1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৃদ্ধ বাবা-মাকে অবহেলা করা কি আইনতঃ অপরাধ ?

দেবারতি গুহ২৫ মার্চ ২০০৮

আমাদের জীবনে সমাজ যেমন আবশ্যক, আবশ্যক পরিবারও৷ ছোটবেলা থেকে বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনকে ঘিরেই সৃষ্টি হয় আমাদের জগত্৷ তারপর ধীরে ধীরে স্কুল-কলেজ, বন্ধু-বান্ধব, অফিস-কাছারী, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, বীমা প্রতিষ্ঠান – আরো কতো কিছুর সঙ্গেই না আমাদের সম্পর্ক৷ আমাদের জীবনযাপন৷ সব

https://p.dw.com/p/Dil8
ছবি: dpa

�েয়ে মজার ব্যাপার, জীবনচক্রের ঘূর্ণনের সঙ্গে-সঙ্গে বিভিন্ন উপাদানে আমাদের জীবন ভরে ওঠে, অন্ততঃপক্ষে একটা সময় অবধি৷ ছোটবেলা কাটিয়ে উঠে কৈশোর, তারপর যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য৷ এই পর্যায়ক্রমিক সত্য শুধু আপনার-আমার নয়, সবার জন্য৷

আমাদের সমাজে, এখানে বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশের কথাই বলা যাক, এই জীবন-চক্রের ধারাবাহিকতায় যেটা প্রায় স্বতঃসিদ্ধিতে পরিণত হয়েছে, সেটা হল – আমাদের ছোটবেলায় বাবা-মা যেমন তাদের সন্তানদের লালন-পালন করেন, ঠিক তেমনই পিতা-মাতা বৃদ্ধ হলে, তখন সন্তানদেরও কর্তব্য তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়া৷

বিদেশে অবশ্য ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা৷ সেখানে সমাজব্যবস্থা ভিন্ন, রীতি-নীতিও ভিন্ন৷ সামাজিক নিরাপত্তা পাশ্চাত্য দেশগুলিতে অনেক বেশি৷ এমনকি জার্মানিতেও বৃদ্ধ বাবা-মা বৃদ্ধাশ্রমে যাবেন, অথবা তাদের নিজেদের খরচ নিজেরাই বহন করবেন – এটাই স্বাভাবিক৷ কর্ম-জীবনের উপার্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, এজন্য সরকারি ভাতাও পেয়ে থাকেন তাঁরা৷ দুই পুত্রের জনক-জননী হয়েও তাদের উপর নির্ভর করতে চান না এখানে কেউ৷ যেমন জার্মানির Osnabrück শহরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত চর্মরোগ-বিশেষজ্ঞ Dr. Peter Dusche৷

কিন্তু, আমাদের দেশে তো তা নয়৷ সন্তান, বিশেষতঃ পুরুষ সন্তানেরা বাবা-মাকে দেখবে, এটাই তো ধরেই নেওয়া হয়৷ এটাই তাদের কর্তব্য৷ কিন্তু, ক্ষেত্রবিশেষে আমাদের দেশের পুত্র ও পুত্রবধূরা, তাদের বৃদ্ধ ও অসহায় পিতা-মাতার উপর অমানুষিক অত্যাচার করে থাকে৷ কটূকথা, মারধর, এমনকি বিষপ্রয়োগের ঘটনাও ঘটে চলেছে প্রায়শঃই৷ বাবা-মায়ের উপর পুত্র-পুত্রবধূদের অত্যাচার বাড়ছে৷ এরপরেও, অনেক বৃদ্ধ দম্পতি চক্ষুলজ্জা, অন্ধস্নেহ, আর্থিক অসচ্ছলতা সহ নানাবিধ কারণে নিজের পুত্র ও পুত্রবধূদের বিরুদ্ধে থানা-পুলিশ বা কোর্ট-কাছারি করতে চান না৷ তাঁরা ধরে নেন এটাই তাঁদের ভাগ্য৷ তাই মুখ বুজে পড়ে থাকেন৷ অনেক সময় কষ্টার্জিত অর্থে তৈরী ঘর বাড়ি বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিয়ে, হয় কাশীবাসী হন, নয়তো বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই নেন৷ কিন্তু, কোন কোন ক্ষেত্রে, পিতা-মাতা একরকম বাধ্য হয়ে কোর্টের দ্বারস্থ হলে, কলকাতা হাইকোর্ট কতোগুলি ঐতিহাসিক রায় দেয়৷ যেমন, উষাদেবীর ঘটনা৷

