1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বিশ্বের ৪০ শতাংশ বাল্যবিবাহ হয় ভারতে’

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩

সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে বাল্যবিবাহের সংখ্যা ২ কোটি ৩০ লাখের মতো - যা বিশ্বের মোট বাল্যবিবাহের প্রায় ৪০ শতাংশ৷ বাল্যবিবাহের সঙ্গে বিভিন্ন নেতিবাচক দিক সম্পৃক্ত থাকায় ভারতের মত দেশে গুরুতর সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

https://p.dw.com/p/19hY0
ছবি: AP

জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ মনে করে, ভারতে বাল্যবিবাহের প্রবণতা চলতে থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে ১৪ কোটি নাবালিকার বিয়ে হয়ে যাবে, যার মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখের বয়স হবে ১৫ বছরের নীচে৷ উন্নত বিশ্বে একমাত্র স্কটল্যান্ডেই বাল্যবিবাহ বৈধ৷ ভারতে মধ্যযুগ থেকেই এই বাল্যবিবাহ প্রথা চলে আসছে৷ মুসলিম শাসকদের আমলে এবং সামন্ত-প্রধান সমাজে এটা সবথেকে বেশি হতো নানা কারণে৷ মুসলিম শাসনকালে অনেক সময় জোর করে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করা হতো৷ নাবালিকা মেয়েদের কুমারিত্ব বা আব্রু রক্ষায় এবং অপহরণ রোধে ছোট বয়সেই বিয়ে দেয়া হতো৷ হিন্দু সমাজে জাতিভেদ প্রথাও বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সমাজতত্ত্ববিদরা৷ সমজাতের মধ্যে বিয়ে দিতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে মেয়ের মা-বাবা কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন৷ সেটা এখনো বহাল আছে৷

Indien Kinderhochzeit
ভারতে বাল্যবিবাহের সংখ্যা ২ কোটি ৩০ লাখের মতোছবি: AP

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন একটি এনজিও বিহারের হাজারিবাগ, গয়া এবং ঝাড়খন্ডের রাঁচিতে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, ২০ থেকে ২৪ বছরের ৬০ শতাংশ মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরে কম বয়সে৷ কেন ? কারণ মেয়ে সন্তান মানেই গরিব বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে আর্থিক বোঝা৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘাড় থেকে নামানো যায়, ততই মঙ্গল৷ শিক্ষার অভাবই এই ধরনের মানসিকতার জন্ম দেয়৷ বাড়িয়ে দেয়, কন্যাভ্রুণ হত্যার প্রবণতা৷

সম্প্রতি রাঁচিতে বাল্যবিবাহ বিরোধী অভিযান চালিয়ে ৩৫ হাজার মেয়েদেরকে এর কুফল সম্পর্কে সচেতন করা হয়৷ গোটা দেশে এই অভিযান চালিয়ে এক লাখ কিশোরীকে অল্প বয়সে বিয়ের কুফল বোঝাতে সফল হয় ‘‘বেল বাজাও'' নামে অপর একটি সামাজিক সংগঠন৷ বাল্যবিবাহ রোধের পাশাপাশি পারিবারিক হিংসার বিরুদ্ধেও লড়াই চালানো হয় জোরেসোরে৷ এদের লক্ষ্য এমন এক সামাজিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যেখানে মেয়েদের জীবন, অধিকার ও ব্যক্তিসত্তার অবমাননা করা না হয়৷

এনজিও কর্মীরা বিহার ও ঝাড়খন্ডের নাবালিকাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানতে পারে যে, পারিবারিক হিংসা বা নির্যাতনের বিরুদ্ধে এরা প্রতিবাদ করতে ভয় পায়৷ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেনা অপরিণত বুদ্ধি এবং শিক্ষার অভাবে৷ তাই এরা বঞ্চিত থাকে স্বাস্থ্য এবং প্রজনন অধিকার থেকে৷ সন্তান ধারণ এবং স্বামীর যৌনক্ষুধা মেটাবার এক মেশিনমাত্র৷ ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো দাম নেই, অধিকার নেই৷ পরিণামে মা ও শিশুর অকাল মৃত্যু৷

এনজিওগুলির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অবস্থাটা আরো বেশি শোচনীয় পল্লী অঞ্চলে৷ ঝাড়খন্ডের গ্রামাঞ্চলে ৭১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরের আগে৷ শহরে সেটা ৩৩ শতাংশ৷ বিহারে এই সংখ্যাটা যথাক্রমে ৬৫ শতাংশ এবং ৩৭ শতাংশ৷ পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায়, মেয়েদের বিয়ে দেয়া হয় ১৫-১৬ বছরে৷ সহবাস শুরু হয় ১৭ বছর থেকে৷ এ বছরের এপ্রিল থেকে কিছু এনজিও মেয়েদের জন্য ট্রেনিং ক্লাস শুরু করেছে৷ যোগ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক ক্লাসের প্রায় ২০০ কিশোরী৷ ঐ ক্লাসে মেয়েদের মা বাবাও অভিভাবকদেরও যোগ দেবার অনুরোধ জানানো হয়, যাঁরা বাল্যবিবাহের বিরোধী৷ মোবাইল ভ্যান, পথনাটিকা এবং যাত্রাপালার মাধ্যমেও প্রচার চালানো হচ্ছে৷ তবুও প্রক্রিয়ার গতি বেশ মন্থর৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য