বেওয়ারিশ কুকুরমুক্ত ঢাকাই কি সমাধান?
ঢাকা শহরে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে৷ এ নিয়ে অনেক নাগরিকের অভিযোগও আছে৷ কিন্তু বেওয়ারিশ কুকুর সরিয়ে ফেলাই কি সমাধান?
ঢাকায় কুকুরের সংখ্যা
এক জরিপ অনুযায়ী ২০১৬ সালে ঢাকায় উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকা মিলিয়ে মোট ৩৭ হাজার কুকুর ছিল৷ এর মধ্যে উত্তরে ২৪ হাজার আর দক্ষিণে ১২ হাজার৷ তবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বলছে, কুকুরের সংখ্যা এখন দেড় লাখ৷ ঢাকা শহরে প্রতি কিলোমিটারে ১২টি আর প্রতি ২০০ মানুষের বিপরীতে ২০০টি কুকুর বসবাস করে ৷
টিকা প্রদান
ঢাকার উত্তরের ২৬ শতাংশ কুকুর এবং দক্ষিণের ১৩ শতাংশ কুকুরকে টিকা এবং বন্ধ্যাত্বকরণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে৷ পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বলছে, জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে ৭০ শতাংশ কুকুরকে প্রথম রাউন্ডের টিকা দেওয়া হয়েছে৷ বাকি আছে আরও দুই রাউন্ড৷
কুকুর সরানোর সিদ্ধান্ত
রাস্তায় কুকুরের কারণে বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার অভিযোগ আছে অনেক নাগরিকের৷ তার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ৩০ হাজার কুকুর সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানিয়েছিলেন, বাসিন্দাদের কাছ থেকে কুকুর সম্পর্কিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অনেক অভিযোগ পাওয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
পশু প্রেমীদের প্রতিবাদ
এই সিদ্ধান্তকে বেআইনি বলছে পশুপ্রেমী সংগঠনগুলো৷ কেননা ২০১৯ সালের প্রাণী কল্যাণ আইনের সপ্তম ধারা অনুযায়ী, মালিকবিহীন কোনো প্রাণীকে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না৷ স্থানান্তর করা হলে কয়েক হাজার প্রাণী খাদ্যের অভাবে মারা যাবে বলেও মনে করেন তারা৷ ধানমণ্ডি ১০ এ সড়কের পাশে দেয়ালে মানুষ ও কুকুরের সহাবস্থান এবং তাদের প্রয়োজনীয়তার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছেন প্রতিবাদকারীরা৷
প্রতিবাদে তারকারাও
পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার (পিএডব্লিউ) ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান, চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমাসহ পশুপ্রেমী অনেকে৷ জয়া আহসান বলেন, ‘‘প্রশাসন বলুন বা নগর কর্তৃপক্ষ, তাদের কাজ কিন্তু সৃষ্টিশীলতায় মনোনিবেশ করা, সেখানে তারা যদি ধ্বংসাত্মক কাজ করে সেটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়৷ এছাড়া এ বিষয়ে আইনও রয়েছে, সরকার বা জনগণ কেউ এই আইনের বাইরে না৷’’
‘ডগ লাইভস ম্যাটার’
সিটি কর্পোরেশনের কুকুর সরানোর খবর বেরুনোর পর থেকে নিয়মিতই ঢাকায় প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন পশুপ্রেমীরা৷ পোস্টার ব্যানারে তুলে ধরছেন তাদের বার্তা৷ আর সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের স্লোগানের আদলে এই দুইজন লিখেছেন ‘ডগ লাইভস ম্যাটার’৷
‘এ শহর আমাদেরও’
আন্দোলনকারীরা মনে করেন শহরে শুধু মানুষ নয়, কুকুরদেরও থাকার অধিকার আছে৷ ছবির এই ব্যানারে কুকরদের ভাষ্যে লেখা, ‘‘আপনাদের মতো এ শহর আমাদেরও, এভাবে তাড়িয়ে দেবেন না৷’’
‘মানুষ হইতে সাবধান’
কিন্তু বেওয়ারিশ কুকুরের কারণে শহরের রাস্তাঘাটে বিড়ম্বনা আর বিব্রত হওয়ার অভিযোগও করেন অনেকে৷ যদিও কুকুর মেরে ফেলা বা তাদের সরিয়ে ফেলাকে নিষ্ঠুর আচরণ বলে মনে করছেন পশুপ্রেমীরা৷
সমাধান কী
আবু নাছের বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছন, কুকুর সরানোর সিদ্ধান্তটি এখনও পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে৷ মেয়র দেশের বাইরে থেকে ফিরলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷ তিনি জানান, ২০১৫ সালে আদালত নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত বছরে প্রায় ২০ হাজার কুকুর মেরে ফেলতো কর্তৃপক্ষ৷ পশুপ্রেমীরা বলছে, কুকুর না সরিয়ে জলাতঙ্ক টিকা ও বন্ধ্যাত্বকরণ প্রকল্প ঠিকমতো চালিয়েই সমস্যার সমাধান সম্ভব৷