২০০৭ সালের জুন : বড় ছেলে জীবনকৃষ্ণ দত্ত, রেলের অফিসার, ছোট ছেলে অশোককৃষ্ণ পশ্চিম বঙ্গের অর্থ দফতরের কর্মী৷ লোক আদালত ক-বছর আগে দুই ছেলেকে নির্দেশ দিয়েছিল, ৯০ বছরের বৃদ্ধা মাকে মাসে ৫০০ টাকা করে খোরপোষ দিতে৷ কিন্তু উষারানি দত্ত এক টাকাও পাননি৷ উল্টে তাঁকে, তাঁর মৃত স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়৷ উষারানি বলেছিলেন, আমি নিজের বাড়িতে থাকতে চাই৷ ছেলেদের সঙ্গেই থাকতে চাই৷ কদিন আর বাঁচবো৷ স্বামীর তৈরী বাড়িতে মরতে বড় সাধ৷ তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানান, কোথায় যাবো, কি করে বাঁচব, বলে দিন৷ হাইকোর্ট ছেলেদের নির্দেশ দিল – খোরপোষ তো দিতেই হবে, এছাড়া উষাদেবী যখন যেখানে খুশি থাকবেন৷ শুধু যখন যেখানে থাকবেন, তখন সেই এলাকার থানায় জানিয়ে দেবেন, যে কোথায় থাকছেন৷ পুলিশ তার নিরাপত্তা এবং সসম্মানে থাকার ব্যবস্থা করবে৷

বৃদ্ধ বাবা-মাকে অবহেলা করা আইনতঃ অপরাধ৷ কলকাতা হাইকোর্টে এখন প্রায় প্রতিদিনই উষাদেবী, লক্ষ্মীদেবী, অনিল সরকারদের ভিড়৷ তাদের প্রত্যেকেই পুত্র ও পুত্রবধূর অত্যাচারে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন৷ এমন কোন দিন নেই, যেদিন হাইকোর্টে কোনো-না-কোনো অসহায় পিতা-মাতার শেষ কটা দিন একটু শান্তিতে বাঁচার জন্য আবেদন নিয়ে মামলা না হচ্ছে৷ গত কয়েক মাসে হাইকোর্টে এধরনের শতাধিক মামলা হয়েছে৷ তবে হাইকোর্ট বারবার বলেছে, পুত্র-পুত্রবধূরা যদি মনে করেন যে, মা-বাবার সঙ্গে থাকা যাচ্ছে না, তাহলে তারা যেন বাড়ি ছেড়ে চলে যান৷ বাড়ি ব্যবহার করব, অথচ বাবা-মাকে দেখব না, তাদের উপর অত্যাচার করব – তা হবে না৷

এ-বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে শোনা গেল, যে বৃদ্ধ মা-বাবা এবং অসহায় বয়স্ক ব্যক্তিদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা দিতে, বাজেট অধিবেশনেই সরকার একটি বিল আনতে যাচ্ছে৷ ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার একটি বৈঠকে এই বিল অনুমোদিত হয়৷ নতুন বিলটি বয়স্ক ব্যক্তিদের একদিকে যেমন আইনী সহায়তা দেবে, তেমনি অন্যদিকে বৃদ্ধ, অসহায় মাতা-পিতাকে যদি সন্তান, এমনকি নাতিরাও পরিত্যাগ করে অথবা অত্যাচার করে, তাহলে তাদের কারাবাস ও আর্থিক জরিমানা করা হবে৷ এছাড়া, উইল কররা পর কারো উপর যদি অত্যাচার করা হয়, তবে সে ব্যক্তির উইল পরিবর্তন করার অধিকার থাকবে৷ এর জন্য সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে পারেন৷