1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিস্তর সরকারি অনুদান সত্ত্বেও পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২ ডিসেম্বর ২০২১

নীতি আয়োগের দারিদ্র্য সূচকে কয়েকটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ৷ কয়েকটি ক্ষেত্রে জাতীয় গড়ের থেকে এই রাজ্য ভাল অবস্থানে রয়েছে৷ বিস্তর অনুদান প্রকল্প সত্ত্বেও কেন পশ্চাদপদতা?

https://p.dw.com/p/43kUw
Indien | Westbengalen Armut
ছবি: Payel Samanta/DW

একগুচ্ছ মাপকাঠির ভিত্তিতে নীতি আয়োগ তৈরি করেছে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক৷ পুষ্টির মাত্রা, স্কুলে উপস্থিতি, শিক্ষার মান, মায়ের স্বাস্থ্য, জ্বালানির ব্যবহার, পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থার পর্যালোচনা করা হয়েছে৷ এর সঙ্গে বাড়ির হাল, ব্যাংক ও ডাকঘরে আর্থিক লেনদেনের ক্ষমতা থেকে শৌচালয়, রাজ্যে রাজ্যে এমন নানা দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে৷

এই সমস্ত মাপকাঠির ভিত্তিতে নীতি আয়োগ নির্ধারিত মাপকাঠিতে রাজ্যের ২১ শতাংশের বেশি মানুষকে দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এই রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ মানুষ অপুষ্টির কবলে৷ দুই-তৃতীয়াংশের মানুষ রান্নার গ্যাস ব্যবহার করতে পারেন না৷ প্রায় অর্ধেক মানুষের পাকা বাড়ি নেই৷ এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বাড়িতে নেই নিজস্ব শৌচালয়৷ দারিদ্রের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে দ্বাদশ স্থানে৷

নীতি আয়োগের দারিদ্র সূচকে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলা বেশি পিছিয়ে পড়া৷ পুরুলিয়া, উত্তর দিনাজপুর, মালদা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও বীরভূমে দারিদ্র্যের প্রকোপ সর্বাধিক৷ অপেক্ষাকৃত ভালো জায়গায় রয়েছে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়ার মতো জেলা৷ পুরুলিয়ার অর্ধেক মানুষই দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত, কলকাতায় এই হার ৩ শতাংশ৷

পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে একাধিক জনমুখী প্রকল্প চালাচ্ছে৷ সরাসরি আর্থিক অনুদান থেকে সাধারণ মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলার একগুচ্ছ প্রকল্প চালু রয়েছে৷ কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ মা ক্যান্টিনে পাঁচ টাকায় খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে শিশু ও মায়েদের দেখভাল, বাংলা আবাস যোজনা থেকে মিশন নির্মল বাংলা চলছে৷

‘সরকারি প্রকল্পের চালডালে পেট ভরতে পারে, কিন্তু পুষ্টি হয় না৷’

তা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মাপকাঠিতে রাজ্য পিছিয়ে কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টাকে উল্টোদিক থেকে ভাবতে হবে৷ সরকারি প্রকল্প চলা সত্ত্বেও দারিদ্র কেন, তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, দারিদ্র আছে বলেই সরকারকে এ ধরনের প্রকল্প নিতে হচ্ছে৷ কিন্তু মা ক্যান্টিনের মতো প্রকল্প এখনো অল্প জায়গায় সীমাবদ্ধ, প্রকল্পের পরিধি যত বাড়বে তত সুফল মিলবে৷''

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভৌগোলিক অসাম্য অনেকক্ষেত্রে দারিদ্র্যকে প্রভাবিত করেছে৷ যেখানে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিঙে দারিদ্র ১১ শতাংশের কিছু বেশি, সেখানে কাছাকাছি দুই জেলা জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে দারিদ্র প্রায় দ্বিগুণ৷ কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনায় দারিদ্র্যের হার কম হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভৌগোলিক প্রতিকূলতার দরুন দারিদ্র অনেকটাই বেশি৷

যদি মাপকাঠির দিকে নজর রাখা যায়, সেই বিচারে কয়েকটি ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য রাজ্যের থেকে ভালো জায়গায় রয়েছে৷ রাজ্যে শিশু-কিশোরদের মৃত্যুর হার কম৷ স্কুলের পড়ুয়াদের হাজিরা বেশ ভালো৷ অধিকাংশ মানুষের ব্যাংক ও ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট রয়েছে৷ পানীয় জলের অভাব অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ৷ মায়েদের স্বাস্থ্য কিংবা স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রে এই রাজ্যের অবস্থান খারাপ নয়৷

কিন্তু নীতি আয়োগ এর রিপোর্টে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের পুষ্টি সংক্রান্ত তথ্য৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে মানুষের রোজগার কমেছে৷ এর ফলে ক্রয়ক্ষমতাও কমেছে৷ সরকারি প্রকল্পের চালডালে পেট ভরতে পারে, কিন্তু পুষ্টি হয় না৷ আবার প্রকল্পের সুবিধা যে সকলে পাচ্ছেন, এমনটাও নয়৷''

‘সরকারি প্রকল্প চলা সত্ত্বেও দারিদ্র কেন?’: অভিরূপ সরকার

স্কুলের পড়ুয়ারাও এই অপুষ্টি বিপদের বাইরে নয়৷ শিশুর পুষ্টির এক-তৃতীয়াংশ আসে মিড-ডে মিল থেকে৷ স্কুল থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের প্রায় অর্ধেক পায় তারা৷ তিনি বলেন, ‘‘শপিং মল থেকে সিনেমা হল সবই খুলে গেল, শুধু স্কুল বন্ধ রইল৷ এর ফলে ছেলেমেয়েরামিড ডে মিল পেলো না৷ তাদের বাবা-মা যে চালডাল বাড়ি নিয়ে গেলেন, সেটা ভাগ হয়ে গেল৷''

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শৌচালয় না থাকার জন্য মানুষ ডায়েরিয়াতে ভোগে৷ এতেও অপুষ্টি বাড়ে৷ তাছাড়া পাকা বাড়ি না থাকার কারণে কালাজ্বর বা সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয় এ রাজ্যে৷

কোভিড পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান সর্বত্র সংকুচিত হয়েছে, রাজ্য সরকারের অনুদান অনেক মানুষকে সংকটকালে ভরসা জুগিয়েছে৷ কিন্তু এটাই স্থায়ী সমাধান নয় বলে মত অর্থনীতিবিদদের একাংশের৷ অভিরূপ সরকার বলেন, ‘‘ভারী শিল্প তৈরির কোনো বিকল্প নেই৷ শুধু আর্থিক সাহায্য দিয়ে একটি পরিবারকে চিরদিন সাহায্য করা সম্ভব নয়৷ বরং সেই পরিবারের কোনো সদস্য চাকরি পেলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে৷''