1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিহারিরা বাংলাদেশে ‘অবহেলিত'

১৯ অক্টোবর ২০১৯

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশার দিকে মনোনিবেশ করলেও ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাড়ি জমানো বিহারি মুসলমানদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র অনেকেরই অজানা৷

https://p.dw.com/p/3RYa8
Biharis  Dhaka, Bangladesch Pakistan
ছবি: DW/M.M.Rahman

ভারতের পূর্বরাজ্য বিহার থেকে বাংলাদেশে আসা অবাঙালি মুসলমানদের দেশটিতে ‘বিহারি' নামে ডাকা হয়৷ সরকারি তথ্যানুযায়ী, দেশটির ১৩টি জেলার ১১৬টি ক্যাম্পে এরা বাস করেন৷ এরমধ্যে ঢাকার ৪৫টি ক্যাম্পে ‘মানবেতর' জীবনযাপন করছেন এক লাখ বিহারি৷

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে জন্ম নেয় পাকিস্তান৷ সেসময় বিহার থেকে অনেক মুসলমান পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ এখনকার বাংলাদেশে চলে যান৷ শোষণ ও বঞ্চনার পিষ্ট বাঙালিরা ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেন৷ পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও জাতিগত সমস্যাও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ৷

উর্দুভাষী বিহারীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিলেও পাকিস্তানে যেতে ব্যর্থ হন৷ ইসলামাবাদের পক্ষে সমর্থন জানানোয় বাংলাদেশিরাও তাদের আর বিশ্বাস করে না৷ ফলে সমাজে বিহারিদের অন্তর্ভূক্ত করতে কেউই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি৷

বিহারিদের ভাষ্য, ক্যাম্পগুলোর ছোট ছোট কক্ষে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়৷ একটু বৃষ্টি হলেই সেখানে নানান ধরনের সমস্যা মোকাবেলা কবতে হয় তাদের৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তারা ভালো চাকরিও পান না৷ সংখ্যালঘু পরিষদের প্রধান নির্বাহী খালিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারি অফিসে উচ্চতর পদে কোনো বিহারি পাবেন না, কারণ তারা সেজন্য যোগ্যও নন৷''

Biharis  Dhaka, Bangladesch Pakistan
বিহারিদের পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পায়ছবি: DW/M.M.Rahman

ফলে বিহারিরা নরসুন্দর, কসাই, রিকশা চালক, পরিবহন শ্রমিক, অটোমোবাইল মেকানিকের মত ছোট ছোট কাজ করে উপার্জন করতে বাধ্য হন৷ বিহারি পরিবারের শিশুদেরও তাড়াতাড়ি কাজ যোগ দিতে হয়, কারণ সন্তানদের শিক্ষিত করার মত আর্থিক সক্ষমতা তাদের নেই৷

সুপ্রিম কোর্টের ২০০৮ সালের একটি আদেশ অনুযায়ী, বিহারিদের জাতীয় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা থাকলেও তা হয়নি৷ বেশিরভাগ বিহারি বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য যোগ্য নন৷ কারণে তারা অস্থায়ী ক্যাম্পে বাস করেন৷ বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী, পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আবদেনকারীকে তার স্থায়ী ঠিকানা সরবরাহ করতে হয়৷

উর্দু-ভাষীদের পুনর্বাসন আন্দোলনের সভাপতি সাদাকাত খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা পাঁচ দশক ধরে অমানবিক জীবনযাপন করছি, নূন্যতম সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি৷ আমাদের সন্তানদের মধ্যে কেবল পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পায়৷ আমরা আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষমতা অর্জন করতে চাই, আমরা আমাদের সন্তানদের স্কুলে যেতে দেখতে চাই৷''

বিহারিদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ ফলে এদের এখনো বাংলাদেশের বিপক্ষের মানুষ বলেই বিবেচনা করা হয়৷

খালিদ হোসেন নামে একজন মুসলিম বিহারি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা ক্যাম্পগুলোতে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস না করে সমাজে অন্তর্ভুক্ত হতে চাই৷ আমাদের বাংলাদেশবিরোধী বলে যে তকমা দেয়া হয় তা থেকেও বেরিয়ে আসতে চাই আমরা৷''

সরকার সম্প্রতি বিহারিদের ঢাকা থেকে অন্য অঞ্চলে স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা জানায়৷ সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে বহুতল ভবন তৈরি করে বিহারিদের রাখা হবে৷

এই পরিকল্পনাটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামীমা নার্গিস ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই পরিকল্পনাকে সামনে রেখে সরকার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে৷

তবে বিহারীরা সরকারের এই পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ তারা বলছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে বিহারিদের সমাজ থেকে আরো বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে৷

রাহাত রাফি/এসআই/কেএম 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান