1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বুলগেরিয়ায় তৈরি হচ্ছে উচ্চ মানের পার্সিয়ান কার্পেট

২৫ নভেম্বর ২০২২

পার্সিয়ান কার্পেট যে কোনো প্রাসাদ বা অট্টালিকার মহিমা বাড়িয়ে দেয়৷ তবে এমন গালিচা এখন আর শুধু ইরানেই বোনা হয় না৷ ইউরোপের একটি দেশেও অতি যত্নসহকারে উচ্চমানের পার্সিয়ান কার্পেট সৃষ্টি করা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4K2p9
Videostill DW Euromaxx 20.08.2022 Perserteppich
ছবি: DW

প্রাকৃতিক রং দিয়ে হাতের কাজ, একেবারে অংকের হিসেব মেলানো ডিজাইন৷ এমন পারস্যদেশীয় গালিচা বুলগেরিয়ার নিনো পারপুলভের গর্ব৷ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গোটা বিশ্বের শীর্ষ মহলে তার কাজ বিশেষ সমাদর পেয়ে আসছে৷ পারপুলভ বলেন, ‘‘এত বছর ধরে আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ সেই সাফল্যের শীর্ষ ঘটনা ছিল ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ৷’’

মূল ডিজাইনের হুবহু অনুকরণে তৈরি নতুন গালিচার বৈশিষ্ট্য রংয়ের বৈচিত্র্য৷ একটি বয়লারের মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদানের পিগমেন্ট ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ফোটানো হয়৷

গাণিতিক নিপুণতার সঙ্গে সঠিক রং স্থির করা হয়৷ কর্ণধার স্বয়ং সেই দায়িত্ব পালন করেন৷ ছোট এক নোটবইয়ে তাঁর সেই জ্ঞান লিপিবদ্ধ রয়েছে৷ সঠিক রংয়ের ফর্মুলার গোপন রহস্য তার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে৷ নিনো পারপুলভ বলেন, ‘‘ক্রেতার ইচ্ছা অনুযায়ী গালিচার রং নিখুঁত রাখাই আমার দায়িত্ব৷ সেই লক্ষ্যে আমি সাড়ে ছয় হাজার পিগমেন্ট নিয়ে কাজ করি৷ সেগুলি দিয়ে অনেক রং সৃষ্টি হয়৷’’

বুলগেরিয়ায় তৈরি হচ্ছে পার্সিয়ান কার্পেট

বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়া থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে কস্টানডোভো নামের ছোট গ্রামে কার্পেটের কারখানা অবস্থিত৷ সেখানে সময় যেন থেমে রয়েছে৷ বড় শহরের তুলনায় গ্রামের ঘড়ির কাঁটা আরও ধীরে চলে৷ গালিচা তৈরির নারী শ্রমিকরাও কস্টানডোভো গ্রামের মানুষ৷ আয়তন ও রংয়ের বাহার অনুযায়ী তারা কখনো দশ মাস পর্যন্ত একটি কার্পেট তৈরির কাজ করেন৷

সূক্ষ্ম বুননের দৌলতেই এমন গালিচাকে পার্সিয়ান কার্পেট বলা চলে৷ গালিচার দুই দিকেই নক্সা থাকে৷ প্রাচীন কাল থেকেই আজকের ইরানে এমন পারসিক গালিচা তৈরি করা হচ্ছে৷

অনেক বাছাই প্রক্রিয়ার পর কার্পেটের নক্সা ছোট ছোট চৌকো অংশে বিভক্ত করা হয়৷ এ ক্ষেত্রে নির্ভুল কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সে কারণে কয়েক সেন্টিমিটার পর পরই মান পরীক্ষা করা হয়৷ একটি মাত্র ত্রুটিই গোটা গালিচা নষ্ট এবং পারিবারিক ব্যবসা দেউলিয়া হবার দিকে ঠেলে দিতে পারে৷ ফলে তাঁতিদের কাঁধে বিশাল দায়িত্ব রয়েছে৷ নিনো পারপুলভ মনে করেন, ‘‘সাধারণ কোনো নারী তাঁতি এখানে কাজ করলে তার পক্ষে এত রকম রং সামলানো সম্ভব হতো না৷ একটি গালিচায়ই ২৪০টি পর্যন্ত রং থাকতে পারে৷’’

ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী কার্পেট শিল্প

রংয়ের এই অসাধারণ বৈচিত্র্য পার্সিয়ান কার্পেটের বৈশিষ্ট্য৷ কারখানার যন্ত্রে তৈরি গালিচায় রংয়ের বাহার অনেক কম৷ কস্টানডোভো গ্রামে প্রতিটি গালিচার আলাদা নক্সা ও রংয়ের বিন্যাস থাকে৷ সেই অনুযায়ী দামেরও রকমফের ঘটে৷ প্রত্যেকটি নক্সার জন্য সবার আগে তাঁতিদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দিতে হয়৷ লিডিয়া রাডানোভা তাঁদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই কাজে অবিচল ও মনোযোগী হতে হয়৷ সব সময়ে কার্পেটের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়৷''

১৫০০ সাল নাগাদ পার্সিয়ান কার্পেট প্রথমবার ইউরোপে আনা হয়েছিল৷ তখন ইউরোপের রাজপ্রাসাদে প্রাণী, ফুল ও গাছপালার মোটিফ দিয়ে অলংকরণ শুরু হলো৷ তারপর থেকে সেটি ইউরোপের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠলো৷ আরো অনেক নতুন মোটিফ উঠে এলো৷

কস্টানডোভো গ্রামে সেই সংস্কৃতি আজও বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে৷ ইউরোপের শেষ পার্সিয়ান কার্পেট নির্মাতা এখনো তাঁর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷

ইয়ুরি রেশেটো/এসবি