিগন্ধী বলে মনে হবে, যাতে রয়েছে প্রচ্ছন্ন বিদ্রোহের আভাস৷ আবার কোনো মন্তব্যে ফুটে ওঠে আভিজাত্যের দাম্ভিকতা৷ তাই পরবর্তীতে একনায়ক শাসকেরা বেটোফেনের সংগীতের মাধুর্যকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করার সুকৌশলী প্রচেষ্টা চালিয়েছে৷

১৯৩৭ সালে হিটলারের জন্মোত্‌সবে বাজানো হয়েছে বেটোফেনের নবম সিম্ফনি৷ হিটলারের মৃত্যুর খবরেও বেতারে ভেসে এসেছে বেটোফেনের এই বিখ্যাত সিম্ফনি৷ অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ভাইমারার প্রজাতন্ত্রের সময়ও রাজনীতিতে বেটোফেনের সংগীতের প্রয়োগ লক্ষ্য করা গেছে৷ সেই সময় ডানপন্থী রাজনীতিকরা তাঁর সংগীতে খুঁজে পেয়েছেন ফরাসীবৈরিতা আর পরবর্তীতে বামপন্থীরা পেয়েছেন বিপ্লবাত্মক অনুপ্রেরণা৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রাক্তন পুর্ব জার্মানির কমুনিস্ট শাসকেরা বেটোফেনের সংগীতে আবিষ্কার করেছেন বিশ্বশান্তির জন্য এক সংগ্রামী সুর৷

Musik Ludwig van Beethoven komponiert
বেটোফেন-এর নিজস্ব জগত্‌ ছিলো এরকমইছবি: picture-alliance / akg-images

বেটোফেন, এক খামখেয়ালি শিল্পী ?

বেটোফেনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, মাত্রাধিক অতিরঞ্জন বা তাঁর সংগীতের ভুল ব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই বলা যায় না৷ বেটোফেন স্থান কাল পাত্র ভেদে বিভিন্ন সময়ে যা বলেছেন, তা বিচার করতে হবে সময় ও অবস্থার প্রেক্ষিতে৷ সংগীতে একটা নতুন দিক নির্দশনা দেয়াই ছিল তাঁর লক্ষ্য৷ সংগীতেই সঁপে দিয়েছিলেন তিনি তাঁর মনপ্রাণ৷ যা তাঁকে আর্থিক দিক দিয়েও স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছিল৷ কিন্তু তিনি ছিলেন প্রচলিত প্রথাবিরোধী এক শিল্পী৷

বসবাস করতেন ভিয়েনার অদূরে নিতান্তই সাদামাটা এক বাড়িতে৷ চেহারা বা পোশাক পরিচ্ছদের পারিপাট্য নিয়ে মাথা ঘামাতেন না৷ ছিলেন চিরকুমার৷ সংগীতের জন্যই যেন ছিল তাঁর বেঁচে থাকা৷ সকালে সংগীত রচনা, বিকালে বেড়াতে যাওয়া, দুপুরে ভাল খাওয়া, এই ছিল তাঁর দৈনন্দিন রুটিন৷ বেটোফেনের অসংখ্য ছবি ও প্রতিকৃতি থেকে মানুষের মনে একটা ধারণাই বদ্ধমূল হয়ে আছেঃ এলোমেলো চুল, গভীর দৃষ্টি৷ বিশাল মাপের এক সংগীত প্রতিভা৷ কিন্তু তাঁর জীবনের নিদারুণ এক ট্র্যাজেডি, তাঁর শ্রুতিহীনতার কথা একবারও কি মনে পড়ে মানুষের ?

বেটোফেনের বধিরত্ব

বেটোফেনের বয়স যখন ৩০-এর কিছু ওপরে, তখন তাঁর শ্রুতিজনিত সমস্যাটা এতই বেড়ে যায় যে, তা আর গ‌োপন করা সম্ভব হয়নি৷ লোকের মনে প্রশ্ন জাগে, একজন বধির সংগীতকার, এটা কি করে সম্ভব ? বেটোফেনের এক লেখায় ফুটে ওঠে তাঁর সেই মর্মবেদনা. 'আমার কানে দিনরাত সব সময় অসহনীয় এক শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে'৷ এই সময়ে তিনি আত্মহত্যার চিন্তাও করেন৷ এমন কি অন্তিম এক চিঠিও লিখেছিলেন৷ যা অবশ্য পরে পাঠান‌ো হয়নি৷

বধিরত্ব যে বেটোফেনকে কতটা কাতর করেছিল, তা বোঝা যায়, এই চিঠির মর্মস্পর্শী কয়েকটি লাইন থেকেঃ 'ওহে মানুষগণ, তোমরা আমাকে মনে কর - বৈরীভাবাপন্ন, একগুঁয়ে, অসামাজিক এক ব্যক্তি, কিন্তু তা যে আমার প্রতি কি অন্যায় অবিচার'!